সাত বছর পার, চার্জ গঠনও হয়নি

আমরি হাসপাতালের বিপর্যয়ে বহু টালবাহানার পরে সবে বিচার শুরু হয়েছে। তারও দেড় বছর আগে স্টিফেন কোর্টের আগুনে নিহতদের পরিজনদের অবস্থা আরও করুণ।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

আমরি হাসপাতালের বিপর্যয়ে বহু টালবাহানার পরে সবে বিচার শুরু হয়েছে। তারও দেড় বছর আগে স্টিফেন কোর্টের আগুনে নিহতদের পরিজনদের অবস্থা আরও করুণ।

Advertisement

সদ্যযুবা সৌরভ বারিকের বাবা শৈলেন বারিক, পম্পা চট্টোপাধ্যায়ের মা-বাবা পিকু-দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় কিংবা ভাগ্যশ্রী ঢালির মা প্রভাতীদেবীর মতো অনেকেই বিচারের আশায় তাকিয়ে থেকে থেকে ক্লান্ত। আজ, বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চের স্টিফেন কোর্ট-কাণ্ডের সাত বছর পার হয়েছে। বুধবার শৈলেনবাবু, পিকুদেবীরা বলছিলেন, ওই বাড়িটায় গিয়ে মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে বছর-বছর মোমবাতি জ্বালতে আর ভাল লাগে না!

নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কুড়ি-পঁচিশের তরতাজা। পার্ক স্ট্রিটের প্রাসাদোপম বহুতলটিতে বেসরকারি সংস্থার অফিসে জীবনের প্রথম চাকরিতে ঢুকেছিলেন। সাত বছর আগের ২৩ মার্চ সব স্বপ্ন ছাই। এত দিনে রাজ্য সরকারের দু’লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণটুকু ছাড়া কিছুই পাননি আত্মীয়েরা।

Advertisement

উল্টো দিকে, মূল অভিযুক্ত বহুতলটির লিজপ্রাপ্ত সংস্থার কর্তা সঞ্জয় বাগারিয়া-সহ বাকি জনা ছয়েক সকলেই এখন জামিনে রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে গা-ঢাকা দেওয়া সঞ্জয়কে অগ্নিকাণ্ডের বেশ কয়েক মাস বাদে ধরে এনেছিল কলকাতা পুলিশ। সাকুল্যে ৪৩ দিন জেল খেটে তিনি সুপ্রিম কোর্টের জামিন নিয়ে আসেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো ও দমকল আইনে গাফিলতির মামলা হয়েছে। মামলার বিচার দূরে থাক, আদালতে এখনও পর্যন্ত চার্জ গঠনটুকুও হয়নি।

এত সময় কেন লাগছে বিচারের প্রক্রিয়ায়? লালবাজারের এক কর্তা বলেন, সময় মতো চার্জশিট দেওয়া হলেও অভিযুক্তদের তরফে হাইকোর্টে কিছু আবেদনের নিষ্পত্তি হচ্ছিল। এপ্রিলের গোড়ায় ফের শুনানি হবে। আর নিহত তরুণী মৌমিতা ঘোষের মা মৌসুমিদেবী বুধবার দুপুরে বলছিলেন, ‘‘এই নিয়ে কথা বলতে আর ভাল লাগে না।’’ অঙ্কুশ ঘোষের মা-বাবা অঞ্জু এবং অনিল ঘোষ ছেলের পছন্দের খাবার মুখে তুলতে পারেন না এখনও। ভাগ্যশ্রী ঢালির মা প্রভাতী ঢালির স্বামীও বহু দিন গত হয়েছেন। এখন বেঙ্গালুরুবাসী প্রভাতীদেবী বলছিলেন, ‘‘জানি না, দোষীদের কবে শাস্তি হবে!’’

আগুনে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বহুতলটির দু’নম্বর ব্লকের ভিতরে এখনও কারও থাকা শুরু হয়নি। বাকি তিনটি ব্লকে নিজেদের অ্যাসোসিয়েশন গড়ে বহু কষ্টে সারিয়ে তুলেছেন বাসিন্দারা। বহুতল-চত্বরে এখন নতুন রাস্তা, দমকলের সুপারিশ মেনে জলাধার ইত্যাদি বসছে। তবে শতকরা ৩০ ভাগ ফ্ল্যাট এখনও ফাঁকা। আলাদা ফ্ল্যাটে বিদ্যুতের বন্দোবস্ত এখনও হয়নি। বাসিন্দাদের তরফে দেবাশিস গুহ নিয়োগী বলেন, ‘‘দমকলের সুপারিশ মেনে সুরক্ষা ব্যবস্থা হয়েছে। শীঘ্রই আলাদা আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করব। নিজেদের বাড়িতে তো ফিরতে হবেই!’’

সাত বছর আগের দুঃস্বপ্নের ছায়া তবু এখনও পুরোটা মুছতে পারেনি স্টিফেন কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন