Christmas

বিশের বিষ-জ্বালায় ‘একুশে পা’-র মোচ্ছব

দূরত্ব-বিধি মেনে বসার ব্যবস্থা থাকছে। নাইট ক্লাবেও চেনাঅচেনা ভুলে ঘেঁষাঘেঁষির নাচানাচি বন্ধ রাখার ফরমান।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আসুন, বসুন, খানদান! গানবাজনায় মাতুন, কিন্তু নাচতে পারবেন না! নিজের জায়গায় বসেই উল্লাস করুন, কোমর দোলান, উঠতে পারবেন না।

Advertisement

দু’হাজার বিশের বিষজ্বালায় বছর শেষের পার্টির আমেজেও বিস্তর কাঁটা। এক কালে বড়দিন, বর্ষবরণের কলকাতা মানে দেশবিদেশের গণ্যমান্য অতিথি থেকে গোটা দেশের রইস রাজারাজড়ার ভিড়। সেই বিচ্ছুরণের খানিকটা আজও দেখা যায় নামীদামি ক্লাব, লাউঞ্জ, রেস্তরাঁ, হোটেলে। তবে নিউ নর্মাল ডিসেম্বর জুড়ে কিন্তু অন্য গল্প। যেমন, সিসিএফসি-র প্রকাণ্ড মাঠটায় ‘নিউ ইয়ার ইভে’ টেনেটুনে ৪০০ জনের জমায়েত ঘটানো নিয়েও ঘোর ধন্দ। পার্ক হোটেলের হইহুল্লোড়ের পাব-লাউঞ্জেও এই দুঃসময়ে সাবেক চেহারা পাল্টে ভোলবদলের হিড়িক। ডান্স ফ্লোরে ওঠা নিষেধ। দূরত্ব-বিধি মেনে বসার ব্যবস্থা থাকছে। নাইট ক্লাবেও চেনাঅচেনা ভুলে ঘেঁষাঘেঁষির নাচানাচি বন্ধ রাখার ফরমান।

সিসিএফসি-র বার কমিটির মেম্বার হীরক দাশগুপ্ত বুধবার বলছিলেন, “আমাদের ক্লাবের মাঠটায় অনায়াসে তিন-চার হাজার লোক ধরে। এলাহি পার্টি এমন কত হয়েছে। এতটা জায়গা পাচ্ছি বলেই সব রকমের সতর্কতা বিধি মেনে, ২৪ ও ৩১ ডিসেম্বর লালবাজারের কাছে ৪০০ লোক ঢুকতে দেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে।” সরকারি-বিধি মেনে সর্বত্রই বেঁধে দেওয়া হচ্ছে সান্ধ্য বা নৈশ পার্টির জনসংখ্যা। এ বার মোচ্ছবের প্রচারে খানাপিনা, নাচাগানার ফিরিস্তির বদলে সতর্কতার নানা আশ্বাস। স্বভূমিতে রাজকুটীরের ঘোষণা, কী ভাবে ১৩ একরের প্রশস্ত জায়গায় নিরাপদে পার্টি করতে পারবেন বাবুবিবিরা। পার্কিং লটেও মানা হবে দূরত্ব। বেশির ভাগ জায়গাই বুফে এড়াতে চাইছে। এমনকি ভিড় এড়াতে বার্বিকিউ কাউন্টারেও মাছ, মাংস সব কিছুর পৃথক ব্যবস্থা। অনেক জায়গাই অর্ধেকের বেশি বুকিং নিতে পারছে না, বলে খরচ কিছুটা বাড়তির দিকে।

Advertisement

এই শীতে বেঙ্গল ক্লাব, ক্যালকাটা ক্লাবের পার্বণী ভোজ, মেলামেশাও কার্যত অমিল। ক্যালকাটা ক্লাব বাড়িতে খাবার নিয়ে গিয়ে উদ্ যাপনে জোর দিচ্ছে। বছর শেষের কিছু ক্লাবে হবে কি না, এখনও ঠিক হয়নি। বেঙ্গল ক্লাবের কমিউনিকেশন সাব-কমিটির সদস্য সরোজেশ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতেই হবে। তবে ক্রিসমাসের দুপুরের ভোজ বা মেলামেশায় অনেক বন্ধুর সান্নিধ্য মিস করব।” অবশ্য এ বার বড়দিনে আগাম বুকিংয়ে তাও প্রাইভেট লাঞ্চের সুযোগ বেঙ্গল ক্লাবে। আগে আসার ভিত্তিতে সাধারণত ১০০ জনের জায়গায় এখন ৩০ জন আসছেন ক্লাবে।

নামী ক্লাবের পার্টির খানা বা পাঁচতারার ভোজ— বাড়িতে আস্বাদনই বলা যায়, নব্য স্বাভাবিতার অঙ্গ। আইটিসি সোনারের গুরমে কাউচ বা তাজের কিউ মিন অ্যাপে বাড়িতে এনে চাখবার হরেক পদের হাল-হদিশ। বড়দিনের কেককুকি উপহারের ঝুড়িও চাইলেই বাড়িতে আসবে। অনুষ্ঠান, আয়োজন সবই নিচু তারে বাঁধা।শহরের সাবেক বিনোদন কেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটের ট্রিঙ্কাজ়ের কর্ণধার আনন্দ পুরী বলছেন, “নাচানাচির এ বার প্রশ্ন নেই।” তপসিয়ার জনপ্রিয় লাউঞ্জ দ্য গ্রিড থেকে সেক্টর ফাইভের অল্টেয়ার হোটেলের লাউঞ্জ ক্যাপেলা— সর্বত্র এক ছবি। হোয়াটসঅ্যাপ কাফেয় বড়দিনের টার্কিভোজ বা গানবাজনা চলছে। তবে নাচানাচি বারণ। দক্ষিণ কলকাতায় সাবেক স্কাইরুম আমেজের ‘চ্যাপ্টার টু’-তে কবেকার রেট্রোসুরের ছোঁয়া। কিন্তু উচ্ছ্বাসের গণ্ডি নিজের আসনের সীমানায়।

একরাশ বিপদের মাঝখানে শুয়েই অতঃপর একুশে পা রাখা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন