অদ্রিজা বিশ্বাস
বছর পনেরো-ষোলোর কিশোরিটির মাথার উপরে খাড়া দাঁড়িয়ে আছে একটি লরি। সেটাকে সরিয়ে মেয়েটিকে বার করার উপায় নেই। কারণ, দুর্ঘটনার পরেই লরি ফেলে পালিয়ে গিয়েছে চালক। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। প্রত্যক্ষদর্শীরা দূরে দাঁড়িয়ে বুঝে উঠতে পারছেন না, কী করবেন। বেশ খানিকটা পরে ঘোর ভাঙতে তাঁরাই কোনও রকমে ঠেলে সরালেন লরিটি। তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
শুক্রবার সকাল ৮টার দুর্ঘটনা। গরফা থানার কালিকাপুর রোডে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম অদ্রিজা বিশ্বাস। বাবার সঙ্গে রিকশায় চেপে স্কুলে যাচ্ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী অদ্রিজা। হঠাৎ সামনে থেকে আসা একটি লরি তাদের রিকশায় ধাক্কা মারে। রাস্তায় পড়ে যেতেই লরিটির চাকা পিষে দেয় ওই ছাত্রীর মাথা।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, অদ্রিজা লর্ড সিনহা রোডের একটি স্কুলে পড়ত। প্রি-টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। এ দিন ছিল তার জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষা। বাড়ির সামনে থেকেই বাবার সঙ্গে রিকশায় ওঠে সে। বাড়ি থেকে কিছুটা এগোতেই মালভর্তি লরিটি তাঁদের রিকশার সামনে চলে আসে। রিকশার সঙ্গে লরিটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। অদ্রিজা আর তার বাবা দেবাশিস বিশ্বাস ছিটকে দু’দিকে পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেয়েটি রাস্তায় পড়ে যেতেই লরিটি তার মাথার উপরে উঠে যায়। কিন্তু পিষে দেওয়ার পরেও গাড়িটি এগিয়ে যেতে পারেনি। কেন?
দেবাশিসবাবু জানান, দুর্ঘটনার পরেই রিকশাওয়ালা ও লরিচালক পালিয়ে যায়। অদ্রিজার দেহের উপরেই লরিটা দাঁড়িয়ে থাকে। চালক না-থাকায় সেটাকে সরানো যাচ্ছিল না। দুর্ঘটনার অভিঘাতে বিহ্বল হয়ে পড়েন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হতভম্ব ভাব কাটার পরে জনতাই ঠেলে লরিটাকে সরিয়ে দেয়। অদ্রিজাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পাড়ার রাস্তায় ভিড়ের ভিতর থেকে লরিচালক কী ভাবে পালিয়ে গেল, বুঝে উঠতে পারছেন না দেবাশিসবাবু। বারবার তিনি একটা কথাই বলছিলেন, “চালক থাকলে মেয়ের উপর থেকে লরিটাকে তখনই সরিয়ে নেওয়া যেত। তা হলে হয়তো ও বেঁচে যেত।” রিকশাওয়ালা বা লরিচালক, গভীর রাত পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।