রেকর্ড গড়েছে ভিড়, উল্লাস আলিপুরে

থমথমে মুখে বসে আছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক। উল্টো দিকের চেয়ারে বসা এক কর্মীকে বারবার জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘কী মনে হয়? আজ হবে?’’ একই রকম উদ্বিগ্ন ওই কর্মীও।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

জনস্রোত। রবিবার, চিড়িয়াখানায়।

থমথমে মুখে বসে আছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক। উল্টো দিকের চেয়ারে বসা এক কর্মীকে বারবার জিজ্ঞেস করছেন, ‘‘কী মনে হয়? আজ হবে?’’ একই রকম উদ্বিগ্ন ওই কর্মীও। তিনি বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে স্যার। কিন্তু কাউন্টিং শেষ হোক আগে।’’ হঠাৎই ফোন বেজে উঠল আধিকারিকের। ফোন কানে চেপেই চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি, ‘‘হয়েছে। হয়েছে। রেকর্ড।’’ মুহূর্তে পাল্টে গেল ঘরের ছবিটা।

Advertisement

শীতের শুরু থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। রোজই বিকেলে গুণতির শেষে আক্ষেপ করতেন, ‘‘না আজও হল না।’’ অনেক প্রত্যাশা ছিল ২৫ আর ৩১ ডিসেম্বরের উপরে। বছরের শেষ দু’টো দিনে বেশ ভিড় হলেও তা খুশি করতে পারেনি আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্তাদের। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম রবিবারের ভিড় সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেল।

চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, রবিবার সকালের দিকে ভিড় ছিল না। একটু বেলা বাড়তেই ছবিটা পাল্টাতে থাকল। জনস্রোত সামলাতে নামল পুলিশ। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানালেন, এত দিন পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি ভিড়ের রেকর্ড ছিল ৯১ হাজার। কিন্তু রবিবার এসেছিলেন প্রায় ৯৩ হাজার মানুষ।

Advertisement

আশিসবাবু জানাচ্ছেন, এ বছর শীতের শুরু থেকেই ভিড় হচ্ছিল চিড়িয়াখানায়। মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ হাজারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল সংখ্যাটা। বড়দিনের ছুটিতে তা এক লাফে ছুঁয়ে ফেলে ৮০ হাজার। আশিসবাবু বলেন, ‘‘তখনই মনে হয়েছিল, এ বার হলেও হতে পারে। আজ ফুরফুরে লাগছে।’’

কিন্তু যাদের দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন এত মানুষ, কেমন কেটেছে তাদের সারা দিনটা?

এ দিন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিম্পাঞ্জি, বাঘ, জিরাফ, জেব্রা, মার্মোসেট বাঁদর, কুমির এবং
পাখির খাঁচাগুলি।

একদল যুবক বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে সারাক্ষণ ‘হালুম হালুম’ করেছেন, কেউ প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন বাঘকে ছোলা খাওয়ানোর। জিরাফ ও জেব্রার খাঁচায় নির্বিচারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে বিস্কুট, কমলালেবু বা কমলালেবুর খোসা। ময়ূরের পেখম দেখতে খাঁচার জাল ধরে অক্লান্ত ঝাঁকুনি দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে কুমিরের পরিখাটির অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। প্লাস্টিকের কাপ, খবরের কাগজ, কমলালেবুর খোসায় কুমিরদেরই পা ফেলবার জায়গা ছিল না। কেউ কেউ আবার কুমিরের গায়ে জল ঢেলে কিংবা ঢিল ছুঁড়ে বুঝতে চেয়েছেন সেটি জীবিত না মৃত! কেউ বাধা দিলে অত্যুৎসাহীরা তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছেন।

চিড়িয়াখানার এক কর্মী জানাচ্ছেন, এই ধরনের ঘটনা আটকাতে বাড়ানো হয়েছে রক্ষী। বসানো হয়েছে প্রচুর সিসিটিভি। এ দিন দেড়শো রক্ষী ছাড়াও আলিপুর এবং ওয়াটগঞ্জ থানা থেকে প্রচুর সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন হয়েছিল। তাতেও লাভ হয়নি। রক্ষীদের চোখ এড়িয়েই মানুষ নির্বিচারে বিরক্ত করেছে প্রাণীদের। ওই কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘কত পাহারা দেবেন? মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হন, কোনও ভাবেই এই অসভ্যতা আটকানো যাবে না। আর রোজ রোজ এ রকম চললে অসুস্থ হয়ে পড়বে জন্তুরা।’’ তিনি আরও জানালেন, মানুষের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে তিনটি শিশু শিম্পাঞ্জি এবং জলদাপ্রসাদ নামে শিশু গন্ডারটিকে সামনে না আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

রেকর্ড ছুঁলেও এ দিন ভিড় সামলাতে বেশ হয়রান হয়েছেন রক্ষীরা। ভিড়ের চাপে বেশ কয়েকটি ছোট বাচ্চা হারিয়ে যায়। তবে শুধু পুলিশ বা রক্ষীরাই নয়, অত্যুৎসাহীদের কাণ্ডকারখানায় অতিষ্ঠ হয়েছেন অনেক দর্শনার্থীও। ভিড় ঠেলে বাইরে বেরিয়ে ছোট্ট রোহন বায়না ধরেছিল, সে আবার চিড়িয়াখানায় ঢুকতে চায়। মা মঞ্জুশ্রীদেবী
ছেলেকে বললেন, ‘‘বাইরেটাই তো আসল চিড়িয়াখানা। আর ভিতরে যেতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন