সিএসটিসি

সরকারের টাকা ‘নেই’, পেনশন বাকি চার মাস

চার কোটির দিকে তাকিয়ে পাঁচ হাজার। টাকাটা এলে চার মাসের বকেয়া পেনশন পাবেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)-র ওই পাঁচ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অভিযোগ, দিনের পর দিন নিগমের দফতরে হত্যে দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না কিছুই।

Advertisement

অত্রি মিত্র ও সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০০:১৬
Share:

চার কোটির দিকে তাকিয়ে পাঁচ হাজার।

Advertisement

টাকাটা এলে চার মাসের বকেয়া পেনশন পাবেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (সিএসটিসি)-র ওই পাঁচ হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। অভিযোগ, দিনের পর দিন নিগমের দফতরে হত্যে দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না কিছুই। কারণ কর্তৃপক্ষের কাছেও সদুত্তর নেই। পরিবহণ কর্তাদের দাবি, নিয়মমাফিক প্রতি মাসেই পেনশনের জন্য টাকা চেয়ে অর্থ দফতরে ফাইল পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তাদের অনুমোদন না মেলায় পেনশন দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থ দফতরের টাকার অভাবের কারণ দেখালেও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরেই।

অর্থ দফতরের একাংশের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের কোষাগারে টান পড়েছে। সে কারণে সিএসটিসি-র কর্মীদের পেনশন দেওয়া যাচ্ছে না। সেই ব্যাখ্যা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসনের একাংশের কর্তাদের প্রশ্ন, মেলা-খেলা-উৎসবে সরকারের শ’য়ে শ’য়ে কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। আর মাত্র কয়েক হাজার কর্মীর পেনশনের টাকাই জোগাড় হচ্ছে না? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সিএসটিসি রুগ্ণ হওয়ার পিছনে সরকারের নীতিই দায়ী। তার জন্য কিছু অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে কেন ভোগান্তি পোহাতে হবে!’’

Advertisement

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সরকারের তরফে পরিবহণ নিগমগুলির বেতন ও পেনশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বলা হয়, নিগমগুলিকেই কর্মীদের বেতন ও পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক মাস বেতন বন্ধ থাকার পরে ঠিক হয়, মোট খরচের ২৫ শতাংশ নিগমগুলিকে রোজগার করতে হবে। বাকিটার জোগন দেবে সরকার। পাশাপাশি, নিগমগুলিকে লাভজনক রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। বাস্তবে অবশ্য সে সবের কিছুই হয়নি। ফলে, প্রতি মাসেই প্রতিটি নিগমের বেতন ও পেনশন নিয়ে টানাপড়েন চলে সরকারের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিএসটিসি) ছাড়া বাকি সব নিগমেই কমবেশি এই সমস্যা রয়েই গিয়েছে। কিন্তু পরিবহণ
কর্তারা জানাচ্ছেন, কোনও নিগমে তিন-চার মাস পেনশন বকেয়া থাকার ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন।

সিএসটিসি সূত্রের খবর, গত নভেম্বর মাস থেকে পেনশন পাচ্ছেন না সিএসটিসি-র ওই হাজার পাঁচেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। সিএসটিসি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘পেনশনের জন্য প্রয়োজন মাসে সাকুল্যে ৪ কোটি টাকা। প্রতি মাসেই আমরা নিয়মমাফিক টাকা চেয়ে পরিবহণ দফতরের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেই অর্থ এখনও এসে পৌঁছয়নি।’’ পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘ফাইল আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অর্থ দফতরকে পাঠিয়েছি। কিন্তু অনুমোদন আসেনি।’’

সিএসটিসি-র পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা অমর মজুমদার বলেন, ‘‘নভেম্বর মাস থেকে আমরা পেনশন পাচ্ছি না। এখন আমার ৮২ বছর বয়স। বারবার সিএসটিসি অফিসে গিয়ে তদ্বির করাও সম্ভব নয়। তা-ও গিয়ে বলেছি। কিন্তু ওঁদের কাছেও কোনও সদুত্তর নেই।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সরকার কোটি কোটি টাকা উৎসবে খরচ করতে পারছে, আর আমাদের পেনশনের টাকাই দিতে পারছে না!’’

অমরবাবু সরকারকে দোষারোপ করলেও পরিবহণ দফতরের কর্তাদের একাংশ অবশ্য এর দায় চাপাচ্ছেন সিএসটিসি কর্তৃপক্ষের উপরেও। ওই কর্তাদের কথায়, ‘‘সিএসটিসি-কে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ৬৭৫টি নতুন বাস কিনে দেওয়া হয়েছে। রোজগার বাড়াতে বেশির ভাগ রুটে এসি বাস চলছে। লাভজনক রুটেই শুধু বাস চালানো হচ্ছে। তা-ও রোজগার বাড়ছে না!’’

সিএসটিসি সূত্রে অবশ্য খবর, বাস বাড়লে কি হবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যত সব পুরনো বাসই বসে গিয়েছে। নতুন বাসের মধ্যেও পঞ্চাশটার মতো বসে গিয়েছে। এই অবস্থায় বাস বাড়িয়েও লাভ হয়নি। রোজগারও বাড়েনি। সিএসটিসি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন