Scam

কাপড় সেলাই করে ‘২৮ কোটি’র সম্পত্তি! রত্নার বিপদ বাড়াচ্ছে শোভন-বৈশাখীর দেওয়া নথি

রত্না ইতিমধ্যেই এক বার ইডি-র মুখোমুখি হয়েছেন। শোভন এবং বৈশাখীর সঙ্গে কথা বলার পর রত্নাকে ফের ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায় ও সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:০০
Share:

রত্না চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

বড়সড় বিপদে পড়তে পারেন শোভন-পত্নী রত্না? এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সম্প্রতি শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিপদ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে খবর। কাপড় সেলাই এবং এমব্রয়ডারির কাজ করে যিনি বছরে সাকুল্যে ৪ লক্ষ টাকার সামান্য বেশি উপার্জন করতেন ২০০৪ সাল পর্যন্তও, ২০১৮-র মধ্যে তিনি ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছেন— এমন কিছু নথি ইডি-র কাছে জমা পড়েছে বলে খবর। অভিযোগের সত্যাসত্য ইডি খতিয়ে দেখছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

রত্না অবশ্য দাবি করছেন, তিনি ইডি-কে যাবতীয় হিসেব দিয়েছেন। হিসেবে কোনও গরমিল নেই বলেও তাঁর দাবি।

২০০৩-০৪ সালে রত্না চট্টোপাধ্যায় আয়কর দফতরকে নিজের আয়-ব্যয়ের যে হিসেব দিয়েছিলেন, তাতে কাপড় সেলাই, এমব্রয়ডারি এবং ওই সংক্রান্ত কাজ থেকে বছরে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৯০০ টাকা আয় করার উল্লেখ রয়েছে। সেই নথি রত্না অবশ্য ইডি-কে দেননি। মূলত পৈতৃক ব্যবসা থেকেই তিনি উপার্জন করেন— ইডি-কে রত্না এমনই জানিয়েছেন বলে খবর।

Advertisement

আরও পড়ুন: গহলৌতই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পাইলট​

কিন্তু আয়ের উৎস কাপড়ে জরি বসানোই হোক বা পৈতৃক ব্যবসা— ১০-১২ বছরের মধ্যে ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি, গোটা দুয়েক জিম, একটা অভিজাত রেস্তরাঁ এবং আরও কিছু ব্যবসার মালকিন হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়। রত্না চট্টোপাধ্যায় ওই পরিমাণ সম্পত্তিই বানিয়েছেন বলে ইডি-র কাছে খবর পৌঁছেছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে ইডি-কে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন বলেও তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর।

এই পরিমাণ সম্পত্তি যদি রত্না সত্যিই বানিয়ে থাকেন, তা হলে কি পৈতৃক ব্যবসা থেকে আসা অর্থ কাজে লাগিয়েই সেটা সম্ভব হল? রত্নার পৈতৃক ব্যবসাটা কিসের? কত টাকা পাওয়া যায় তা থেকে?

রত্না চট্টোপাধ্যায়ে পৈতৃক ব্যবসাটা হল গোডাউন ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। ২০০৩-০৪ সালে আয়কর দফতরে জমা দেওয়া হিসেবেই রত্না জানিয়েছিলেন, গোডাউনের ব্যবসা থেকে কত আয় হয়। সেই নথি বলছে এক বছরে ৬৯ হাজার ৩০ টাকা এসেছে রত্নার ওই পৈতৃক ব্যবসা থেকে। অর্থাৎ গত ১০-১২ বছরে যে দ্রুততায় রত্নার সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে, গোডাউনের ব্যবসা থেকে হওয়া উপার্জন দেখিয়েও ঠিক মতো মেলানো যাচ্ছে না সেই হিসেব।

রত্না চট্টোপাধ্যায় কিন্তু যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করছেন। আনন্দবাজারকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি নেই। ইডি-র কাছেও তেমন কোনও তথ্য নেই বলে রত্নার দাবি। তাঁর অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর নামে এ সব কথা রটানো হচ্ছে। শোভন-পত্নীর কথায়, ‘‘যাঁর যা খুশি বলতে পারেন। আমি ইডি-র কাছে সব তথ্য জমা দিয়েছি। কারও কোনও অভিযোগ যদি থাকে, তা হলে তিনি ইডি-র কাছে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ জমা দিন।’’

এই সেই আয়কর নথি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরও পড়ুন: ক্ষমা চান রাহুল, ভোট পিছনে রেখে রাফাল নিয়ে ময়দানে অমিত শাহ​

ইডি সূত্রের খবর, অনেক প্রমাণই ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের হাতে পৌঁছেছে। মহেশতলায় গঙ্গার ধারে অভিজাত আবাসনে ফ্ল্যাট, হরিনাভিতে ১০ কাঠা জমি, বেহালা এলাকায় বেশ কিছু আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ— রত্নার এমন অনেক সম্পত্তির কথাই শোনা যাচ্ছে। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ইডি-র মুখোমুখি হয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তি সংক্রান্ত অনেক নথি ইডি-র হাতে তুলে দিয়েছেন বলে ইডি সূত্রের খবর। কবে কোন শহরে বসে রত্না কোন সম্পত্তি কেনাবেচা করেছেন, সে সব প্রমাণ করতে বেশ কিছু ফোন কলের রেকর্ড এবং এসএমএস শোভন দিয়েছেন ইডি-কে। এমনও জানা যাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে।

রত্না ইতিমধ্যেই এক বার ইডি-র মুখোমুখি হয়েছেন। শোভন এবং বৈশাখীর সঙ্গে কথা বলার পর রত্নাকে ফের ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। ডেকে পাঠানো হয়েছে রত্নার ‘পরিচিত’ যুবক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (চিকু)-কেও। কারণ তদন্তকারীরা জেনেছেন যে, রত্না চট্টোপাধ্যায় যেখানে যেখানে সম্পত্তি কিনেছেন, কয়েকটি জায়গায় ঠিক তার পাশেই সম্পত্তি কিনেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও। ইডি-র ডাকে সাড়া দেওয়ার ইচ্ছা আপাতত শোভন-পত্নীর নেই। কিছু ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি ইডি-র কাছে সময় চেয়েছেন। অভিজিৎ অবশ্য সময় চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন