মহিলা বলেই যত জলঘোলা, নাচ-বিতর্কে তোপ শাহরুখের

পুলিশের উর্দি-টুপি পরে প্রকাশ্যে যাঁর নাচ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই মহিলা কনস্টেবলকে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। কিন্তু যাঁর সঙ্গে নাচতে তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন, সেই শাহরুখ খানই ফের বিতর্ক খুঁচিয়ে তুললেন। মঙ্গলবার শাহরুখ বলেন, “পুলিশের উর্দি-টুপি থাকাটা কোনও বিষয় নয়! সমালোচনার আসল কারণ হল, উর্দি পরে যিনি নাচছেন তিনি একজন মহিলা।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

পুলিশের উর্দি-টুপি পরে প্রকাশ্যে যাঁর নাচ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, সেই মহিলা কনস্টেবলকে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। কিন্তু যাঁর সঙ্গে নাচতে তিনি মঞ্চে উঠেছিলেন, সেই শাহরুখ খানই ফের বিতর্ক খুঁচিয়ে তুললেন।

Advertisement

মঙ্গলবার শাহরুখ বলেন, “পুলিশের উর্দি-টুপি থাকাটা কোনও বিষয় নয়! সমালোচনার আসল কারণ হল, উর্দি পরে যিনি নাচছেন তিনি একজন মহিলা।”

সরকারি অনুষ্ঠানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থের উপস্থিতিতে পুলিশের উর্দির এই ‘অমর্যাদা’র বিরুদ্ধে অবশ্য গোড়া থেকে সরব রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ-আমলামহল ও লালবাজারের পুলিশকর্মীদের একাংশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের কাছে পুলিশের উর্দির গাম্ভীর্য-মর্যাদার জায়গাটি গৌণ বলে সরব হয়েছে।

Advertisement

এ দিন মুম্বইয়ে একটি ফিল্মি প্রচার অনুষ্ঠানে শাহরুখ অবশ্য এ সব সমালোচনা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “উর্দি পরে একজন মহিলা নেচেছিলেন বলেই এত জলঘোলা! মেয়ে-পুরুষের এই তফাত করাটা অবান্তর এবং বিরক্তিকর! এ সব আলোচনারই যোগ্য নয়!” মেয়েদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের মধ্যেই কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ আছে।

অনুরাধা তলোয়ার যেমন বলছেন, “মেয়েদের নিয়ে আপত্তির বিষয়টি টেনে এনে আসল অন্যায়টাকে গুলিয়ে ফেলা হল। এটা নারী-পুরুষের ব্যপারই নয়!” রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় কিছুটা শাহরুখের সুরে কথা বললেও নাট্যকর্মী ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় বা অধ্যাপক মীরাতুন নাহার তাঁর সঙ্গে সহমত নন।

কনস্টেবল মেয়েটির নাচ নিয়ে আপত্তিতে সুনন্দা সঙ্কীর্ণ মনের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু ঊষার প্রশ্ন, “রাস্তার মাঝখানে কোনও পুরুষ ট্রাফিক সার্জেন্ট যদি ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় র্যাপ গানের সঙ্গে টুইস্ট করতে শুরু করেন, তা হলে কি বিতর্ক হবে না? নাকি তখন নৃত্যরত সার্জেন্ট পুরুষ বলে সবাই চুপ করে থাকবেন?”

উর্দি পরা পুলিশকর্মীর নাচ নিয়ে আপত্তির মূল জায়গাটাই শাহরুখ দেখতে পাননি বলে মনে করেন মীরাতুন নাহারও। তাঁর কথায়, “একজন পুরুষ এ ভাবে নাচলেও একই বিতর্ক হতো!” নারী আন্দোলনের আর এক কর্মী শাশ্বতী ঘোষ অবশ্য বলেন, “ওই কনস্টেবল মহিলা বলে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছে!” তবে পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়মের খুঁটিনাটি তাঁর জানা নেই বলে শাশ্বতী দাবি করেছেন।

শাহরুখ অবশ্য এ দিন এই বিতর্কে তাঁর ‘নারী-বিদ্বেষ’-সংক্রান্ত বক্তব্য পেশ করতে অন্য যুক্তি সাজিয়েছেন। তাঁর দাবি, এর আগে মুম্বই পুলিশের একটি অনুষ্ঠানেও এক পুরুষ পুলিশকর্মী উর্দি পরেই তাঁর সঙ্গে মঞ্চে উঠেছিলেন। ‘বীর জারা’ ছবির শু্যটিংয়ের সময়েও পাক-সীমান্তে জওয়ানদের সঙ্গে নাচাগানা করেছিলেন তিনি।

সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে আনায় কিছুটা বিস্মিত সেনাকর্তারা। প্রাক্তন সেনাকর্তা জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, “সেনাবাহিনীকে উৎসাহ দিতে তারকারা মাঝেমধ্যে অনুষ্ঠান করতেই পারেন। কিন্তু নেতাজি ইন্ডোরে যা হয়েছে, তা কখনওই সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে ঘটতে দেখিনি!” সেনাকর্মীদের সঙ্গে চিত্রতারকারা বিনোদনের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তার প্রতিটি পদক্ষেপই আগে থেকে ভেবে-চিন্তে ঠিক হয় বলে জানিয়েছেন দিল্লির সেনা-মুখপাত্র কর্নেল রোহন আনন্দও। তাঁর কথায়, “সব সময়েই আমরা দেখি, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি যাতে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়।” নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মঞ্চে ফিল্মি কায়দায় শাহরুখ ও কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল শম্পা হালদারের নাচের ছবি দেখেছেন সেনা-মুখপাত্র। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর কোনও জওয়ানের ক্ষেত্রে আমরা কখনওই এমনটা ঘটতে দিতাম না।” জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীরও মন্তব্য, “পুলিশ নিজেরাই পুলিশের উর্দির মর্যাদার কথা ভুলে গিয়েছিল।”

যাঁকে নাচতে ডাকা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই শম্পা হালদার অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে আগেই জানিয়েছেন, এ সব বিতর্কে তিনি কান দিচ্ছেন না। তাঁর সঙ্গে এ দিন ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মোবাইল বন্ধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন