Calcutta News

এসএসকেএমে ভর্তি হতে গিয়ে ২ লাখ খোয়ালেন রিজেন্ট পার্কের বৃদ্ধ দম্পতি

বিশ্বরূপ ঘোষ নামে সন্তোষপুর এলাকার এক ব্যক্তি সবিতা দেবীকে বলেন যে তিনি রঞ্জনবাবুকে এসএসকেএমে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার বিনিময়ে এক মাসে তিন দফায় প্রায় দু’লাখ টাকা নেন ওই দম্পতির কাছ থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৪৩
Share:

রিজেন্ট পার্কের দম্পতির আস্থা অর্জন করতে একাধিক সচিবের জাল চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।

এসএসকেএম-এ ভর্তি হতে গিয়ে প্রায় দু’লাখ টাকা খোয়ালেন দক্ষিণ কলকাতার এক বৃদ্ধ দম্পতি। এক ব্যক্তি ওই দম্পতির আস্থা অর্জন করতে হাসপাতালের ডিরেক্টর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক সচিবের জাল চিঠিও ওই দম্পতিকে দিয়েছে বলে অভিযোগ। সেই সমস্ত জাল নথি দেখে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের সন্দেহ এর পিছনে রয়েছে বড়সড় কোনও প্রতারণা চক্র। অভিযোগ, প্রতারক দক্ষিণ কলকাতার এক বিজেপি নেতা।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট এস্টেটের বাসিন্দা ৭০ বছরের রঞ্জন বসু। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের ভিজিল্যান্স বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ওই আধিকারিক ভাঙা পা নিয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী। তাঁর স্ত্রী সবিতা বসু বলেন,‘‘প্রায় আড়াই মাস আগে তাঁর স্বামীর হৃদযন্ত্রের সমস্যা ধরা পড়ে। তাঁদের সে ভাবে লোকবল না থাকায় তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে যান তদ্বির করতে যাতে সরকারি হাসপাতালে ভিড় এড়িয়ে ভর্তি হওয়া যায়।”

মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে পাওয়া সুপারিশের চিঠি নিয়ে তাঁরা যান নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। সবিতা দেবী বলেন, ‘‘ওখানে চিকিৎসক পেসমেকার বসানোর কথা বলেন। আর সেই চিকিৎসার জন্য এসএসকেএমে সবচেয়ে ভালো বন্দোবস্ত। তাই আমরা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘হামাগুড়ি দিয়ে আলো নিয়ে ঢুকতে হবে’

এর মধ্যেই বিশ্বরূপ ঘোষ নামে সন্তোষপুর এলাকার এক ব্যক্তি সবিতা দেবীকে বলেন যে তিনি রঞ্জনবাবুকে এসএসকেএমে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার বিনিময়ে এক মাসে তিন দফায় প্রায় দু’লাখ টাকা নেন ওই দম্পতির কাছ থেকে। সবিতা দেবী বলেন, ‘‘আমাকে বলা হয় যে পেসমেকার কেনার জন্য টাকা দরকার। তা ছাড়া বাকি টাকা ভর্তি হওয়ার পর আবার সরকার আমার অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেবে।’’ সেই ভরসাতে টাকা দেওয়ার পর বিশ্বরূপ কখনও ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ(আইপিজিএমইআর)-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে এসএসকেএমের একাধিক প্রথম সারির চিকিৎসকের লেটারহেডে সুপারিশের চিঠি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তার চিঠি দেয় ওই দম্পতিকে। কিন্তু সব কিছুর পরও ভর্তির কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না দেখে সন্দেহ হয় ওই দম্পতির।

সবিতা দেবী বলেন, ‘‘আমি শনিবার স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে সোজা এসএসকেএমে চলে যাই। সঙ্গে ছিল ওই সমস্ত কাগজ পত্র। আমাকে বলা হয়েছিল উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে সব কাগজ পত্র দেখাই।’’

আরও পড়ুন: সাততলার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু মহিলার

ওই সম্স্ত কাগজ দেখে তাজ্জব বনে যান হাসপাতালের কর্মীরা। তাঁরা সবিতা দেবীকে নিয়ে যান এসএসকেএমের মেডিক্যাল সুপার রঘুনাথ মিশ্রের কাছে। তিনি সব শুনে বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন ওই দম্পতি। তিনি প্রথমেই রঞ্জনবাবুকে কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। তার পরই খবর দেওয়া হয় ভবানীপুর থানার পুলিশকে। মেডিক্যাল সুপার ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। শনিবারই এফআইআর নথিভুক্ত করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে অভিযুক্ত বিশ্বরূপ সন্তোষপুর এলাকার পরিচিত বিজেপি নেতা। পুরসভা নির্বাচনের সময়ে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে ওই ব্যক্তি প্রতারিত দম্পতির দূর সম্পর্কের আত্মীয়। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তবে তদন্তকারীদের ধারণা বিশ্বরূপের পিছনে বড়সড় চক্র রয়েছে। না হলে এত জাল নথিপত্র তৈরি করা সম্ভব হত না। তবে বিজেপির দক্ষিণ কলকাতার এক নেতা বলেন, বিশ্বরূপ ঘোষ নামে তাঁদের সংগঠনের কোনও পদাধিকারী নেই। কোনও সমর্থক থাকতে পারেন। ওই ব্যক্তি যদি প্রতারণা করে থাকেন তবে আইন আইনের পথেই চলবে।

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করাবাংলা খবরপড়তে চোখ রাখুন আমাদেরকলকাতাবিভাগে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement