শুধু সব্যসাচী নয়, লক্ষ্যভেদে ‘অর্জুন’ও

গভীর রাতেও ফোনটা তিনি ‘এক রিং’য়েই তোলেন। মানে? দুধসাদা চাইনিজ কলার, ঘন অমাবস্যা রঙা কালো প্যান্ট, মুচকি হাসছেন—‘‘ঘ্যানঘ্যান করে ফোন বেজে যাওয়াটা একদম সহ্য হয় না ভাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:২৮
Share:

গভীর রাতেও ফোনটা তিনি ‘এক রিং’য়েই তোলেন। মানে? দুধসাদা চাইনিজ কলার, ঘন অমাবস্যা রঙা কালো প্যান্ট, মুচকি হাসছেন—‘‘ঘ্যানঘ্যান করে ফোন বেজে যাওয়াটা একদম সহ্য হয় না ভাই। তা ছাড়া, যিনি ফোনটা করছেন, নিশ্চয় দরকারে, তুলব না?’’

Advertisement

পাড়া-পড়শিরাও মেনে নিচ্ছেন, গলির মোড়ে কুকুরের কলতান থেকে জল-ভাসি সল্টলেকের কষ্ট— ইতস্তত না করে রাতেও জানানো যায় তাঁকে। এবং একবার ফোন বাজলেই সাড়া মেলে— ‘‘হ্যাঁ বলুন।’’

আটপৌরে সজ্জন-স্বরটা কখনও কি বদলায় না? ফের হাসছেন, ডিএল ব্লকের চাইনিজ কলার—‘‘দলের নির্দেশে ‘দুষ্টের দমন’ তো মিঠে কথায় হয় না ভাই!’’

Advertisement

তাই ‘তপ্ত কামদুনি’র ক্ষতে প্রলেপ দিতে খিচুড়ি খাওয়ানোর জনসংযোগের জন্য তলব পড়ে তাঁর। যেখানে সামিয়ানার তলায় পাত পেড়ে খাওয়ানোর আয়োজনেও ঘুরে ঘুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কেউ লজ্জা করবেন না, চেয়ে নেবেন।’’ টাকি এবং বসিরহাট উপনির্বাচনের ‘অনিশ্চিত’ আসনও জিতিয়ে আনার দায়িত্ব অনায়াসে তাঁর উপরে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে তাঁর দল। তারও আগে, ক্ষমতায় যখন সিপিএম, রাজারহাটে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে পার করার দায়িত্ব অনেকটাই নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন তিনি। দলের নেতারাই বলছেন, ‘‘ছেলেটা প্রয়োজনে নিশ্চুপে কাজ সারতে পারে। কোনও শব্দ নেই, হল্লা নেই, অথচ কাজ হয়ে গেল।’’

তিনিই সল্টলেকের সব্যসাচী। লোকে বলে, যাঁর দুই হাত শুধু যে সমান সক্রিয় তাই নয়, এক হাতের খবর অনেক সময়ে অন্য হাত রাখেই না। তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরেরা বলছেন, ‘‘দাদা যখন এক হাতে ফুলের তোড়া দেন, অন্য হাত তখন হয়তো শত্রু ‘নিধনে’ ব্যস্ত।’’ দিন কয়েক আগে, নির্বাচনের সকালে উত্তাল সল্টলেকে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তাই নির্বিকার গলায় বলতে পারেন, ‘‘গণ্ডগোল কোথায় ভাই, মানুষ তো নিশ্চিন্তে ভোট দিচ্ছেন।’’ পালাবদলের আগে, তাঁর ট্র্যাক-রেকর্ড দলের তারিফ কুড়িয়েছে। রাজারহাটের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়ের (এখন যিনি তৃণমূলের ডেপুটি মেয়র হলেন) সঙ্গে যুঝতেও দল যে তাঁকেই বেছেছিল, মনে করাচ্ছেন অনুগামীরা। দলের এক তাবড় মন্ত্রী কবুল করছেন, ‘‘ছেলেটার এলেম আছে। কাজ দিলে, হেসে-ধমকে, আদর করে চড় মেরে, নিখুঁত ভাবে ফিনিশ করতে পারে।’’

আরও একটা স্বভাব রয়েছে তাঁর— দলের লোকেরাই বলেন, ‘ঠোঁটকাটা’। রাজারহাট-নিউ টাউনের সিন্ডিকেট প্রশ্নে বা মুকুল-ঘনিষ্ঠতা নিয়েও রাখঢাকের প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের ‘সব্য’র এমনই চেনা-অচেনা পরিচয় মেলে এলাকায়। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘শত ঘোষ (কংগ্রেস নেতা) আর সুভাষ চক্রবর্তীর নিখুঁত মিশেল!’’

গলায় ভারী সোনার চেন, দামি এসইউভি-র পাশাপাশি পাড়ার মোড়ে ভাঁড়ের চা আর সস্তার কেকেও অনায়াস ‘অহি’ বলছেন, ‘‘ওই ডাকনামে আজকাল আর কেউ ডাকে না জানেন। তবে, দিদি আমায় একটা স্নেহের নাম দিয়েছেন, সব্য, বেশ লাগে।’’ সল্টলেকের সদ্য ঘোষিত মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানেন, ওই স্নেহটুকুই তাঁর অস্ত্র।

যে অস্ত্রে, মেয়র ঘোষণার দেড় ঘণ্টার মধ্যে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন—সল্টলেকে জল, জমা জল আর জঞ্জালের সমস্যাটা মুছে দেওয়াই তাঁর ‘প্রায়রিটি’। সেই জন্যই কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বিধাননগরের জন্য ছ’টি কম্প্যাক্টর মেশিন পাওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। সঙ্গে যোগ করছেন, তাঁর (সল্টলেক) পুরসভা নিজে আয় করে দেখিয়ে দেবে, সরকারি অনুদানের ভরসায় না থেকেও পুরসভার খরচ চালানো যায়।

গাড়িতে ওঠার আগে, চেনা হাসিটা ফের ঝুলিয়ে নিচ্ছেন ঠোঁটে, ‘‘জানেন তো অহি ফাঁকা আওয়াজ দেয় না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন