ওয়ার্ডে উৎসবের মেজাজ, তৃপ্তির কামড় অমৃতিতে

শুভেচ্ছা রইল। আপনিই মেয়র হচ্ছেন। ভোট শুরু হওয়ার আগেই এসএমএস ঢুকল সব্যসাচী দত্তের মোবাইলে। এক নয়, একাধিক। বিধাননগর পুর-নিগমের ভোটে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী। এসএমএস প্রেরকেরা সকলেই তাঁর ওয়ার্ডের অবাঙালি ভোটার। তাঁদের এক জন তো আবার ভোট দিতে এসে সব্যসাচীর হাতে গুঁজে দিয়ে গেলেন পুজোর ফুল আর ভিজিটিং কার্ড। বলে গেলেন, ‘‘নম্বরটা ফোনে সেভ করে রাখুন। মেয়র হওয়ার পরে দেখা করব।’’

Advertisement

অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৬
Share:

হঠাৎ দেখা। সব্যসাচী দত্ত ও শমীক ভট্টাচার্য। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

শুভেচ্ছা রইল। আপনিই মেয়র হচ্ছেন।
ভোট শুরু হওয়ার আগেই এসএমএস ঢুকল সব্যসাচী দত্তের মোবাইলে। এক নয়, একাধিক। বিধাননগর পুর-নিগমের ভোটে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী। এসএমএস প্রেরকেরা সকলেই তাঁর ওয়ার্ডের অবাঙালি ভোটার। তাঁদের এক জন তো আবার ভোট দিতে এসে সব্যসাচীর হাতে গুঁজে দিয়ে গেলেন পুজোর ফুল আর ভিজিটিং কার্ড। বলে গেলেন, ‘‘নম্বরটা ফোনে সেভ করে রাখুন। মেয়র হওয়ার পরে দেখা করব।’’
চোখে সানগ্লাস, গায়ে সাদা জামা, কালো প্যান্ট, পায়ে চামড়ার চপ্পল আর মুখে চওড়া হাসি। সিএফ ব্লকে ‘সুইমিং পুল’-এর কাছে তাঁর ছোট্ট অফিসে বসে গরম অমৃতিতে কামড় দিতে দিতে সব্যসাচী বলেন, ‘‘এঁরা আমাকে সত্যি খুব ভালবাসেন। প্রচারে নামার পর থেকে এঁদের আশীর্বাদ যে ভাবে পেয়েছি, ভাবা যায় না!’’ এখন খানিকটা তৃপ্ত তিনি। লোকসভা ভোটে এই অবাঙালি ভোটেই যে এখানে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। ‘‘সে বার অন্য ভোট ছিল। এ বার অন্য ভোট।’’ ‘দাদা একেবারে আমাদের নিজের লোক,’ বলছিলেন সব্যসাচীর হাতে কার্ড গুঁজে দেওয়া ওই ভোটার।
ততক্ষণে সুইমিং পুল মোড়ে এসে গিয়েছেন সব্যসাচীর দিকে অবাঙালি ভোট ‘ঘুরিয়ে’ দিতে চাওয়ার অন্যতম ‘কারিগর’, ওই ওয়ার্ডেরই ভোটার কমল গাঁধী। এক কালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী, এ বার সব্যসাচীর হয়ে রাস্তায়। অবাঙালি ভোটারদের নিয়ে সভা, মোবাইল নম্বরের তালিকা তৈরি করে বারবার ফোন, সব কিছুই করেছেন। তবুও ঝুঁকি নিলেন না। সকাল ৮টা থেকে সেঁটে রইলেন সব্যসাচীর সঙ্গে। একই সঙ্গে দৌড়লেন এই কিংবা বিই ব্লকে। আর কখনও কেডিয়াজি, কখনও গুপ্তাজিদের মতো ভোটারদের পরিবারের কর্তাকে ফোন করে হিসেব নিলেন, পরিবারের সকলে ভোট দিয়েছেন কি না। না দিলে, কখনই বা দেবেন। বললেন, ‘‘দাদার কাজের জন্য, ব্যবহারের জন্য ওঁকে ভালবাসি। সেই জন্যই ওঁর হয়ে রাস্তায় নেমেছি।’’
আর এক ম্যানেজার, সব্যসাচীর স্ত্রী ইন্দ্রাণী দত্তও দৌড়চ্ছেন সকাল থেকে। তাঁর দাবি, ‘‘ও তো নিজের ওয়ার্ডটাই ঘোরেনি। ওকে তো অনেক দায়িত্ব নিতে হয়েছে। ওকে বলেছি, অন্তত আজকের দিনটা ওয়ার্ডে থেকো।’’
নিজের ওয়ার্ডে থাকলেও সল্টলেকের অন্যতম ‘ভোট ম্যানেজারের’ বিশ্রাম ছিল না। তাঁর দায়িত্বে রয়েছে ১ থেকে ৫, ১২, ১৩, ১৪, ২০, ২১, ২৭, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। সকাল থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ফোন আসতে শুরু করল। ২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পুলিশের এক কর্তাকে এক সময়ে ফোন করে কার্যত ধমকও দিলেন, ‘‘এর থেকে তো মিলিটারি দিয়ে ভোট করালে ভাল ছিল।’’

Advertisement

রাস্তায় দেখা হয়ে গেল বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে। গাড়ি থেকে নেমেই শমীকবাবুর অভিযোগ, ‘‘পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের ছেলেদের মারছে।’’ তখন সব্যসাচীর পাল্টা উত্তর, ‘‘তা হলে বলছেন, এখনও বিজেপি আছে!’’

আবার ১১টায় ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী অনুপম দত্তের উপরে হামলার খবর পেয়ে মুখ থমথমে। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের এক অবাঙালি ভোটার সব্যসাচীকে বললেন, ‘‘যা হচ্ছে, কল্পনাও করা যায় না। আমি লাইন থেকে বেরিয়ে এলাম।’’ বিকেল চারটে নাগাদ ভোট দিতে গিয়ে উষ্মা সব্যসাচীর গলায়। ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে উৎসবের মেজাজে ভোট হল। সাংবাদিকদের উপরে যে হামলা হয়েছে, তাতে আমি মর্মাহত, দুঃখিত। কিছু কর্মী অতি-উৎসাহ দেখিয়েছেন। না দেখানোই ভাল ছিল।’’

Advertisement

মাঝেমধ্যে খবর নিলেন বিদায়ী মেয়র এবং দলের অন্দরে তাঁর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ওয়ার্ডেরও। এ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন করলেই মুখ বন্ধ। সারা দিন কৃষ্ণাদিকে দেখাই গেল না! মুচকি হাসি এসেই মিলিয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন