অবশেষে রহস্যভেদ

তালাবন্ধ পার্সেল ভ্যান থেকে গায়েব মালপত্র

ঠিক যেন ম্যাজিক! মালপত্র বোঝাই কামরার দরজা আটোসাঁটো বন্ধ। তালার উপরে লাগানো গালার সিল না ভাঙলে খোলার উপায় নেই। তবু তার ভিতর থেকেই বস্তা, বাক্স কেটে উধাও বেশ কিছু মালপত্র। এক দিন নয়, দিনের পর দিন এ ভাবেই বেশ কয়েকটি ট্রেনের বন্ধ পার্সেল ভ্যান থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছিল মালপত্র।

Advertisement

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

ঠিক যেন ম্যাজিক!

Advertisement

মালপত্র বোঝাই কামরার দরজা আটোসাঁটো বন্ধ। তালার উপরে লাগানো গালার সিল না ভাঙলে খোলার উপায় নেই। তবু তার ভিতর থেকেই বস্তা, বাক্স কেটে উধাও বেশ কিছু মালপত্র। এক দিন নয়, দিনের পর দিন এ ভাবেই বেশ কয়েকটি ট্রেনের বন্ধ পার্সেল ভ্যান থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছিল মালপত্র।

কিন্তু বন্ধ কামরায় রাখা মালপত্র উধাও হচ্ছে কী ভাবে? রীতিমতো চিন্তায় পড়েছিলেন রেল আধিকারিকেরা এবং আরপিএফ অফিসারেরা। শেষমেশ দেখা গেল, বন্ধ কামরার ভিতরের মালপত্র হাপিস হয়ে যাওয়াটা জাদু নয়। বরং একদল সিঁধেল চোরের কাণ্ড। যারা দলবেঁধে বাছাই করা কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনে উঠে শৌচাগারের সিলিং কেটে লাগোয়া মালপত্রের কামরায় ঢুকে যেত। বন্ধ কামরা থেকে দামি মালপত্র লুঠ করে চম্পটও দিত একই পথে।

Advertisement

প্রায় দেড় বছর ধরে হাওড়া-আসানসোল ডিভিশনে এই সিঁধেল চোরেরা দাপিয়ে বেড়ালেও কোনও মতেই তাদের নাগাল পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা। শেষে দিন কয়েক আগে দলের এক শাগরেদ রাজা কর-কে ধরে ফেলেন বালি আরপিএফের অফিসারেরা।

তাকে জেরা করে জানা যায়, হুগলি রেল স্টেশন লাগোয়া সন্ধ্যা লজে মজুত রয়েছে লুঠের সব মালপত্র। বাকি সিঁধেল চোরেরাও গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে সেখানেই।

এর পরেই বালি আরপিএফের ইনস্পেক্টর রাজকুমারের নেতৃত্বে অফিসারদের একটি দল ওই লজে হানা দিয়ে সাত জনকে বমাল পাকড়াও করে ফেলেন। কিন্তু পালিয়ে যায় দলের মূল পাণ্ডা বাদল খান। শেষে বুধবার রাতে সিউড়ির গোপালপুর থেকে তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

বালি আরপিএফের ডেপুটি সিনিয়র কমান্ড্যান্ট অমরেশ কুমার বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই এই দলটির খোঁজ চলছিল। বিভিন্ন জায়গা ঢুঁড়েও কিছুতেই নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষে জালে পুরো দলটাই ধরা পড়েছে।’’

অমরেশবাবু জানান, বছর দেড়েক আগে অনন্যা এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পরেই শিয়ালদহ ডিভিশনের রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে একটি সিল করা প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কে বা কারা পার্সেল ভ্যানে থাকা ওই প্যাকেট প্ল্যাটফর্মে ছুড়ে ফেলল, তা জানা সম্ভব হয়নি। আরপিএফ সূত্রের খবর, তদন্তে জানা যায় দুর্গাপুর, আসানসোল থেকে মূলত অজমেঢ় এক্সপ্রেস, বাগ এক্সপ্রেস, অমৃতসর মেল, অনন্যা এক্সপ্রেস, বিভূতি এক্সপ্রেসের সাধারণ কামরায় উঠতো এই চোরের দল। ওই সমস্ত ট্রেনের সাধারণ কামরার লাগোয়া থাকে পার্সেল ভ্যান। তাই সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে মিশে আগে পরিবেশটা বুঝে নিয়ে তার পরে শুরু হত সিঁধেল চোরেদের ‘অপারেশন’।

কী ভাবে হতো চুরি?

আরপিএফ সুত্রে জানা গিয়েছে, ন’জনের কয়েক জন বিভিন্ন দিকে নজরদারি চালানোর সময়ে দু’তিন জন শৌচাগারে ঢুকে ভিতর থেকে ছিটকিনি বন্ধ করে দিত। দরজার বাইরে আরও এক বা দু’জন অন্য যাত্রীদের মতো দাঁড়িয়ে নজর রাখত সব কিছুর উপরে। শৌচাগারে ঢোকা চোরেরা ফল্‌স সিলিংয়ের কিছুটা কেটে সেখানে উঠে পড়ত। তার পরে শৌচাগার ও পার্সেল কামরার মাঝের প্লাইউডের দেওয়াল কেটে নেমে পড়ত ভিতরে। সেখান থেকে বস্তা কেটে শাড়ি, জুতো, বৈদ্যুতিন সামগ্রী বেশ কয়েকটি ব্যাগে ভরে নিয়ে ফের বাইরে পাচার করে দিত তারা। ন’জন চোরের প্রত্যেকেই একটি করে ব্যাগ হাতে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ত। তার পরে সুযোগ মতো প্রত্যেকে নেমে পড়ত আলাদা আলাদা স্টেশনে।

ট্রেনের ছাদ থেকে দেওয়াল, সর্বত্র সিঁধ কেটে এই চুরি স্তম্ভিত করে দিয়েছে আরপিএফ কর্তাদেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন