নজরদারির ফাঁক গলে স্কুলগাড়ির স্বেচ্ছাচারিতা

অন্য দিন স্কুলগাড়ির যে দিদি আসেন, এ দিন তিনি আসেননি। অন্য এক দিদি পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্কুল থেকে তুলিকাদের (নাম পরিবর্তিত) নিয়ে গিয়ে ময়রা স্ট্রিটের একেবারে মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “এখানেই দাঁড়াও। গাড়ি নিয়ে আসছি।” কিন্তু গাড়ি কোথায়! প্রায় আধ-ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরে দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি স্কুলের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির জনাপাঁচেক ছাত্রী রীতিমতো হতচকিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

অন্য দিন স্কুলগাড়ির যে দিদি আসেন, এ দিন তিনি আসেননি। অন্য এক দিদি পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্কুল থেকে তুলিকাদের (নাম পরিবর্তিত) নিয়ে গিয়ে ময়রা স্ট্রিটের একেবারে মাঝ বরাবর দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “এখানেই দাঁড়াও। গাড়ি নিয়ে আসছি।”

Advertisement

কিন্তু গাড়ি কোথায়! প্রায় আধ-ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরে দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি স্কুলের পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির জনাপাঁচেক ছাত্রী রীতিমতো হতচকিত। শেষমেশ তুলিকাই বাকিদের সঙ্গে নিয়ে চলে যায় স্কুলের ভিতরে। ভয়ে তখন কান্না জুড়ে দিয়েছে কেউ কেউ। সে সময়ে স্কুল থেকে বেরোচ্ছিলেন কয়েক জন শিক্ষিকা। ছাত্রীদের কাঁদতে দেখে তাঁরা দৌড়ে আসেন। সব শুনে তাঁরা খবর দেন অভিভাবকদের। শেষমেশ অবশ্য প্রায় এক ঘণ্টা পরে স্কুলগাড়ির ওই ‘সহকারী দিদি’ এসে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে যান।

কলকাতার বুকে স্কুলগাড়ি নিয়ে এমন হয়রানির ঘটনা এটাই একমাত্র নয়। স্কুলগাড়িতে যাতে বাচ্চাদের নিরাপত্তা কোনও ভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের কয়েক দফা নির্দেশিকা আছে। রাজ্য সরকারও বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। রাজ্য সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে চলার মুচলেকা জমা দিয়েই গাড়ির মালিকেরা স্কুলগাড়ির পারমিট পান। কিন্তু সে সবই সার। স্কুলগাড়ি রয়ে যায় সেই তিমিরেই।

Advertisement

কলকাতার বেশ কয়েকটি নামকরা স্কুলের অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের নেশাই স্কুলগাড়ি মালিকদের বেআইনি কার্যকলাপের দিকে ঠেলে দেয়। নিয়ম হল, স্কুলগাড়িতে ঠাসাঠাসি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া যাবে না। অভিযোগ, সরকারি ওই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গাড়িতে ঠাসাঠাসি করেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের। এক গাড়িকে একাধিক স্কুলে খাটানো হচ্ছে। ফলে, কোনও রকমে বাচ্চাদের তুলে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে নামিয়ে ফের ওই গাড়িই রওনা হচ্ছে নতুন স্কুলের উদ্দেশে।

সরকারি শর্ত অনুযায়ী, নির্বিঘ্নে রাস্তার এক ধার দিয়ে নিয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের গাড়িতে তোলার কথা। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে ময়রা স্ট্রিটের ওই ঘটনার মতো রাস্তায় মাঝখানেও পড়ুয়াদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাড়িতে তোলার জন্য। অনেক সময়ে এ জন্য বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু তা থেকেও শিক্ষা নিচ্ছেন না স্কুলগাড়ি মালিকেরা।

স্কুলগাড়ি মালিকদের পক্ষ থেকে অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সাধারণ ভাবে তাঁরা নিয়ম মেনেই চলেন। পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সুশোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ময়রা স্ট্রিটের ওই দিনের ঘটনার জন্য পুলিশই দায়ী। কাছেই পুলিশের একটি অভিযান চলছিল। সে জন্য গাড়িগুলি কিছু সময়ের জন্য আটকে গিয়েছিল। তাই ওই বিপত্তি।” সংগঠনের সম্পাদক অরূপম দত্ত বলেন, “স্কুলগাড়ির পার্কিং নিয়ে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে। অনেক স্কুলেই স্কুলগাড়ির পার্কিং এলাকায় অন্য অভিভাবকেরা গাড়ি রেখে দিচ্ছেন। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

রাজ্য সরকারের এক কর্তার কথায়, “শুধু স্কুলগাড়ি মালিকদের এ জন্য দায়ী করে লাভ নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও নজরদারি চালানো উচিত। কিন্তু সেটাই হয় না। পুলিশও বেশির ভাগ সময়েই ঠিকমতো নজরদারি চালায় না।” নজরদারি যে হচ্ছে না, তা স্বীকার করছেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তাও। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এ ব্যাপারে নির্দেশিকা রয়েছে। তাই নিয়ে স্কুলগাড়ি মালিকদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরও করা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং তাতে একটু ভাটা পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন