খাল সংস্কার হয়নি, মাসুল দিচ্ছে মানুষ

খাস কলকাতার জল কমলেও, চারপাশে এখনও হাবুডুবু অবস্থা। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও কোমর জলে ডুবে, যা মূলত সংযোজিত এলাকা। দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসি-র জলাধারগুলিতে পলি-সংস্কার না হওয়ার দিকেও আঙুল তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৯
Share:

জরুরি বৈঠকে সপারিষদ মেয়র। রবিবার রাতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

খাস কলকাতার জল কমলেও, চারপাশে এখনও হাবুডুবু অবস্থা। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও কোমর জলে ডুবে, যা মূলত সংযোজিত এলাকা।

Advertisement

দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত হওয়ার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসি-র জলাধারগুলিতে পলি-সংস্কার না হওয়ার দিকেও আঙুল তুলেছেন। একই ভাবে কলকাতার সংযোজিত পুর-ওয়ার্ডগুলির বানভাসি অবস্থার পিছনে খালগুলির সংস্কার না হওয়ার অভিযোগ ক্রমশ জোড়াল হচ্ছে। সংযোজিত এই এলাকাগুলির নিকাশির করুণ হাল নতুন নয় কলকাতা পুর-প্রশাসনের কাছে। সেখানে না আছে নিকাশিনালা, না আছে জল বার করার অন্য কোনও ব্যবস্থা। তবু বেড়েই চলেছে ‘শহর’। মূলত ভোটের রাজনীতির কারণেই ১৯৮৪-৮৫ সালে ১০১-১৪১ নম্বর ওয়ার্ডকে কলকাতা পুর-এলাকায় যুক্ত করে তৎকালীন বাম-প্রশাসন। পরে তৃণমূল আমলে যুক্ত হয় আরও তিনটি ওয়ার্ড। কিন্তু নিকাশি-ব্যবস্থার দিকে নজর নেই কারও। বর্তমান প্রশাসকদের অনেকেই আঙুল তুলেছেন বাম আমলের গাফিলতির দিকে। সে সময়েই যেহেতু সংযোজিত হয়েছিল অধিকাংশ অঞ্চল। কিন্তু বর্তমান তৃণমূল শাসিত পুর-বোর্ডও প্রথম ইনিংস শেষ করে দায়িত্বে ফিরেছে দ্বিতীয় বার। এত বছরেও ওই সব অঞ্চলের নিকাশি-ব্যবস্থার উন্নতিতে কোনও পদক্ষেপ হল না কেন? মেয়রের উত্তর, এই কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। পুরসভার হাতে তো তা নেই-ই, আপাতত অতটা ব্যয়ের ক্ষমতা নেই রাজ্যেরও। ফলে ভোগান্তি থেকে মুক্তির আশ্বাস এখনও পাচ্ছে না সংযোজিত অঞ্চলগুলি।

প্লাবিত এলাকাগুলির নিকাশি মূলত টালিনালা, মণিখাল, চড়িয়াল, বেগড় খাল, রেনিয়া, ইন্টারসেক্টিং খাল এবং কেওড়া পুকুরের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু এই খালগুলিতে যুগ যুগ ধরে পলি তোলা হয় না। নিয়মিত সেই কাজ হলে এমন পরিস্থিতি দেখতে হত না বলে মনে করে পুরসভারই একাংশ। তার উপরে বর্ষার সময়ে নদীগুলির জলসীমাও থাকে উপরের দিকে। ফলে চাপ বাড়ছে খালগুলির উপরে।

Advertisement

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পুরভবনেই সপারিষদ রবিবার রাতটি কাটান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। যোগ দেন পুরকমিশনার–সহ কয়েক জন পদস্থ আধিকারিক। পুরসভার ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির নেই। এ দিন মেয়রের এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। তার মধ্যেই দুপুরে শহরের পরিস্থিতি দেখতে এবং পুরকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পুরভবনে যান তিনি। গঙ্গার জল বাড়ছে খবর পেয়ে পরিস্থিতি দেখতে যান বাবুঘাটেও। পুরসভায় ফিরে তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই রাজ্যের বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। তাতেই গঙ্গার জল বাড়ছে। এর উপরে ঝাড়খণ্ড থেকে আরও ১ লক্ষ ২০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। তাতে শহরের বিপদ বাড়তে পারে।’’ পুরকমিশনার খলিল আহমেদ জানান, প্রতিটি বরোর চেয়ারম্যান এবং এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের নিজ নিজ বরো অফিসে থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য।

কী হাল বাকি কলকাতা পুর-এলাকার? মূল কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জমা জল কমলেও বাইপাস সংলগ্ন ১০৩, ১০৮, ১০৯, ১১০ ও বেহালার ১২৫ ও ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক এলাকা এ দিনও জলমগ্ন ছিল। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও বা কোমর পর্যন্ত। ওই এলাকার মানুষদের দিনভর চরম ভোগান্তি হয়েছে। তা স্বীকার করে মেয়র জানান, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা ভাল নয়। মুকুন্দপুর, নয়াবাদ, ভগৎ সিং কলোনি-সহ একাধিক এলাকায় জল জমে রয়েছে। পাম্প দিয়ে তা সরানোর চেষ্টা চলছে। জল জমে রয়েছে গড়িয়ার ব্রহ্মপুর এলাকাতেও। বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সে সংশ্লিষ্ট বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট নেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। তিনি জানান, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। এ দিকে বেহালার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিজেন মুখার্জি রোডেও জল জমতে দেখা যায়। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেই। মেয়রের ওয়ার্ডেও জল কেন? এর উত্তরে শোভনবাবু বলেন, ‘‘গত বৃষ্টিতে সারা শহরেই তো কমবেশি জল জমেছিল। আমার ওয়ার্ড তো কলকাতা পুর-এলাকার বাইরে নয়।’’ তাঁর দাবি, ওই রাস্তাটি নিচু এলাকায় হওয়ায় জল জমে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জলমগ্ন ১১৪, ১১৬, ১১৭, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১২৮, ১২৯ ও ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন