দুর্বিষহ: এ পথেই চলছে নিত্যযাত্রা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
রাস্তা আছে নামেই। কিন্তু যাতায়াত কার্যত দুরূহ। জায়গায় জায়গায় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা পথ কাদাময়।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার অধীনে সুভাষগ্রাম মেন রোডের একাংশের চেহারা কতকটা এমনই। সুভাষগ্রাম স্টেশন থেকে বেরিয়ে বিদ্যাধরপুর যাওয়ার পথে এক কিলোমিটার রাস্তা গত দেড় বছর ধরে এমনই করুণ অবস্থায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় পানীয় জলের পাইপ বসানোর জন্য বছর খানেক আগে রাস্তা খোঁড়া হয়। কিন্তু পাইপ বসানো শেষ হলেও রাস্তা সারাতে তৎপর হয়নি পুরসভা। আক্ষেপ করে স্থানীয়েরা বলছেন, ‘‘জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। জলও এল না, এ দিকে রাস্তাও গেল!’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিদ্যাধরপুরের মানুষকে কাছাকাছি সুভাষগ্রাম স্টেশনে যেতে ওই ভাঙা রাস্তার উপরে নির্ভর করতে হয়। কাছাকাছি সোনারপুর বা মল্লিকপুরের বিভিন্ন স্কুলে যাওয়ার জন্য পড়ুয়াদের কাছেও ওই রাস্তাই ভরসা। অফিস কাছারির নানা কাজে কলকাতায় আসার জন্য সুভাষগ্রাম স্টেশনে পৌঁছতেও বিদ্যাধরপুরের মানুষকে ওই রাস্তার উপরেই নির্ভর করতে হয়।
কিন্তু, বছর খানেক আগে রাস্তার মাঝ বরাবর পাইপলাইন বসানোর পরে রাস্তার মাঝের অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে। উপর থেকে মাটি ফেলে তা বুজিয়ে দেওয়া হলেও কাজ কিছুই হয়নি। মাঝখানে বসে যাওয়া রাস্তায় দু’পাশে দিয়ে কোনও মতে লোক যাতায়াত করলেও গাড়ি নিয়ে ওই পথে যাওয়া রীতিমতো সমস্যার। রাত–বিরেতে প্রসূতি কিংবা অসুস্থ মানুষকে নিয়ে ওই পথে যাতায়াত কার্যত দুঃস্বপ্ন। ভাঙাচোরা রাস্তায় কোনও ক্রমে হাতে গোনা অটো চলে। কিন্তু বৃষ্টি হলে তা-ও অনিশ্চিত। ওই রুটের এক অটো চালক বলেন, ‘‘ভাঙা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই গাড়ির যন্ত্র ভেঙে যায়। লাভ করতে গিয়ে ক্ষতিই হয়। তাই বৃষ্টি হলে অটো বন্ধ রাখতে হয়।’’
বিদ্যাধরপুরের পেটুয়া অঞ্চলের এক পড়ুয়ার অভিযোগ, ‘‘সাইকেলে চেপেও সোনারপুরের কামরাবাদে স্কুলে যেতে অনেকটা সময় লেগে যায়। রাস্তার জন্য খুব অসুবিধে হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ রাস্তাটি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার উপ পুরপ্রধান শান্তা সরকারের ওয়ার্ডের অন্তর্গত হওয়া সত্ত্বেও চরম অবহেলিত। অথচ ওই রাস্তারই একাংশ মল্লিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার অধীন। স্থানীয় পঞ্চায়েতের তৎপরতায় ওই অংশের রাস্তা তুলনামূলক ভাল। ওই রাস্তার একাংশ কংক্রিট দিয়ে বাঁধানোও হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই রাস্তার হাল খুবই খারাপ। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। মেরামতিতে এত সময় কেন লাগছে বুঝতে পারছি না।’’
অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত মণ্ডল বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগের বৃষ্টিতে রাস্তার বেহাল দশা হয়েছিল। বর্ষার সময়ে কী অবস্থা হবে ভাবলে শিউরে উঠছি।’’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার উপ পুর প্রধান এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শান্তা সরকার রাস্তার বেহাল দশার কথা স্বীকার করেন।
তিনি জানান, রাস্তাটি পিছিয়ে পড়া এলাকার অন্তর্ভুক্ত। সরকারের পৃথক প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকায় উন্ননয়নের কাজ হয়। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি প্রকল্পের টাকা এসে
গিয়েছে। আমরা দিন কয়েক আগে মাটি সমান করার কাজ শুরু করেছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ওই সমস্যা মেটানো সম্ভব হবে।’’