Dr. Subrata Goswami

ব্যথা চিকিৎসার পুরোধার স্মৃতিচারণে আবেগতাড়িত প্রিয়জনেরা

২০২০-র শেষের দিকে ধরা পড়েছিল, দেশে ব্যথার চিকিৎসার অন্যতম পুরোধা সুব্রত নিজে মোটর নিউরন ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত। জীবনটা হুইলচেয়ারে বন্দি হলেও মানুষের জন্য ভাবনা থামাননি তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:৩৮
Share:

চিকিৎসক সুব্রত গোস্বামীর স্মরণসভায় গান গাইছেন শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিউ টাউনের রবীন্দ্র তীর্থের ভরা প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় ফুটে উঠল তাঁর হাসিমুখের ছবি। আবহে তখন বাজছে বিভিন্ন সময়ে পরিচিত মহলে গাওয়া তাঁর গান। এর কিছু পরেই স্পটলাইটের নীচে দাঁড়িয়ে সঞ্চালিকা গীতাঞ্জলি থেকে তুলে ধরলেন রবিঠাকুরের কবিতা ‘মরণ যে দিন দিনের শেষে আসবে তোমার দুয়ারে...’। যেখানে কবি বলেছেন, মরণ, অর্থাৎ মৃত্যুকে তিনি কখনওই শূন্য হাতে বিদায় দেবেন না।

Advertisement

পেন ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুব্রত গোস্বামীও যেন ঠিক সেই পথেই চলেছেন। শনিবার তাঁর স্মরণসভায় সে কথাই উঠে এল পরিজন, বন্ধুবান্ধব ও সতীর্থদের কথায়-গল্পে-স্মৃতিচারণে। হুগলির গুপ্তিপাড়ায় হ্যারিকেনের আলোয় আনন্দমেলা, শুকতারা, ইন্দ্রজাল বই পড়ে দুই ভাইকে শোনাতেন সকলের প্রিয় ‘টাকোদা’। বইয়ের দিকে না চেয়ে সে সময়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাদার মুখের দিকে তাকিয়েই উজ্জ্বল হয়ে উঠত ভাইদের চোখমুখ। ঠিক যেমন ভাবে ব্যথায় কাবু রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতেও নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ইএসআই হাসপাতালের ওই চিকিৎসক।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে সন্ধ্যা নামলেই ঘর অন্ধকার করে দুই ভাইকে দু’পাশে নিয়ে শুয়ে থাকা দাদার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে এ দিন দৃশ্যতই বার বার আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন দেবব্রত গোস্বামী।

Advertisement

অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক সুব্রত নিজের তাগিদে জ্ঞান অর্জন ও হাত পাকিয়েছিলেন পেন ম্যানেজমেন্টে। খেটে খাওয়া মানুষকে বিভিন্ন ব্যথা থেকে সহজে উপশম দিতে আরও বিশেষজ্ঞ তৈরির লক্ষ্যে শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে গড়ে তোলেন ‘ইনস্টিটিউট অব পেন ম্যানেজমেন্ট’। এ দিন সুব্রতের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী, আর এক চিকিৎসক সুব্রত রায় বলেন, ‘‘প্রথাগত শিক্ষার শংসাপত্র পেতে উনি ২০১০ সালে বুদাপেস্টে গিয়ে পেন ম্যানেজমেন্ট ফেলোশিপের পরীক্ষায় বসেন। সুব্রত নিজের কাজের মধ্যে দিয়েই সকলের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।’’

যে কোনও বিষয়েই সুব্রতের আগ্রহ ছিল গভীর। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সংগঠক। আবার ছাত্র রাজনীতির ফাঁকেই অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে রীতিমতো টক্কর দিয়ে কলেজের গাছে চড়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম হতেন। এ দিনের স্মৃতিচারণায় সেই কথাই শোনা গেল রাজ্যের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুহৃতা পালের কথায়। সিনিয়র দাদার স্মৃতিতে সুহৃতা গাইলেন, ‘তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু...’।

২০২০-র শেষের দিকে ধরা পড়েছিল, দেশে ব্যথার চিকিৎসার অন্যতম পুরোধা সুব্রত নিজে মোটর নিউরন ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত। জীবনটা হুইলচেয়ারে বন্দি হলেও মানুষের জন্য ভাবনা থামাননি তিনি। চিকিৎসক অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রামধনু রঙা মানুষ ছিলেন সুব্রত।’’

ডাক্তারি করতে শহরে চলে এলেও গুপ্তিপাড়াকে কখনও তিনি ভোলেননি বলেই জানালেন তাঁর স্কুলের বন্ধু নারায়ণ বিশ্বাস। তাই সুব্রতকেও মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে মোটর নিউরন ডিজ়িজ়ের উপরে গবেষণা শুরুর কথা বললেন চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। ভাইয়ের মতো স্নেহ করা সুব্রতের স্মৃতিতে সঙ্গীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধরলেন ‘তবু মনে রেখো...’— প্রেক্ষাগৃহে বসা অধিকাংশের চোখের কোণই তখন ভিজেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন