বেপরোয়া বাইক হিঁচড়ে নিয়ে গেল পুলিশকেই

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাইকচালকের খোঁজ চলছে। সোমবার রাতে কড়েয়া থানা এলাকার সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে একটি শপিং মলের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। জখম পুলিশ কনস্টেবলের নাম তপন ওরাঁও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

হাসপাতালে আহত পুলিশকর্মী তপন ওরাঁও।

এ বার বাইকচালকের বেপরোয়া মনোভাবের ‘শিকার’হল পুলিশই।

Advertisement

হেলমেট ছাড়াই রাতের শহরে ছুটছিলেন এক বাইকচালক। অভিযোগ, আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি ধাক্কা মারেন এক বৃদ্ধ পথচারীকে। দুর্ঘটনার পরে অনুশোচনা তো দূর, উল্টে পুলিশকে আসতে দেখে আরও যেন বেপরোয়া হয়ে উঠলেন সেই চালক। পালানোর মুহূর্তে এক
পুলিশকর্মী তাঁকে ধরে ফেললেন ঠিকই। কিন্তু ঠেকাতে পারলেন না। অভিযোগ, দ্রুত বাইক চালিয়ে পালাতে গিয়ে পুলিশকর্মীটিকে বেশ খানিকটা রাস্তা হিঁচড়ে নিয়ে যান ওই বাইকচালক। যার জেরে জখম হন ওই পুলিশকর্মী। যদিও সেই বাইকচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাইকচালকের খোঁজ চলছে। সোমবার রাতে কড়েয়া থানা এলাকার সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ে একটি শপিং মলের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। জখম পুলিশ কনস্টেবলের নাম তপন ওরাঁও। তিনি ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডে কর্মরত। রাতেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে জখম ওই পুলিশকর্মীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও মঙ্গলবার সকালে তাঁকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই পুলিশ কনস্টেবলের দুই হাতে এবং পায়ে একাধিক আঘাত লেগেছে। এ দিন বিকেলে তাঁকে দেখতে যান পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তিনি কনস্টেবলের ভূমিকার প্রশংসা করে তাঁকে সম্মানিত করেন।

Advertisement

সপ্তাহ দু’য়েক আগে গভীর রাতে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া-ইউনিভার্স ঊষসী সেনগুপ্ত এবং তাঁর সঙ্গীকে হেনস্থার শিকার হতে হয় বেপরোয়া মোটরবাইক আরোহীদের হাতে। সেই বাইকবাহিনীর আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। বচসা চলার সময়ে হেলমেট কেন নেই তা বাইক-আরোহীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া। তার পরে টানা প্রায় ১০ দিন ধরে রাতের শহরে হেলমেটহীন বেপরোয়া বাইকচালকদের উপরে লাগাম টানতে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ। ব্যাপক হারে ধরপাকড়, জরিমানা চলছে। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির বাইকচালক এখনও যে লাগামছাড়া, সোমবারের ঘটনা তার প্রমাণ।

তদন্তকারীরা জানান, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের ওই শপিং মলের কাছে তখন কর্তব্যরত ছিলেন কড়েয়া থানা এবং ইস্ট ট্র্যাফিক গার্ডের অফিসারেরা। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ সেখানে রাস্তা পার হচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। আচমকাই তাঁকে ধাক্কা মারে একটি বেপরোয়া মোটরবাইক। তার পরেই বাইকটি বৃদ্ধকে পাশ কাটিয়ে পালাতে যায়। তখনই তপনবাবু দৌড়ে গিয়ে পিছন থেকে বাইকটি আটকানোর চেষ্টা করেন।

অভিযোগ, ওই অবস্থাতেই চালক বাইকের গতি বাড়িয়ে দেন। কনস্টেবল তপনবাবুর হাত তখন ওই মোটরবাইকের পিছনে আটকে যায়। ওই অবস্থায় মোটরবাইকটি প্রায় পঞ্চাশ মিটার রাস্তা হিঁচড়ে নিয়ে যায় তপনবাবুকে। পরে গুরুসদয় দত্ত রোডের দিকে পালিয়ে যায় মোটরবাইকটি। পুলিশের অনুমান, মোটরবাইক চালক স্থানীয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁর খোঁজ শুরু হয়েছে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ জুড়েই বেপরোয়া বাইকচালকদের দাপট দেখা যায়। এমনকি পার্ক সার্কাস, মল্লিকবাজার এলাকাতেও হেলমেটহীন মোটরবাইকের দাপট দিনেও অব্যাহত থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

লালবাজার অবশ্য জানিয়েছে, সোমবার রাতে ওই ঘটনা ছাড়া শহরে বাকি জায়গায় তল্লাশি হয়েছে শান্তিতে। ট্র্যাফিক আইন অমান্য করার জন্য ৬৭৭ জন মোটরবাইক চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৩৭ জনকে হেলমেট ছাড়া অবস্থায় মোটরবাইক চালানোর জন্য জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই রাতেই বৈধ নথি না থাকায় ১১টি মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। লালবাজারের দাবি, ওই বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পরে প্রায় ১২ হাজার মোটরবাইক চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন