কাল ঠিক হত, কে হবেন অরবিন্দের সম্পত্তির ট্রাস্টি

কাকে তাঁর সম্পত্তির ট্রাস্টি করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে কাল, সোমবার সলিসিটর ফার্মে যাওয়ার কথা ছিল অরবিন্দ দে-র। মৃত্যুর দু’দিন আগেও হাইকোর্ট পাড়ায় ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটে ওই ফার্মের অন্যতম কর্ণধার তথা আইনজীবী সুবীর মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রবিনসন স্ট্রিটের অরবিন্দবাবু।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০১:১৫
Share:

সেই বাড়ি।— নিজস্ব চিত্র

কাকে তাঁর সম্পত্তির ট্রাস্টি করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে কাল, সোমবার সলিসিটর ফার্মে যাওয়ার কথা ছিল অরবিন্দ দে-র। মৃত্যুর দু’দিন আগেও হাইকোর্ট পাড়ায় ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিটে ওই ফার্মের অন্যতম কর্ণধার তথা আইনজীবী সুবীর মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রবিনসন স্ট্রিটের অরবিন্দবাবু। বলেছিলেন, ছেলে পার্থ বা মেয়ে দেবযানী কেউই তাঁর সম্পত্তি দেখভালের উপযুক্ত নন। তখনই সুবীরবাবু তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সে ক্ষেত্রে অন্য কাউকে তিনি নিজের ভাগের সম্পত্তির ট্রাস্টি করে দিতে পারেন। যার সুবিধাভোগী হবেন অরবিন্দবাবুর মেয়ে ও ছেলে। রাজিও হয়েছিলেন অরবিন্দবাবু। শনিবার এমনই দাবি করেন সুবীরবাবু।
ওই আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘‘অরবিন্দবাবুর আচরণে আমি সে দিন ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি, আত্মহত্যা করতে চলেছেন তিনি। এমনকী, তাঁর মেয়ের মৃত্যুর পরে কঙ্কাল যে বাড়িতেই রাখা আছে, কথাবার্তায় তার আঁচও দেননি ওই বৃদ্ধ।’’ বস্তুত অরবিন্দবাবুর কথার মধ্যে ইঙ্গিত ছিল যে, দেবযানী এখনও জীবিত।
৮ জুন সুবীরবাবুকে কী বলেছিলেন অরবিন্দবাবু? আইনজীবীর দাবি, বৃদ্ধ তাঁকে অনুরোধ করেন, তাঁর ভাগের সম্পত্তি বিক্রি বা দেখাশোনার ব্যাপারে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ তিনি সুবীরবাবুকে দিতে চান। কারণ, দেবযানী বা পার্থ ওই সম্পত্তি দেখাশোনা করতে পারবেন না বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু তাঁর নিজেরও বয়স হয়েছে বলে এই প্রস্তাবে রাজি হননি বলে দাবি সুবীরবাবুর। বলেছিলেন, তিনি মারা গেলে ওই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূল্যহীন হয়ে পড়বে। অরবিন্দবাবু যেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত কাউকে ট্রাস্টি করে দেন। সেই ট্রাস্টির সুবিধাভোগী হবেন তাঁর ছেলে ও মেয়ে।

Advertisement

সুবীরবাবু জানান, অরবিন্দবাবুরা দুই ভাই। তাঁদের বাবা গদাধর দে ১৯৫৯ সালে তাঁর ২৩ কাঠার সম্পত্তির ট্রাস্টি করে দেন স্ত্রী অর্থাৎ, অরবিন্দ-অরুণের মা শান্তিদেবীকে। তার আগে রবিনসন স্ট্রিটের মূল বাড়ির দু’পাশে নতুন দু’টি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন গদাধরবাবু। একটি বাড়ি মূল বাড়ির সঙ্গে যুক্ত। অন্যটি মূল বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন। মূলত ভাড়াটে বসিয়ে রোজগারের জন্যই ওই দু’টি বাড়ি তৈরি করেন গদাধরবাবু। অরবিন্দবাবু থাকতেন মূল বাড়ির সঙ্গে যুক্ত অংশটিতে। তবে সেখানে যাতায়াতের দরজা আলাদা। ওই অংশে এবং বাড়ির থেকে আলাদা অংশটিতে এখনও চার জন ভাড়াটে থাকেন। মূল বাড়িতে থাকেন অরুণবাবু। সুবীরবাবুর দাবি, অরবিন্দবাবু তাঁকে জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরে সম্পত্তির ট্রাস্টি শান্তিদেবী ছোট ছেলে অরুণের সঙ্গে থাকতেন। সুবীরবাবু আরও জানান, দে পরিবারের ২৩ কাঠার ওই সম্পত্তির এখনও মিউটেশন হয়নি।

সুবীরবাবু জানান, ২০০৮ সালে অরবিন্দবাবু তাঁদের ফার্মে গিয়ে একটি মামলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কম ভাড়ায় যাতে ওই বাড়িতে কোনও ভাড়াটে আর না বসানো যায়, তার জন্যই করতে চেয়েছিলেন মামলা। ওই সম্পত্তি ব্যাঙ্ক বা অন্য কোথাও গচ্ছিত রেখে যাতে ঋণ না নিতে পারেন কেউ, তা-ও নিশ্চিত করতে চাইছিলেন অরবিন্দবাবু।

Advertisement

ওই বছরেই হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে ওই দু’টি বিষয়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারির আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করেন অরবিন্দবাবু। সে বছর স্থগিতাদেশের রায়ও পান হাইকোর্ট থেকে। সুবীরবাবু জানান, মামলা চলাকালীন দেবযানী এবং পার্থ নিয়মিত তাঁদের সংস্থার কার্যালয়ে আসতেন। মামলার শুনানির সময়েও আদালতে থাকতেন। তবে ২০০৮ সালের পরে তিনি আর সুবীরবাবুদের কার্যালয়ে যেতেন না।

আইনজীবী সুবীর মজুমদার।

ফের যান ২০১৪ সালে। সুবীরবাবু জানান, সেই সময়ে অরবিন্দবাবু তাঁকে জানান, তাঁর মা মারা গিয়েছেন। তিনি ও তাঁর ছোট ভাই রবিনসন স্ট্রিটের গোটা সম্পত্তি বিক্রি করতে চান। সুবীরবাবু জানান, ভাইকে নিয়ে তাঁদের কার্যালয়ে তিন-চার দিন গিয়েছিলেন অরবিন্দবাবু। তাঁরা সুবীরবাবুকে বলেছিলেন, সম্পত্তি কিনে নিতে। সুবীরবাবুর দাবি, তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি অরবিন্দবাবুদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, বড় কোনও প্রোমোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আইনজীবী অরবিন্দবাবুদের এও বলেছিলেন, কাঠা প্রতি দু’কোটি টাকা পেলে তাঁরা যেন সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। তার বেশি দাম তাঁরা পাবেন না। তবে কী কারণে নিজের ভাগের সম্পত্তি বিক্রি থেকে অরবিন্দবাবু পিছিয়ে এলেন, তা জানাতে পারেননি ওই আইনজীবী।

এ দিনই পুলিশ জানায়, অরবিন্দবাবু যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ির এক ও তিনতলার ভাড়াটেরা টাকা দেন তাঁর ছোট ভাই অরুণবাবুকে। পুলিশের দাবি, অরুণবাবু জানিয়েছেন, ১৯৮৮ সালের আগে ওই দুই ভাড়াটেকে অরুণবাবু বাড়ি ভাড়া দেন। সেই সময়ে অরবিন্দবাবু বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। তখন থেকেই এই ব্যবস্থা। অরবিন্দবাবু কলকাতায় ফেরার পরেও কেন অরুণবাবু ভাড়ার টাকা নিতেন, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

অরুণবাবুর বক্তব্য জানতে এ দিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দু’বার বেল বাজানো হয়। কিন্তু কেউ দরজা খোলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন