বন্ধ কন্টেনারে দস্তা হয়ে গেল বালি

ছিল দস্তা, হয়ে গেল বালি! দূরত্ব হিসেবে মাত্র ২৫ কিলোমিটার। তার মধ্যেই সিল বন্ধ কন্টেনারে দস্তার নিরেট বাট হয়ে গেল বালি।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০১:০৯
Share:

ছিল দস্তা, হয়ে গেল বালি!

Advertisement

দূরত্ব হিসেবে মাত্র ২৫ কিলোমিটার। তার মধ্যেই সিল বন্ধ কন্টেনারে দস্তার নিরেট বাট হয়ে গেল বালি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রিটের একটি বেসরকারি সংস্থা ইথিওপিয়ায় প্রায় ৫০ টন দস্তার নিরেট বাট সরবরাহের দায়িত্ব পায়। সেই মতো ওই সংস্থার তরফে শুল্ক দফতরের অনুমোদিত একটি বেসরকারি ক্লিয়ারিং সংস্থাকে ওই মালটি ইথিওপিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যারা একটি পরিবহণ সংস্থাকে ওই দস্তার বাট হাওড়ার রানিহাটির গুদাম থেকে নেতাজি সুভাষ ডকে পৌঁছনোর ভার দেয়। কন্টেনার ছিল দু’টি। এক-একটিতে ২৫ মেট্রিক টন করে দস্তার বাট ছিল। এক-একটি কন্টেনারে থাকা দস্তার বাজার মূল্য অন্তত ৫৩ লক্ষ টাকা বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

লালবাজার জানাচ্ছে, ২৪ মে ওই দু’টি কন্টেনারে অনেকের সামনেই ২৫ মেট্রিক টন করে দস্তার বাট ভরে তা সিল করে দেওয়া হয়েছিল। দু’টি কন্টেনারই ২৪ মে রাতে রানিহাটি থেকে রওনা দেয় বন্দরের উদ্দেশে। একটি কন্টেনার পরদিন নির্দিষ্ট ডকে পৌঁছে গেলেও অন্যটি পৌঁছোয় ২৭ মে। দেরিতে আসা কন্টেনারের সিল কিন্তু অক্ষতই ছিল। তবুও ওই কন্টেনারটি আসতে কেন দেরি হল, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। যে সংস্থাটি এই মাল সরবরাহের বরাত পেয়েছিল, তাঁদের চাপাচাপিতেই এই রফতানির সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের সামনে কন্টেনার খোলা হয় ৩০ মে। তদন্তকারীরা জানান, কন্টেনার খুলে দেখা যায়, ৫৩ লক্ষ টাকার দস্তার বাট উধাও। কন্টেনারে ভর্তি বালি। পুলিশ জানায়, দস্তা নামিয়ে এমন ভাবে বালি ভরে দেওয়া হয়েছে যাতে বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। একটি কন্টেনারে বালি মেলায়, খোলা হয় অন্যটিও। সেটিতে অবশ্য নিরেট দস্তার বাটই ছিল।

মাল সরবরাহকারী সংস্থার তরফে সৌম্যদীপ পাল ১ জুন মাল পৌঁছনোর দায়িত্বে থাকা ক্লিয়ারিং সংস্থা এবং ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির বিরুদ্ধে পশ্চিম বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই রহস্যজনক ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু কে বা কারা দস্তার বাটের জায়গায় বালি রেখে দিল, তাদের কারও সন্ধান এখনও মেলেনি। হদিস মেলেনি চুরি যাওয়া ২৫ মেট্রিক টন দস্তার বাটেরও। লালবাজার জানাচ্ছে, বন্ধ কন্টেনার থেকে মাল উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্দর এলাকায় নতুন নয়। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করার পরে গত কয়েক মাস ধরে ওই ধরনের চুরি বন্ধ ছিল। নতুন করে তা শুরু হওয়ায় চিন্তিত পুলিশকর্তারা।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানাচ্ছে, রানিহাটি থেকে কলকাতায় ঢোকার আগে কোনও জায়গায় ওই কন্টেনার থেকে মাল নামিয়ে নেওয়া হয়েছে। যাতে ওই কন্টেনারের চালক থেকে শুরু করে পরিবহণ সংস্থার কোনও কর্মীও জড়িত থাকতে পারেন বলে অনুমান পুলিশের। তদন্তকারীদের মতে, যে ভাবে শুল্ক দফতরের সিল ভেঙে ফের সিল করা হয়েছে, তা থেকে বোঝাই যাচ্ছে কন্টেনার চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, দ্বিতীয় কন্টেনারটি নেতাজি সুভাষ ডকে পৌঁছনোর পর থেকেই ওই গাড়ির চালক পলাতক। পরিবহণ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী-সহ চালকের খোঁজ শুরু হয়েছে। তাঁদের খোঁজ মিললেই পুরো রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে বলে ধারণা পুলিশের।

অঙ্কন: অশোক মল্লিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন