সর্বস্বান্ত: এ ভাবেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বাড়ি। শুক্রবার, সরশুনায়। —নিজস্ব চিত্র।
আচমকা আগুনে পুড়ে গিয়েছিল তিনটি ঘরই। রক্ষা পায়নি আসবাবপত্র, জামা-কাপড়, টাকাপয়সা এমনকী পোষ্যরাও। মাত্র আধ ঘণ্টার আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বাড়ির ১১ জন বাসিন্দা। ঠান্ডায় তাঁদের আশ্রয় দিতে একজোট হল পাড়া। পড়শিরাই যে যাঁর সাধ্য মতো পোশাক জোগাড় করলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর ব্যবস্থা করলেন খাবারের। পরিবারটির থাকার ব্যবস্থা হল স্থানীয় ক্লাবে।
শুক্রবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে পর্ণশ্রীর সরশুনায়। দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ও প্রতিবেশীরা যত ক্ষণে আগুন আয়ত্তে আনেন, তত ক্ষণে তিনটি ঘরের পাশাপাশি পুড়ে গিয়েছে বাড়ির পোষ্য একটি পাখি ও চারটি খরগোশও। তবে পরিবারের সদস্য এক বৃদ্ধাকে সময় মতো উদ্ধার করতে পারায় কেউ হতাহত হননি।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন পৌনে ১২টা নাগাদ প্রতিবেশী এক মহিলা তাঁর বাড়ির পাঁচিল লাগোয়া একটি ঘর থেকে আগুনের হল্কা বেরোতে দেখে পা়ড়ার অন্য লোকজনকে ডাকেন। তাঁরা ছুটে এসে দমকলে খবর দেন। নিজেরাও বালতি এনে জল ঢেলে আগুন নেভানোর কাজে হাত লাগান। কিন্তু টালির চাল আর ইটের গাঁথনি থাকায় মুহূর্তে ওই ঘর লাগোয়া পাশের দু’টি ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবেশীরা কোনও রকমে একটি ঘর থেকে বার করে আনেন পরিবারের বৃদ্ধা সদস্য যামিনী গায়েন (৮৫)-কে। ওই ঘরে ছিলেন যামিনীদেবী ও তাঁর মেয়ে মিঠু। অন্য ঘরের বাসিন্দারা কাজে গিয়েছিলেন। তাঁদের খবর দেওয়ার আগেই দাউদাউ করে সব কিছু জ্বলতে শুরু করে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমকল পৌঁছনোর আগেই তিনটি ঘরের অর্ধেক পুড়ে যায়। ঝলসে যায় ঘরে থাকা চারটি খরগোশ এবং পাখির খাঁচাও।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দিদির বাড়ি থেকে চলে আসেন বাড়ির ছোট মেয়ে পায়েল মান্না ও তাঁর স্বামী বাবু মান্না। পায়েল জানিয়েছেন, পরিবারে তাঁরা ছাড়াও থাকেন বাবা-মা, ঠাকুরমা যামিনীদেবী, পিসি মিঠু, পিসেমশাই ও তাঁদের দুই সন্তান। পায়েলের বাবা রিকশাচালক, মা বা়ড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। ওই দম্পতির অন্য দুই মেয়ে বিয়ের পরে অন্যত্র থাকেন। পায়েলের সাত ও দেড় বছরের দু’টি ছেলে আছে।
পায়েল বলেন, ‘‘সাধারণত কাজে গেলে ছেলে দু’টো বাড়িতেই থাকে। একটা ঘরে থাকে ঠাকুরমা আর পিসি। ভাগ্যিস আমি দিদির বাড়ি যাওয়ার সময়ে ছেলে দু’টোকে নিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির বাকিরাও কাজে চলে গিয়েছিল। বাচ্চা দু’টো বাড়ি থাকলে যে কী হত, ভাবলেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’ প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ছ’টি খরগোশের চারটি পুড়ে গেলেও বাকি দু’টি পাশের বাড়িতে চলে যাওয়ায় বেঁচে গিয়েছে। সে দু’টিকে আশ্রয় দিয়েছেন ওই বাড়ির বাসিন্দারাই।