ভেঙে দেওয়া সেই স্কুল গড়ে দেব, ঘোষণা মমতার

রাজারহাটে যে ভাবে স্কুল ভেঙে দিয়ে বহুতল তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, তার কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রোমোটারের এ ধরনের কাজ যে তাঁর সরকার বরদাস্ত করবে না, তা-ও সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

এ ভাবেই শুরু হয়েছে ক্লাস। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

রাজারহাটে যে ভাবে স্কুল ভেঙে দিয়ে বহুতল তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, তার কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রোমোটারের এ ধরনের কাজ যে তাঁর সরকার বরদাস্ত করবে না, তা-ও সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘লোভের একটা সীমা থাকা উচিত। একটা ইস্কুল ভেঙে দিয়েছে। ওখানে বাড়ি করবে। ইস্কুল ভেঙে বাড়ি হয় কখনও! এত কীসের লোভ!’’

Advertisement

রাজারহাটের দশদ্রোণে লীলাবতী মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন নামের একটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন স্কুল ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত শনিবার এলাকায় ধুন্ধুমার বাধে। স্কুলের পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে দফায় দফায় রাজারহাট রোড অবরোধ করেন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। শেষমেশ বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রোমোটার মিজানুর রহমানকে ধরে পুলিশ।

এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে কৃতী খেলোয়াড়দের পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানে ‘ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ রাজনীতির সমালোচনা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যেই ওই স্কুলের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। এ সব ঘটনা যে কোনও অবস্থাতেই বরদাস্ত করা হবে না, তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন কয়েক দিন পুলিশ চালাচ্ছে, ওই ইস্কুল স্কুল দফতর তৈরি করে দেবে। এ সব কাজ বরদাস্ত করা যাবে না।’’

Advertisement

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ এবং বিধাননগর পুরসভা যৌথ ভাবে ত্রিপল খাটিয়ে স্কুলে পঠনপাঠনের কাজ শুরু করেছে। স্কুলশিক্ষা দফতর স্কুলের নতুন ভবন তৈরি না করা পর্যন্ত এ ভাবে প্রশাসন স্কুলের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়, তার দেখভাল করবে। এ দিন অবশ্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়ে দেন, স্থানীয় সাংসদ তহবিলের অর্থ থেকে ওই স্কুল ফের গড়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন:

যুবক ‘খুনে’ ধৃত সেই যুবতী

স্বভাবতই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন আশ্বাসবাণী পাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষও খানিকটা সাহস পেয়েছেন। রবিবারই তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন পুলিশ তলে তলে অভিযুক্তদের সাহায্য করছে। এ দিন সুর চড়িয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই এই জমি তাঁরা ছাড়বেন না। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই জায়গা ছাড়ার প্রশ্ন নেই। যদি সরকার বা পুরসভা স্কুল গড়ে দেয়, তবে প্রোমোটারের জমি ফেরত দিয়ে দেব।’’

পুলিশি জেরায় মিজানুর দাবি করেছেন, স্কুলবাড়িটি তিনি কিনে নিয়েছিলেন। তবে বাড়ির দখল নেওয়ার জন্য স্কুলকে আদালতের নোটিস দিতে হতো। যা তিনি করেননি। বরং রাতে গিয়ে বাড়িটি ভেঙে দিয়েছেন। মিজানুর যে স্কুল ও ভাড়াটে সমেত বাড়িটি কিনেছিলেন, শনিবারই তা জানিয়েছিলেন বাড়িটির প্রাক্তন মালিক আবুল হাসান ও মাজিদা খাতুন। আবার প্রোমোটার অন্য জায়গায় স্কুল তৈরির জমি কিনতে যে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন, তা স্কুল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন।

সরকার যে স্কুল ভাঙার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, রবিবারই তার ইঙ্গিত দেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। তিনি জানান, কোনও সম্পত্তি কেউ কিনলেও সেটি ভাঙার ক্ষেত্রে পুর নিগমের অনুমতি বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। রবিবারই স্কুলের ছাদের ভাঙা অংশে ত্রিপল আটকে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার সকালে সেই ত্রিপল আটকানো ছাদের নীচেই নার্সারি ও প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস হয়েছে। বেলায় পুর-ইঞ্জিনিয়াররা বাড়িটির কাঠামো পরীক্ষা করতে যান। প্রধান শিক্ষক কৌশিকবাবু জানান, মঙ্গলবার অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করার পরেই কবে থেকে পুরোদস্তুর স্কুল চালু করা হবে, তা ঠিক করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন