ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতু।
এক সেতু বিপর্যয়ই বদলে দিয়েছে দক্ষিণ–পশ্চিম শহরতলির একটা বড় অংশের বাসিন্দার ছুটির রুটিন!
মাঝেরহাট সেতু ভেঙেছে গত মঙ্গলবার। তার পরে প্রথম রবিবার ভিড় এবং যানজট এড়াতে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে অনেকেই বিরত থাকলেন। ঘরে বসেই কাটালেন সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবাসরীয় ছুটি।
আর চল্লিশ দিন বাদে দুর্গাপুজো। অন্য বছর এই সময় থেকেই অনেকে শুরু করে দেন পুজোর কেনাকাটা। এ বছরও কেউ কেউ টুকটাক শুরু করেছেন। কিন্তু সেতু ভাঙার পরে শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। এর জেরে সেখানকার বাসিন্দাদের গড়িয়াহাট বা মধ্য কলকাতা পৌঁছতে নাভিশ্বাস উঠছে। রাস্তাতেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কলকাতা পুলিশ নতুন রুট চালু করলেও গত কয়েক দিনে যানজট এড়ানো পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। অনেকে যদি বা কোনও ভাবে নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশনে এসে পৌঁছেছেন এবং সেখান থেকে মেট্রো ধরে গন্তব্যে, তবু গত চার দিন সেই যাত্রাপথের অভিজ্ঞতাও খুব একটা সুখকর হয়নি। ফলে মাসের প্রথম সপ্তাহের রবিবার থেকেই বড় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে বেহালা, ঠাকুরপুকুর, সরশুনা কিংবা পর্ণশ্রী এলাকার বাসিন্দাদের।
যেমন বেহালার চণ্ডীতলা রোডের ইন্দিরা পাল। আলিপুরে কর্মরতা ইন্দিরার পুজোর বাজার শুরু হয় মাসখানেক আগে থেকে। তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন, বেতন হাতে পেয়েই নিউ মার্কেট বা গড়িয়াহাট ছুটবেন পুজোর বাজার শুরু করার জন্য। কিন্তু সেতু ভাঙার পরে বদলে গিয়েছে তাঁর গন্তব্য। রবিবার বেহালা বাজারেই কেনাকাটা শুরু করলেন ইন্দিরা।
পর্ণশ্রীর শঙ্কর রায় প্রতি রবিবারই বেরোন পরিবারকে নিয়ে। কখনও কেনাকাটা করতে, কখনও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে। কিন্তু সেতু ভাঙার পরে ওই অঞ্চলের ট্র্যাফিক এতই শ্লথ যে এ দিন আর বেরোতে ভরসা পাননি শঙ্কর। শুধু ইন্দিরা বা শঙ্করই নন। ঠাকুরপুকুর-পর্ণশ্রী-সরশুনা-তারাতলার অনেকেই যানজটে আটকে পড়ার ভয়ে নিজেদের বাড়িতে বন্দি রেখেছেন এ দিন। ইন্দিরার কথায়, ‘‘গত মঙ্গলবারের পরে রোজ অফিস যেতে-আসতে যে পরিমাণ যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে, রবিবার আর সেই ভোগান্তিতে পড়তে চাইনি। তাই বেহালা বাজার থেকেই পুজোর কেনাকাটা শুরু করেছি। এই যানজট যে কবে কমবে, ঈশ্বরই জানেন। যানজট এড়াতে অনেকেই মেট্রো ধরছেন। ফলে সেখানেও তো ঠাসা ভিড়।’’
ছুটির দিনেই শুধু নয়। খুব জরুরি কাজ না থাকলে বেহালা অঞ্চলের অনেকেই আপাতত ধর্মতলা বা উত্তর-মধ্য কলকাতামুখী হতে চাইছেন না। পুজোর মধ্যেও এই অবস্থা চললে হয়রানি যে কোন পর্যায়ে পৌঁছবে, সেটা ভেবেই এখন আশঙ্কিত তাঁরা।