পুজোর পরে ফের ঢিলে মেট্রো-সুরক্ষা

মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কর্তাদের উদ্বেগ নতুন নয়। মেট্রো রেলের নিরাপত্তায় কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে এ বার রিপোর্ট জমা পড়ল লালবাজারে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৭
Share:

মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কর্তাদের উদ্বেগ নতুন নয়। মেট্রো রেলের নিরাপত্তায় কোথায় কোথায় খামতি রয়েছে, তা চিহ্নিত করে এ বার রিপোর্ট জমা পড়ল লালবাজারে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর পরে মেট্রো রেল পুলিশের তরফে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে নিরাপত্তা নিয়ে মূল তিনটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টে পুলিশকর্মীর অভাব, নজরদারি বা স্ক্যানারের অভাবের পাশাপাশি মেট্রো রেল পুলিশের (এমআরপি) সঙ্গে রেলরক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)-র সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, মেট্রোয় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ কমিশনার ওয়াকিবহাল। কলকাতা পুলিশের আলাদা বাহিনী মেট্রো রেল পুলিশ থাকলেও নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে পুজোর আগে এক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার থানার ওসি-দের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে লন্ডনের টিউব রেলে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে কোনও রকম নাশকতা ঠেকাতে প্রতিটি থানার ওসিদের মেট্রো স্টেশন ঘুরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন পুজোর দিনগুলিতে। অভিযোগ, পুজো শেষ হতেই আবার মেট্রোর নিরাপত্তা আগের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। তাই লালবাজারে জমা দেওয়া ওই নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করা হয়েছে পুলিশের তরফে।

Advertisement

মেট্রো-কথা

• মেট্রোর যাত্রা পথ: ২৭.২৮ কিমি

• মোট স্টেশন: ২৪ (কলকাতা পুলিশের অধীনে ২২টি)

• মাটির নীচে স্টেশন: ১৫টি

• ২২টি স্টেশনের জন্য: প্রায় ১৫০ পুলিশকর্মী

• লাগেজ স্ক্যানার খারাপ প্রায় প্রতিটি স্টেশনে

নোয়াপাড়া এবং কবি সুভাষ, দুই প্রান্তিক স্টেশন ছাড়া মেট্রো রেলের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা পুলিশের এমআরপি। মাটির নীচে প্রবেশের মূল গেট থেকে টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত নিরাপত্তা দেখভাল করে এমআরপি। লালবাজার জানিয়েছে, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেট্রো স্টেশনে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থা। ওই নিরাপত্তায় যাত্রী সুরক্ষার দায়িত্বে যৌথ ভাবে রয়েছে আরপিএফ এবং এমআরপি। প্রতিটি স্টেশনে ঢোকার মুখে গেটে থাকার কথা এমআরপি কর্মীদের। সাধারণত প্রতিটি গেটে দুই থেকে তিন জন পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়। এর পরে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে টিকিট পাঞ্চিং গেটের সামনে থাকেন কলকাতা পুলিশের হোমগার্ড এবং সিভিল ভলান্টিয়ার। এ ছাড়াও প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন থাকে মোট চার জন সশস্ত্র আরপিএফ কর্মী।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেট্রোর ২২টি স্টেশনে ৭৫টি গেট রয়েছে। যা দিয়ে প্রতি দিন কয়েক লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু প্রতিটি গেটে সব সময়ে নিরাপত্তারক্ষী থাকে না। বেশ কয়েকটি গেট কার্যত অরক্ষিত থেকে যায়। এমআরপিতে মোট পুলিশ কর্মীর সংখ্যা দেড়শোর মতো। এর মধ্যে তিন জন ইন্সপেক্টর। ৯ জন অফিসার। কনস্টেবলের সংখ্যা ৬০। বাকিরা হোমগার্ড এবং সিভিক ভলান্টিয়ার। ২২টি স্টেশনেই লাগেজ স্ক্যানার খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ওই যন্ত্র খারাপ থাকায় নিরাপত্তাকর্মীরা সাধারণত যাত্রীদের ব্যাগ হাতে হাতে পরীক্ষা করেন। ‘ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর’ গেটে ঢোকার আগে এই চেকিং করা হয়। পুলিশ কর্মীদের দাবি, সব যাত্রীর জিনিস তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। ফলে সন্দেহজনক মনে হলে তবেই কোনও যাত্রীর তল্লাশি করেন গেটে থাকা এমআরপি কর্মীরা। এমনকী, কর্মীর অভাবে স্টেশনের প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ঠিক ভাবে নজরদারিও করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, মেট্রোর সুরক্ষার জন্য এমআরপি-র মতো রেলওয়ে পুলিশ বাহিনী বা আরপিএফের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওই দুই বাহিনীর মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই বলে অভিযোগ। কোনও ঘটনা না ঘটলে ওই দুই বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বৈঠকও হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ মেট্রো রেল পুলিশের তরফে জমা দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন