পড়া পারেনি, ক্রিকেট ব্যাটে প্রহৃত ছাত্র

হস্টেলের ঘরে ঢুকে পড়া জিজ্ঞেস করেছিলেন শিক্ষক। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি ক্লাস সিক্সের ছেলে। অভিযোগ, তারই শাস্তি জুটল ভাঙা ক্রিকেট ব্যাটের মার। মাথা ফাটল ওই ছাত্রের। রাজারহাটের একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০১
Share:

মহম্মদ শাহিন মণ্ডল

হস্টেলের ঘরে ঢুকে পড়া জিজ্ঞেস করেছিলেন শিক্ষক। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি ক্লাস সিক্সের ছেলে। অভিযোগ, তারই শাস্তি জুটল ভাঙা ক্রিকেট ব্যাটের মার। মাথা ফাটল ওই ছাত্রের। রাজারহাটের একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলের ঘটনা।

Advertisement

আরও অভিযোগ, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি মহম্মদ শাহিন মণ্ডল নামে ওই ছাত্রকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তার মাথায় ৫টি সেলাই পড়ে। কিন্তু ছেলেটিকে হস্টেল থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। পরিবারকেও জানানো হয়নি। এমনকী আহত ছাত্রের মুখ বন্ধ রাখতে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ও দেখানো হয় বলে অভিযোগ। শুক্রবার গোটা ঘটনা জানিয়ে রাজারহাট থানায় মারধর, তথ্য গোপন করা, হুমকি দেওয়া ও ভয় দেখানোর অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। অভিযুক্ত শিক্ষক দেবজ্যোতি দাসকে সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরাও প্রথমে জানতেন না। জানা মাত্রই ওই শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশকে শাহিন জানিয়েছে, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ হস্টেলের ঘরে বসে পড়ছিল সে। তখনই হস্টেলের শিক্ষক দেবজ্যোতি তার ঘরে এসে পড়া ধরেন। অভিযোগ, শাহিন না পারায় উত্তেজিত হয়ে ওই শিক্ষক একটি ভাঙা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন। তার মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তড়িঘড়ি শাহিনকে বাগুইআটির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে ফের হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহিনের আরও অভিযোগ, পরদিন পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তাকে হস্টেল থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয়।

শাহিনের বাবা আব্দুর রজ্জাক মোল্লার অভিযোগ, গোটা ঘটনা সম্পর্কে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কিছুই জানাননি। শাহিন বুধবার প্রথমে তার এক সহপাঠীকে ঘটনাটি জানায়। সেই সহপাঠী তার মাকে জানালে তাঁরাই শাহিনের বাড়িতে খবর দেন। বাড়ির লোকেরা বৃহস্পতিবার হস্টেলে গিয়ে দেখেন শাহিনের মাথায় ব্যান্ডেজ। জিজ্ঞাসা করলে শাহিন এবং হস্টেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সে শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিল। এর পরেই তাকে দেগঙ্গায় বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পরিবার।

শাহিনের মা সেলিমা বিবি জানান, ছেলের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাত দেখে চাপাচাপি করতেই সে সব কিছু খুলে বলে। জানায়, মারধরের ঘটনা কাউকে বললে স্যার ‘মেরে ফেলবে’ বলেছে। সেই ভয়েই সে শৌচাগারে পড়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। স্তম্ভিত বাবা-মা শুক্রবার থানায় অভিযোগ করেন।

এ দিন শাহিনের পরিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষমাও চান বলে দাবি শাহিনের পরিজনেদের। এক আত্মীয় নাসির হোসেনের অভিযোগ, ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে মিটমাট করার প্রস্তাব দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁরা মানেননি। তাঁরা ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবি তুলেছেন। পরিজনেরা জানান, শাহিন যে পরিমাণ আতঙ্কে রয়েছে, তাতে তাকে আর ওই স্কুলে পাঠানো হবে না। অন্য কোথাও ভর্তি করার কথা ভাবছেন তাঁরা।

রাজারহাটের ওই স্কুলটির কর্তৃপক্ষের তরফে অমিত শেঠি মণ্ডল বলেন, ‘‘জানার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’’ কিন্তু সোমবার শাহিনের আহত হওয়ার খবর কেন সময়ে হস্টেল থেকে জানতে পারলেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ? তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি মানতে নারাজ শাহিনের পরিবার। তার বাবা বলেন, ‘‘১০০ মিটারের মধ্যে হস্টেল আর স্কুল। অথচ ঘটনা জানতেই এত দিন লেগে গেল। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটা ধামাচাপা দিতে চাইছেন।’’

বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন তিনি এ কাজ করলেন, সে ব্যাপারে জেরা চলছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ধৃত শিক্ষক জানিয়েছেন, উত্তেজনার বশেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। পরে ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গিয়ে ঘটনাটি গোপন করেছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন