রাস্তা জুড়ে হাঁ, হাওড়া যেন মৃত্যুফাঁদ

• দৃশ্য ১: অফিসের ব্যস্ত সময়ে হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে যানজটের ছবিটা পরিচিতই। সেই যানজট কাটিয়ে স্কুটিতে স্ত্রী ও চার বছরের সন্তান নিয়ে বড়বাজারে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন অখিলেশ পাসোয়ান। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় জলে ডুবে থাকা গর্ত বুঝতে পারেননি। ফলে স্কুটির চাকা গর্তে পড়তেই টাল সামলাতে না পেরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রাস্তাতেই আছাড় খান। তখন বাঁ দিকে কোনও বাস না যাওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তিন জন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

বর্ষায় হাওড়া স্টেশন এলাকা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

• দৃশ্য ১: অফিসের ব্যস্ত সময়ে হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে যানজটের ছবিটা পরিচিতই। সেই যানজট কাটিয়ে স্কুটিতে স্ত্রী ও চার বছরের সন্তান নিয়ে বড়বাজারে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন অখিলেশ পাসোয়ান। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় জলে ডুবে থাকা গর্ত বুঝতে পারেননি। ফলে স্কুটির চাকা গর্তে পড়তেই টাল সামলাতে না পেরে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রাস্তাতেই আছাড় খান। তখন বাঁ দিকে কোনও বাস না যাওয়ায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তিন জন।

Advertisement

• দৃশ্য ২: সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। হাওড়া ব্রিজ থেকে হাওড়া স্টেশনের দিকে সজোরে নামছিল একটি যাত্রী-বোঝাই মিনিবাস। সামনে ছিল একই রুটের আর একটি বাস। সেটিকে বাঁ দিক দিয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের বাঁ দিকের সামনের চাকা গিয়ে পড়ল একটা ছ’ইঞ্চি মাপের বড় গর্তে। তীব্র ঝাঁকুনিতে রাস্তায় ছিটকে পড়লেন বাসের গেটে ঝোলা দুই যাত্রী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হল।

• দৃশ্য ৩: হাওড়া স্টেশনের প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বেরোতেই বিপত্তি। গড়িয়াহাট যাওয়ার জন্য বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন মেয়ে অনন্যা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু যাবেন কী করে? হাওড়া ব্রিজের আন্ডার পাস থেকে স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্স পর্যন্ত গাড়ির দীর্ঘ লাইন। ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে ধীরে ধীরে যা-ও বা এগোলেন, আন্ডারপাসে ঢুকতেই একটা বড় গর্তে পড়ে ট্যাক্সির সামনের চাকা গেল ভেঙে। অগত্যা বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তার জল-কাদা পেরিয়ে আর একটি ট্যাক্সির সন্ধান শুরু করলেন মেয়ে।

Advertisement

ভরা বর্ষায় ঠিক এমনটাই হাল হয়েছে কলকাতার দিকে যাওয়ার ও হাওড়ার দিকে আসার সব ক’টি রাস্তা। প্রত্যেকটি যেন মৃত্যুফাঁদ। কোথাও দু’ইঞ্চি বা কোথাও ছ’ইঞ্চি গর্তে ভরা হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এই সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা গোলাবাড়ির দিক থেকে আসা জিআর রোডের। রাস্তাটি হাওড়া ব্রিজ থেকে অর্ধচক্রাকারে ঘুরে দু’ভাগ হয়ে একটি গিয়েছে হাওড়া স্টেশনের দিকে আর একটি গিয়েছে বঙ্কিম সেতুর দিকে। দু’টিরই অবস্থা গুরুতর। হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে যেমন রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছে ছোট বড় গর্ত, তেমনই ব্রিজ থেকে হাওড়ার দিকে নামার মুখে একবছর আগে তৈরি হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার অ্যাপ্রোচ রোডটির সব পিচ উঠে খোয়া পাথর বেরিয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে দু’টি রাস্তা জুড়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পরে অবস্থা আরও খারাপ।

হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘স্টেশন এলাকার রাস্তার এই অবস্থার জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজট নিত্যকার ঘটনা।’’

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই ভাঙাচোরা বিপজ্জনক রাস্তার জন্য নিত্যদিন যানজট-সহ নানা ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের হুঁশ ফেরেনি। অথচ স্টেশন এলাকাকে সাজানো হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। হাওড়া স্টেশনে আসা ট্রেনযাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশন থেকে বেরিয়ে কলকাতার দিকে যাওয়ার রাস্তা ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র রোডের হাল সব থেকে খারাপ। দীর্ঘ দিন খারাপ হয়ে পড়ে থাকলেও রাস্তাটি মেরামত না করায় মানুষের হাঁটাচলা দায় হয়ে উঠেছে। সব থেকে খারাপ অবস্থা হাওড়া ব্রিজের আন্ডারপাসের। কংক্রিটের চাদর উঠে প্রায় এক হাত করে গর্ত হয়ে গিয়েছে গোটা আন্ডারপাসটি।

কিন্তু কেন সারানো হচ্ছে না হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এই সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা? ওই রাস্তাগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, তিনি গত বছর স্টেশন এলাকার রাস্তা মেরামতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৫ কোটি টাকার খরচ চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তা না পাওয়ায় বর্ষার আগে গর্তে ইট ফেলার জন্য ৫ লক্ষ টাকা চান। কিন্তু তা-ও মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘দফতর থেকে জানানো হয়েছে টাকার অভাব। তাই এখনই রাস্তা সারানো যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন