দিনেও বাইক-দৌরাত্ম্য, দুর্ঘটনা

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে রাতের শহরে বেপরোয়া মোটরবাইক ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে পুলিশ। পরমা-সহ তিনটি উড়ালপুলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরবাইকও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বেপরোয়া মোটরবাইক যে দিনেদুপুরেও শহরে দাপিয়ে বেড়ায়, তার প্রমাণ মিলল শনিবার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলে মোটরবাইক আটকাচ্ছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে। — নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে রাতের শহরে বেপরোয়া মোটরবাইক ঠেকাতে কোমর বেঁধে নেমেছে পুলিশ। পরমা-সহ তিনটি উড়ালপুলে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরবাইকও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বেপরোয়া মোটরবাইক যে দিনেদুপুরেও শহরে দাপিয়ে বেড়ায়, তার প্রমাণ মিলল শনিবার।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, পরমা উড়ালপুলে বেলা ১২টা নাগাদ বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন এক মোটরবাইক চালক। পিছনের আসনে বসা আরোহী উড়ালপুল থেকে ছিটকে প্রায় ৩০ ফুট নীচে রাস্তায় এসে পড়েন। গুরুতর জখম অবস্থায় ওসমান খান ওরফে সানি নামে বছর আঠেরোর ওই তরুণকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য শেখ আজহারউদ্দিন নামে ওই চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই দু’জনই বন্দর এলাকার নাদিয়ালের সাতঘরার বাসিন্দা।

প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী তো শুধু রাতে মোটরবাইক বন্ধ করার কথা বলেলনি, সামগ্রিক ভাবে বেপরোয়া যান চলাচল রুখতেও বলেছিলেন। রাতের শহরে পুলিশ উদ্যোগী হলেও দিনেদুপুরে দুর্ঘটনা ঘটছে কেন? তা হলে কি দিনে পুলিশের নজরদারিতে খামতি রয়েছে?

Advertisement

কলকাতা পুলিশের কর্তারা অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, দিনের বেলা সব সময়েই নজরদারি থাকে। এ দিনও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ৬৮টি মোটরবাইককে ধরা হয়েছে বলে লালবাজারের দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইকে চাপলেই শহরের যুবকদের একাংশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সন্ধ্যার পর থেকে তার দাপট বাড়লেও রাস্তা একটু ফাঁকা পেলে দিনেদুপুরেও পুলিশকে রেয়াত করেন না ওঁরা। এই আজহারউদ্দিন তেমনই এক যুবক বলে পুলিশের দাবি।

ট্রাফিক পুলিশের খবর, এ দিন দুর্ঘটনায় পড়া মোটরবাইকটি মাস ছয়েক হল কিনেছেন তিনি। এর মধ্যেই বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য দু’বার জরিমানা হয়েছিল তাঁর। পরমা-সহ শহরের একটু বড় মাপের উড়ালপুলগুলিই এই সব মোটরবাইক চালকের কেরামতি দেখানোর আখড়া। বছর কয়েক আগে সকালে এমনই এক দুর্ঘটনা দেখেছিল এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল। বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিল দুই স্কুলছাত্র। ডিভাইডারে ধাক্কা খাওয়ার পরে এক আরোহীর কোমর পিছন দিকে ঘুরে গিয়েছিল। পরমা উড়ালপুলও ইদানীং দুর্ঘটনার কেন্দ্র হয়ে উঠছে। পুলিশের হিসেব বলছে, গত ন’মাসে পরমা উড়ালপুলে এমন ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মারা গিয়েছেন ছ’জন।

ট্রাফিক পুলিশ অফিসারদের অনেকেই বলছেন, এই সব বেপরোয়া যুবকদের কোনও ভাবেই নিয়মকানুন শেখানো যায় না। কখনও কখনও বিশেষ কারণে ধরপাকড় করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এঁরা রাস্তায় এ ভাবে দাপিয়ে বেড়ায়। ‘‘এরা যে ভাবে মোটরবাইক ছোটায় তাতে নিজেরা তো বিপদে পড়বেই, রাস্তায় সাবধানে চলা অন্য গাড়ি বা পথচারীকেও দুর্ঘটনায় ফেলতে পারে,’’ বলছেন ট্রাফিক পুলিশের এক পদস্থ কর্তা।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন আজহার ও ওসমান, দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিল। পার্ক সার্কাসের দিক থেকে উড়ালপুলে উঠে নিকো পার্কে যাচ্ছিলেন তাঁরা। মিলনমেলার কাছে যেখানে বাইপাসে নামার দু’টি র‌্যাম্প আলাদা হচ্ছে, সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন আজহার। প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘মিলনমেলার কাছে ডিউটি করছিলাম। আচমকাই উপর থেকে ধুপ করে ছেলেটি পড়ে!’’ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ধাক্কা মারার আগে ডিস্ক ব্রেক মেরে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আজহার। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের একাংশের মতে, পরমা উড়ালপুলে র‌্যাম্প দু’টি বিপজ্জনক বাঁক নিয়েছে। তার উপরে একমুখী যান চলাচল থাকায় গতি বাড়িয়ে দিচ্ছেন চালকেরা। তাই নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলেই দুর্ঘটনা ঘটছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন