দমকলের পথে বাধা হটান: মমতা

দমকলের গাড়ি যাওয়ারই পথ নেই যেখানে, সেখানে কী ভাবে আগুনের সঙ্গে মোকাবিলা করবে বাহিনী? সোমবার বড়বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে এমন প্রশ্ন তুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০২:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

দমকলের গাড়ি যাওয়ারই পথ নেই যেখানে, সেখানে কী ভাবে আগুনের সঙ্গে মোকাবিলা করবে বাহিনী? সোমবার বড়বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে এমন প্রশ্ন তুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। বছর কয়েক আগে তপসিয়ায় একটি জুতোর গোডাউনে আগুন লাগার ঘটনার পরে একই কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ঘিঞ্জি-অপরিসর এলাকায় আগুন লাগলেও দমকল যাতে সেখানে ঢুকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে বিকল্প পথ। কিন্তু তাঁর নির্দেশের পরে এখনও কেন সেই কাজ করা হয়নি, বড়বাজারের ঘটনার পরে তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিন মমতা বলেন, ‘‘কেউ ত্রিপল খাটিয়ে রাস্তার উপরে ব্যবসা করছেন, কেউ বা ঝুপড়ি করে বসে পড়েছে।’’ এর সবটাই যে চলছে নিয়ম না মেনে, তাও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের বক্তব্যে। বিষয়টির উপরে নজরদারির দায়িত্বে পুর প্রশাসন। পুরসভা এ সব মেনে নিয়েছে কেন, স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। এ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দায় তো দায়িত্ববান সংস্থাকে নিতেই হবে।’’

Advertisement

তপসিয়া, শিয়ালদহ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে পুর প্রশাসনকে কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, সরু-ঘিঞ্জি এলাকায় দমকলের ছোট গাড়ি ঢোকার মতো বিকল্প একটা পথ
তৈরি রাখতে।

পুরকর্মীদের একাংশই অবশ্য বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সেই সতর্কবার্তা থেকে শিক্ষা নেয়নি পুর প্রশাসন। তারই খেসারত দিতে হল সোমবার রাতে বড়বাজারের ৩ নম্বর আমড়াতলা লেনের অগ্নিকাণ্ডে। ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েও রাত ৯’টায় লাগা আগুন সারা রাতেও পুরোপুরি নেভাতে পারেনি দমকল বাহিনী। অপরিসর-ঘিঞ্জি এলাকা বলেই যে দমকলের কাজ করতে অসুবিধা হয়েছে, বারবার সে কথাই ফিরে আসছে আলোচনায়। বলা হচ্ছে, সেটিই প্রধান বাধা। পুরসভার অন্দরেই আলোচিত হচ্ছে, কোনও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বড়বাজারের ওই অগ্নিকাণ্ড একটা
বড় ‘ধাক্কা’ দিয়েছে পুর প্রশাসনকে। যার আঁচ মিলেছে মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। বলেছেন, ‘‘বড়বাজার জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। এ বার স্থায়ী ব্যবস্থা নিতেই হবে।’’

Advertisement

বড়বাজারের মতো ব্যস্ততম এলাকায় এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দমকল যাওয়ার রাস্তা নেই। দমকল যাবে কী করে? কাননকে (মেয়রের ডাক নাম) বলব, অগ্নি-সুরক্ষা বিধি নিয়ে পুরসভার গাইডলাইনের প্রচার করতে হবে।’’ পুরসভার পাশাপাশি অবশ্য শহরবাসীকেও সজাগ থাকার কথা মনে করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনার জায়গা আপনাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে। দাহ্য বস্তু দিয়ে রাস্তার উপরেই রান্না করা হচ্ছে, ত্রিপল খাটিয়ে সেখানেই ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। এ সব বন্ধ করতে হবে। সরকারেরও তো একটা লিমিটেশন আছে।’’

অপরিসর রাস্তার জন্য বড়বাজারে আগুন নেভানোর কাজে বিঘ্ন ঘটলেও দমকল বাহিনীর কাজে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা সারাক্ষণ পরিশ্রম করেছেন। ভাবা যায় না।’’ এর পরেও সাধারণ মানুষ সতর্ক না হলে যে কোনও সময়ে আরও বড় বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির কথাও তোলেন। বলেন, ‘‘বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের গোলমাল, বাড়ি ভেঙে পড়ছে তবুও বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই থাকছেন মানুষজন। এর দায়িত্ব সরকার কী ভাবে নেবে? আমরা সাহায্য করতে পারি মাত্র। তাই বলে যেখানে-সেখানে ঝুপড়ি করে বসে পড়া, ত্রিপল খাটিয়ে ব্যবসা, এ সব চলবে না। সরকার এ সব বরদাস্ত করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন