মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে কী পোশাক, মাথাব্যথা নেই স্কুলের

রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গত বছর নিরাপত্তা-কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। ওই কমিটির উপরেই ডেঙ্গি মোকাবিলার সব দায়িত্ব থাকার কথা। কিছু স্কুল কমিটি তৈরির পথে হেঁটেছে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০২:২৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

চলতি বছরে ধীরে ধীরে প্রকোপ বাড়ছে ডেঙ্গির। ইতিমধ্যে কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। মশাবাহিত এই রোগের মোকাবিলায় স্কুলপড়ুয়াদের ফুলপ্যান্ট-ফুলশার্ট পরার পরামর্শ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এ বছর নতুন করে সেই পরামর্শ না আসায় বহু স্কুলেই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শহরের কিছু স্কুল পরিচ্ছন্নতা এবং পোশাকের উপরে নজর দিলেও একটা বড় অংশ সে দিক থেকে পিছিয়ে। সম্প্রতি সাউথ পয়েন্টের পড়ুয়া আরুষ দত্তের মৃত্যুর পরে ফের সামনে এসেছে এই প্রশ্ন। আরুষের পরিবারের অভিযোগ, মশাবাহী রোগ প্রতিরোধে ঘাটতি রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের। মশার দাপট বাড়লেও স্কুলে ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরে যাওয়া নিষেধ। শহরের অধিকাংশ স্কুল অবশ্য বিষয়টি বিবেচনার ভার অভিভাবকদের উপরে ছেড়েছে।

Advertisement

রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গত বছর নিরাপত্তা-কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। ওই কমিটির উপরেই ডেঙ্গি মোকাবিলার সব দায়িত্ব থাকার কথা। কিছু স্কুল কমিটি তৈরির পথে হেঁটেছে। তেমনই একটি স্কুল যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য জানান, ওই কমিটি সব ব্যবস্থা নেয়। পাশাপাশি, মশাবাহী রোগ প্রতিরোধে পড়ুয়াদের নিয়েও কমিটি গড়া হয়েছে।

কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ মানা হচ্ছে কি? পরিমলবাবু জানান, তাঁরা সেই পরামর্শমতো কাজ করেন। কিন্তু এ বছর নতুন করে নির্দেশিকা আসেনি। তাঁর মতে, ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরার কথা পড়ুয়াদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। কারণ নতুন করে সন্তানদের জন্য পোশাক কিনতে বললে অভিভাবকেরা তা মানবেন কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত বছর তাঁদের বলা হয়েছিল, বর্ষায় পড়ুয়াদের ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরতে হবে। এ বছরও সে কথা বলা হয়েছে মাত্র। একই ভাবে বিষয়টি অভিভাবকদের উপরেই ছাড়তে চান মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস কর্তৃপক্ষ। প্রিন্সিপাল দময়ন্তী মুখোপাধ্যায় জানান, অভিভাবকদের বলা থাকে, পড়ুয়া চাইলে ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরে আসতেই পারে। কিন্তু, ফুলপ্যান্ট-শার্ট বাধ্যতামূলক নয়। ক্যালকাটা বয়েজের প্রিন্সিপাল রাজা ম্যাকগি জানান, স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখতে তাঁদের সঙ্গে পেস্ট কন্ট্রোল অব ইন্ডিয়ার চুক্তি রয়েছে। সংস্থার কর্মীরা নিয়মিত স্কুল চত্বর পরিষ্কার করেন। পড়ুয়াদের ফুল প্যান্ট-শার্ট পরার নির্দেশ দেওয়া থাকে।

Advertisement

বরাহনগরের সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি ছেড়েছেন অভিভাবক ও স্থানীয় পুরসভার উপরে। প্রিন্সিপাল নবারুণ দে জানান, পুরসভা থেকে সতর্ক করা হলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হয়। তা ছাড়া, স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তই হাফপ্যান্ট। তার উপরের ক্লাসে ফুলপ্যান্ট। ফলে পৃথক নির্দেশিকা থাকে না। একই বক্তব্য হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাসের। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই পছন্দ মতো হাফ বা ফুল প্যান্ট পরতে পারে। সেখানে বিধিনিষেধ নেই।’’ গার্ডেনরিচ নুটবিহারী দাস গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সুরক্ষিত থাকার জন্য ছাত্রীরা ফুল মোজা পরে। স্কুল চত্বরও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।’’

শিক্ষামহলের বক্তব্য, বিতর্ক এড়াতে স্কুল কর্তৃপক্ষ পোশাকের বিষয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। ডেঙ্গি রোধে কেউ ফুলপ্যান্ট-শার্ট পরলে তাঁরা বিরোধিতা করবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন