Ayodhya Ram Temple Inauguration

রাম বন্দনার ধুম হাসপাতালে, ধাক্কা চিকিৎসা পরিষেবায়

এ দিন সকাল থেকেই রাম পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হাসপাতালের স্থায়ী মন্দিরগুলিতে। সেখানেই এনে রাখা হয়েছিল রামের ছবি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৪
Share:

সল্টলেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে রাম পুজো। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

অযোধ্যায় সোমবার রামমন্দির উদ্বোধনের খানিকটা প্রভাব এসে পড়ল রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে। বি আর সিংহ হাসপাতাল এবং জোকার ইএসআই হাসপাতালে সকাল থেকেই বহির্বিভাগ বন্ধ থাকার অভিযোগ উঠল। রাম পুজোর প্রভাব দেখা গেল শহরের কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও। তবে, রাজ্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে এর তেমন কোনও প্রভাব চোখে পড়েনি। সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি অংশের বক্তব্য, কারও কারও মনে ইচ্ছে থাকলেও পরবর্তী সময়ে কোপে পড়ার আশঙ্কায় পুজো-অর্চনা থেকে এ দিন বিরতই থাকতে হয়েছে।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই রাম পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হাসপাতালের স্থায়ী মন্দিরগুলিতে। সেখানেই এনে রাখা হয়েছিল রামের ছবি। তাতেই মালা পরিয়ে, রীতিমতো পুরোহিত ডেকে পুজোর
আয়োজন করা হয়েছিল। পুজোর শেষে কোথাও মিষ্টি বা কুচো ফল, বাতাসা, নারকেল কুচি বিলি করা হয়। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সেই প্রসাদ পেয়েছেন মন্দিরে পুজো দেখতে আসা রোগীর পরিজনেরাও। এই কর্মকাণ্ড ঘিরে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, রামের পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসকদের অনেকেই ঠিক সময়ে বহির্বিভাগে বা অন্তর্বিভাগে হাজির হননি। শুধু তা-ই নয়, দেরি হয়েছে অস্ত্রোপচারেও। যদিও খানিকটা প্রত্যাশিত ভাবেই সকলে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে সেটিকে ‘অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছেন।

যেমন, এ দিন সকাল থেকেই অভিযোগ উঠেছে যে, জোকার ইএসআই হাসপাতালের বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ থাকায় রোগীর চাপ গিয়ে পড়েছে জরুরি বিভাগে। সেখানে বন্ধ রাখা হয়েছিল প্রশাসনিক কাজকর্মও। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় কেশকর। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মেনে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত হাসপাতালের অফিস বন্ধ ছিল। কিন্তু বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে
পরিষেবা সচল ছিল। যে সমস্ত চিকিৎসক, পড়ুয়া ও কর্মী পুজোর আয়োজন করেছিলেন, তাঁরা ঠিক সময়ে রোগীদের পরিষেবাও দিয়েছেন।’’

Advertisement

এ দিকে, রেল বোর্ডের নির্দেশে সমস্ত বহির্বিভাগের পরিষেবা এ দিন দুপুর আড়াইটে থেকে শুরু হওয়ার বিজ্ঞপ্তি সকালেই শিয়ালদহে পূর্ব রেলের সুপার স্পেশ্যালিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বি আর সিংহ হাসপাতালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, জেলা থেকে ডাক্তার দেখাতে আসা অনেক রোগীকেই পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কেউ আবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘রামমন্দির উদ্বোধনের জন্য এ ভাবে হাসপাতাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’

সল্টলেকের আমরি হাসপাতালের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের ছোট্ট মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তির পাশে সকালেই রামের ছবি এনে রাখা হয়েছিল। লিফ্‌টে ওঠার রাস্তার পাশে থাকা ওই মন্দিরের ছোট পরিসরের মধ্যেই পুজো সারলেন পুরোহিত। সেই সময়ে মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে দেখা গেল চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায়কে। বিজেপির চিকিৎসক সেলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক শারদ্বত এ দিন পুজো উপলক্ষে পরেছিলেন পাজামা-পাঞ্জাবি ও জহর কোট। পুজো শেষে ওই পোশাকেই রোগী দেখলেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘কোনও রকম
পরিষেবা বন্ধ না রেখে অন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে পুজো হল। সনাতন ধর্ম আমাদের সকল ধর্মকে নিয়ে চলতে শিখিয়েছে। তা হলে রামের পুজোয় আপত্তি কোথায়?’’

অ্যাপোলো হাসপাতালের গণেশ মন্দিরেই এ দিন আয়োজন করা হয়েছিল রামের পুজোর। জামা-প্যান্টের উপরে গেরুয়া রঙের জহর কোট পরে সেখানে হাজির ছিলেন পুজোর মুখ্য আয়োজক, চিকিৎসক তন্ময় মুখোপাধ্যায়। ১২টা ১০ মিনিটে পুজো শুরুর পরে ঘট হাতে রামের ছবি প্রদক্ষিণ করে তা পুজোর জায়গায় এনে বসান তন্ময়। আবার পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ করার সময়ে তিনি-সহ আরও অনেকেই বসে থাকলেন রামের ছবির সামনে। তন্ময় বলেন, ‘‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যাঁরা যেমন সময় পেয়েছেন, সেই মতো এসে রামের পুজোয় অংশ নিয়েছেন। তা বলে রোগী পরিষেবা কোনও ভাবেই ব্যাহত হয়নি।’’

মেডিকা হাসপাতালের মন্দিরেও এ দিন রামের পুজো হয় বলে খবর। উৎসাহী কিছু কর্মী-রোগীর পরিজনেরা মিলে সেটির আয়োজন করলেও তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল বলেই দাবি যুগ্ম অধিকর্তা অয়নাভ দেবগুপ্তের। তিনি বলেন, ‘‘ওই মন্দিরে জগন্নাথের পুজো হয়। অন্য কিছু আমার জানা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন