Heatwave

দহনজ্বালায় খাঁ খাঁ পথঘাট, অঘোষিত ‘বন্‌ধ’ শহরে

তাপপ্রবাহের জেরে রবিবার কার্যত অঘোষিত ধর্মঘটের চেহারা নিল শহরের অধিকাংশ রাস্তা। সকালের দিকে যদি বা কিছু গাড়ি রাস্তায় নেমেছিল, বেলা বাড়তেই উধাও হয়ে গেল তারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৮
Share:

ফাঁকা: দুপুরের তীব্র গরমে দেখা নেই যানবাহনের। রবিবার, ই এম বাইপাসে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ঝলসানো রোদে ধূ ধূ করছে পথ। মাঝেমধ্যে দু’-একটি গাড়ি ফাঁকা রাস্তায় তীব্র গতিতে চলে যাচ্ছে। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের দু’-এক জন মাঝেমধ্যেই রাস্তা ছেড়ে পাশের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিচ্ছেন। না আছে গাড়ির হর্নের আওয়াজ, না আছে গাড়ির ভিড় সামলাতে পুলিশি ব্যস্ততা। দুপুর আড়াইটের চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ যেন অচেনা এক রাস্তা!

Advertisement

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ শুধু নয়। তাপপ্রবাহের জেরে রবিবার কার্যত অঘোষিত ধর্মঘটের চেহারা নিল শহরের অধিকাংশ রাস্তা। সকালের দিকে যদি বা কিছু গাড়ি রাস্তায় নেমেছিল, বেলা বাড়তেই উধাও হয়ে গেল তারাও। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরের ঘণ্টা চারেক সময় কেউ ঘর থেকে বাইরে পা বাড়ালেন না। এমনকি, ছুটির দিনে প্রচারে ঝড় তোলার বদলে প্রার্থীদের অনেকেই প্রচার কাটছাঁট করার পথে হাঁটলেন। কেউ রোদ এড়াতে সকাল সকাল প্রচার শুরু করলেন। কেউ দুপুর এড়িয়ে জনসংযোগ সারলেন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত।

কলকাতা-সহ বেশ কিছু জেলার জন্য আগেই সতর্কতা জারি করেছিল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, এ দিন কলকাতার তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪১ ডিগ্রি। যা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি। পূর্বাভাস মেনে রোদের তেজের সঙ্গে গরম— দুইয়ের দাপটে ছুটির দিনেও ফাঁকা থাকল শহরের রাস্তাঘাট। গণপরিবহণের সংখ্যাও ছিল কম। অল্প যে ক’টি চলেছে, তাতেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। দুপুরের দিকে ইডেনে আইপিএলে কেকেআর এবং আরসিবি-র খেলাকে কেন্দ্র করে ধর্মতলা চত্বরে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও বাকি শহরের চেহারা বদলায়নি। বেলা ১১টার পর থেকে ই এম বাইপাস, শিয়ালদহ, উল্টোডাঙা চত্বরেও গাড়ি ছিল হাতে গোনা। পার্ক স্ট্রিট চত্বরও ছিল প্রায় ফাঁকা। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে ডিউটি করছিলেন এক পুলিশকর্মী। ফাঁকা রাস্তাঘাটের কথা বলতেই তিনি উত্তর দিলেন, ‘‘বিশেষ প্রয়োজন না হলে কে আর এই গরমে বেরোবে? পাঁচ মিনিটও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না। চোখ-মুখ ঝলসে যাচ্ছে!’’

Advertisement

গরমের প্রভাব পড়েছে শহরের বাজারেও। নিউ মার্কেট এবং গড়িয়াহাট চত্বরে ছুটির দিনের চেনা ভিড় দেখা যায়নি। সন্ধ্যার দিকে দোকানগুলির সামনে অবশ্য অল্প ভিড় দেখা যায়। গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘গোটা দুপুরে রাস্তায় কাকপক্ষীও থাকছে না। কেনাকাটা কে করবে?’’

তাপমাত্রার এই মেজাজের প্রভাব পড়েছে প্রার্থীদের প্রচারেও। গরমের জন্য সকালের দিকে রোড-শো আপাতত বন্ধ রেখেছেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। সকালের পরিবর্তে বিকেল এবং সন্ধ্যায় রোড-শোয়ে জোর দিচ্ছেন তিনি। মালা বলেন, ‘‘রোড-শোয়ে প্রচুর মানুষ থাকেন। বয়স্করাও অংশ নেন। গরমের জন্য সকালে রোড-শো আপাতত করছি না।’’ এ দিন ৯১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার সারেন তিনি। দুপুরের প্রচার এড়াতে গত কয়েক দিন ধরে সকাল সকাল প্রচার শুরু করছেন ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমও। আগে ৯টা থেকে প্রচার শুরু হলেও এখন তিনি প্রতিদিন প্রচার শুরু করছেন এক ঘণ্টা আগে। সায়রার কথায়, ‘‘আমরা চাই না, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুন। তাই সকাল সকাল প্রচার শুরু করে বেলা ১১টার মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা করছি। তার পর আবার বিকেলে বেরোচ্ছি।’’ তবে গরমে এখনও সময় পরিবর্তনের পথে হাঁটেননি উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। পূর্ব নির্ধারিত সময়েই প্রচার করছেন বলে তিনি জানালেন। তবে দুপুরের দিকে যতটা সম্ভব বাইরে ঘুরে ঘুরে প্রচার না করে কর্মীদের নিয়ে ছোট মিটিংয়ে জোর দিচ্ছেন। প্রার্থীর কথায়, ‘‘প্রচার মানে তো শুধু আমি নই, কর্মীরাও থাকেন। কর্মীরা বেরোচ্ছেন, আমিও বেরোচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন