Deaths

Death: অসুস্থ বৃদ্ধাকে বাড়ি ফেরাল পুলিশ, পরের দিনই মৃত্যু

উদ্ধারের সময়ে বৃদ্ধার পরনে ছিল কয়েক দিন ধরে পরে থাকা ময়লা শাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

ঠাকুরদাসী সাহার মরদেহ । বৃহস্পতিবার, মণীন্দ্র রোডের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।

ফের অমানবিক ছবির সাক্ষী থাকল শহর। এ বার ঘটনাস্থল দমদম স্টেশন চত্বর। টানা পাঁচ দিন স্টেশনের কাছে রাস্তায় পড়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা। প্লাস্টিকে জড়ানো অবস্থায় তাঁকে দেখে বুধবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। সিঁথি থানার পুলিশ বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে ঠিকানা জেনে কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি পৌঁছে দিলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার বাড়িতেই মারা যান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম ঠাকুরদাসী সাহা (৭০)।

Advertisement

উদ্ধারের সময়ে বৃদ্ধার পরনে ছিল কয়েক দিন ধরে পরে থাকা ময়লা শাড়ি। ঠাকুরদাসী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বোন তাঁকে ফেলে গিয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে পানীয় জল ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেন সিঁথি থানার কর্তব্যরত দুই সাব-ইনস্পেক্টর সুব্রত মল্লিক এবং পাঁচুগোপাল দে। রাত ১১টা নাগাদ দমদম মেট্রো চত্বর থেকে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে বেলগাছিয়ায় রাজা মণীন্দ্র রোডের বাড়িতে দিয়ে আসে।

মা পারুলবালা পোদ্দার এবং এক বোন বিজয়া পোদ্দারের সঙ্গে থাকতেন ঠাকুরদাসী। সাত বোনের সবার বড় ছিলেন তিনি। একমাত্র মেয়ে বিয়ের পরে নদিয়ার বীরনগরে থাকেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরদাসীর একচিলতে ঘরে পৌঁছে দেখা গেল, মেঝেয় তখনও শোয়ানো কঙ্কালসার দেহ। পাশে অঝোরে কেঁদে চলেছেন একশো ছুঁই ছুঁই মা পারুলবালা। স্থানীয়েরাই জানান, খুবই অভাবের সংসার পারুলবালাদের। বয়সের ভারে ঠাকুরদাসী কয়েক বছর ধরে কাজ করতে পারতেন না। বোন বিজয়া পরিচারিকার কাজ করেন। কয়েক মাস ধরে ঠাকুরদাসী অসংলগ্ন আচরণ করছিলেন, জানাচ্ছেন পরিজনেরা।

এই শারীরিক অবস্থায় কেন ফেলে এসেছিলেন দিদিকে? বিজয়া বলেন, ‘‘দিদি মেয়ের বাড়ি যাবে বলায় দিন পাঁচেক আগে দমদম স্টেশন থেকে ট্রেনে তুলে দিতে যাই। স্টেশনে পৌঁছে দিদি বলে, ওখানেই থাকবে। অনেক বার বলেও ফিরিয়ে আনতে পারিনি। বাধ্য হয়ে সেখানে রেখে চলে আসি।’’ রাজা মণীন্দ্র রোডেই আলাদা থাকেন আর এক বোন গীতা দাস। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের বছর দুয়েক পরে অন্তঃসত্ত্বা দিদিকে মায়ের বাড়িতে ফেলে রেখে যায় ওঁর স্বামী। আয়ার কাজ করে অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিল। দিনে তিন বার ইনসুলিন নিতে হচ্ছিল দিদিকে।”

গীতার ছেলে কমল দাস বলেন, ‘‘মাসি গত দেড় বছরের বেশির ভাগ সময় মেয়ের কাছে থাকতেন। দিন কয়েক আগে মেয়েই দমদম স্টেশন থেকে রিকশায় মাসিকে তুলে দিয়ে যায়।”

এ দিন দুপুরে ঠাকুরদাসীর জামাই অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে শাশুড়ি আমাদের কাছেই ছিলেন। আমার স্ত্রী দমদম স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যায়। জরুরি কাজ থাকায় মাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে পারেনি।’’

সিঁথি থানার এক আধিকারিক বলেন, “এটা সত্যি যে ওই বৃদ্ধা পারিবারিক অবহেলার শিকার। কিন্তু কী বলব বলুন! সম্ভবত তীব্র অভাবের কারণে এমন মানসিকতা পরিজনেদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন