ঘোড়ার গাড়ি চড়ে পুরনো কলকাতার স্মৃতি রোমন্থন

শীতের রোদ গায়ে মেখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়াগুলো। অপেক্ষা শুধু সওয়ারির। তাঁরা উঠলেই টগবগিয়ে চলা শুরু হবে ওদের। পাশে দাঁড়িয়ে চালক নাসিক, আকবর, মকবুলেরা। খদ্দেরের আশায়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৮
Share:

ছুটেছে: ময়দান এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি চড়ে ভ্রমণ। নিজস্ব চিত্র

শীতের রোদ গায়ে মেখে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়াগুলো। অপেক্ষা শুধু সওয়ারির। তাঁরা উঠলেই টগবগিয়ে চলা শুরু হবে ওদের। পাশে দাঁড়িয়ে চালক নাসিক, আকবর, মকবুলেরা। খদ্দেরের আশায়।

Advertisement

চিরচেনা এই ছবিটা কলকাতা ময়দানের। নাসিকেরা জানালেন, শীতের দুপুরে অনেকেই রোদ পোহাতে ময়দানে আসেন। কেউ ঘুরতে আসেন ভিক্টোরিয়া, কেউ বা

বিড়লা তারামণ্ডল। অনেকে পার্ক স্ট্রিট ধরে হাঁটতে হাঁটতেও পৌঁছে যান ময়দানে। আর পায়ে হেঁটে ঘোরার ফাঁকে কিছু ক্ষণের জন্য তাঁরা উঠে পড়েন ঘোড়ার গাড়িতে। মিনিট পনেরোর ভ্রমণ সেরে আবার ময়দানে ফিরে আসা।

Advertisement

খদ্দেরের জন্য নাসিক-আকবরদের অপেক্ষা সারা বছরের। তবে তাঁদের কথায়, অন্য সময়ে তো তেমন উপার্জন হয় না। সারা দিনে খুব বেশি হলে দু’টি ট্রিপ। কিন্তু শীতের শহরে সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় গড়ে চার থেকে পাঁচে। এক চালক ভোম্বল মণ্ডল বললেন, ‘‘সারা বছর এই সময়টার জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি।’’

পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য যেমন সেজে উঠেছে ঘোড়াগুলো, তেমনই চালকেরা নানা নকশায় সাজিয়েছেন তাঁদের গাড়ি। কোনওটির নকশা গুজরাতের এক্কা গাড়ির আদলে, কোনওটি আবার সেজেছে দিল্লির এক্কা গাড়ির আদলে।

মকবুল-আকবররা জানালেন, বর্ষার চার মাস এক রকম বন্ধই থাকে এই ভ্রমণ। কিন্তু দুর্গাপুজোর পর থেকেই সাজ সাজ রব। গাড়ি ঝাড়পোঁছ শুরু হয়ে যায় জোরকদমে। এক বার চক্কর কাটতে ভাড়া লাগে ৫০০-৬০০ টাকা। ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে রেস কোর্স, সাউথ গেট, রেড রোড, ফোর্ট উইলিয়াম ঘুরে ফের ভিক্টোরিয়ার সামনে ফিরে আসা।

কথা বলতে বলতে সকলেই ফিরে যাচ্ছিলেন এক দশক আগের স্মৃতিতে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়ি চড়ার জন্য রীতিমতো লাইন পড়ে যেত। ভোম্বল জানান, গত বছরের শীতে ভালই উপার্জন হয়েছিল তাঁদের। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো শহরে বহু ঘোরার জায়গা। তাই সে ভাবে আয় হয় না। মালিককে ট্রিপের পয়সা দিয়ে আমরা শুধু কমিশনটা পাই। বেশি ট্রিপ মানে বেশি কমিশন। ওটুকুই যা লাভ।’’

তবে নতুন নতুন পার্ক আর বেড়ানোর জায়গা হলেও ঘোড়ার গাড়ি চড়ার যে আনন্দ, তা কোনও দিন ফিকে হওয়ার নয়। এমনই মনে করেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা অনিমেষ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি শীতে আমি পরিবারকে নিয়ে ময়দানে আসি শুধু ঘোড়ার গাড়ি চড়ব বলে। রেড রোড ধরে যাওয়ার সময়ে মনে হয়, টাইম মেশিনে চেপে ফিরে গিয়েছি পুরনো কলকাতায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন