সেই বাড়ি। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
এক ঝটকায় দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে সবুজ গাছের আদলে রাঙানো হয়েছে বাড়ির দেওয়াল। কিন্তু সামনে গেলেই বোঝা যায় রং নয়, আসলে গাছই ছেয়ে রয়েছে তেতলা বাড়ির পিছনের দিকের গোটা দেওয়াল জুড়ে।
বরাহনগরের নেতাজি কলোনি এলাকায় নিজের বাড়িতেই ইংলিশ আইভি গাছ দিয়ে এমন সবুজায়ন করেছেন বালুশিল্পী কৌশিক বসু। তাঁর দাবি, ‘‘বেশি মাত্রায় অক্সিজেন পাওয়ার ব্যবস্থা করতে এবং দেওয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব কাটাতেই তিনি এমন লতানো গাছ দিয়ে পুরো দেওয়াল ঢেকেছেন।’’
ইংলিশ আইভি গাছের উপকারিতা নিয়ে নাসাও তাদের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অক্সিজেন তৈরির পাশাপাশি ওই গাছটি বাতাসে ছাঁকনির কাজ করে। বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত যৌগ যেমন বেঞ্জিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন শুষে নেয়। ওই যৌগগুলি মানব দেহে ঢুকে ক্যানসার তৈরি করে। রাজ্যের উদ্যান পালন দফতরের সহ-অধিকর্তা সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, ‘‘বাঁশ গাছ সব থেকে বেশি অক্সিজেন দেয় পরিবেশকে। আইভি গাছও অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি বাতাসের জলীয় বাষ্প শুষে নিয়ে দেওয়ালকে বাঁচায়। এ ছাড়াও এই সবুজায়ন দৃশ্য দূষণ থেকে দেওয়াল বাঁচায়।’’
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক সমিত রায় জানান, গ্রীষ্মকালে বাড়ির দেওয়াল বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ শুষে নিয়ে ঘরের ভিতরে ছড়ায়, যা থেকে প্রচন্ড সমস্যা হয় শহর এলাকায়। তবে ইংলিশ আইভি গাছ দেওয়াল জুড়ে থাকলে তাপদাহ থেকে ঘরকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
বছর আড়াই আগে কটক থেকে ইংলিশ আইভি গাছের চারা এনে বাড়ির পিছনে পুঁতেছিলেন কৌশিকবাবু ও তাঁর স্ত্রী। অল্প অল্প করে সেই লতানো গাছ এখন পুরো তেতলা বাড়ির দেওয়াল ছেয়ে গিয়েছে। তবে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া গাছটিকে ঠিক রাখতে মাঝেমধ্যে পাতা ছাঁটতে হয় বলেও জানান কৌশিকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘গরমে ছাদ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ঢালতে হয় ওই গাছে। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যে কীটনাশকও স্প্রে করতে হয় যাতে পিঁপড়ে ও অন্য পোকামাকড় না আসে।’’