Tyangra case

ট্যাংরায় চার সেকেন্ডে অপহরণের চেষ্টা! অভিযোগের সঙ্গে সময়ের ধাঁধা মেলাতে হিমশিম পুলিশ

এই গোটা ঘটনা ঘটতে সময় লাগল মাত্র চার সেকেন্ড! অভিযোগকারী মহিলার বিবৃত ঘটনাক্রমের সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ফুটেজ দেখে সেই সময়ের ধাঁধাটাই মেলাতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৪৯
Share:

দুর্ঘটনার ঠিক আগে সিসি ক্যামেরায় রাস্তার মাঝে এভাবেই দেখা গিয়েছে নিহত প্রৌঢ়কে। নিজস্ব চিত্র

অ্যাম্বুল্যান্স অভিযোগকারী মহিলার সামনে এসে দাঁড়াল। চালকের পাশের আসনের যুবক অভিযোগকারী মহিলাকে হাত ধরে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করল। তার মধ্যে মহিলার চিৎকার শুনে তাঁর শ্বশুর ছুটে এলেন। অ্যাম্বুল্যান্সটি আটকানোর চেষ্টা করলেন এবং চালক গতি বাড়িয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে গেল!

Advertisement

এই গোটা ঘটনা ঘটতে সময় লাগল মাত্র চার সেকেন্ড! অভিযোগকারী মহিলার বিবৃত ঘটনাক্রমের সঙ্গে সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ফুটেজ দেখে সেই সময়ের ধাঁধাটাই মেলাতে পারছেন না কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা। ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে ঘটনাস্থলের পাশে রাস্তার ধারে একটি কারখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাত ১১টা ৫৩ মিনিটে অভিযোগকারিণী নিজে হেঁটে চলেছেন। সঙ্গে তাঁর মেয়ে এবং মামীশাশুড়ি। কয়েক হাত পেছনেই হেঁটে যাচ্ছেন তাঁর শ্বশুর। তাঁকে দেখা যাচ্ছে রাস্তার প্রায় মাঝখান দিয়ে হাঁটছেন একটু অবিন্যস্ত পায়ে। তাঁর পিছনে অন্য আত্মীয়েরা।

এক মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এই সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ৫৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অভিযোগকারিণী থেকে শুরু করে বাকি সবাই স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে যাচ্ছেন। ৫৯ সেকেন্ডের মাথায় দেখা যাচ্ছে প্রবল গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সটি। পিছনে তাড়া করছেন অভিযোগকারিণী-সহ তাঁর আত্মীয়েরা। এখানেই তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তা হলে ধরে নিতে হবে, ৫৫ থেকে ৫৯ সেকেন্ডের মধ্যে মহিলার বর্ণনা অনুযায়ী সমস্ত ঘটনা ঘটেছে। আর এখানেই তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে, মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যে এত কিছু কি ঘটা সম্ভব?

Advertisement

আরও পড়ুন:মাকে খুন করে পুরুষসঙ্গীকে নিয়ে আন্দামানে ছুটি কাটাতে গেলেন বেঙ্গালুরুর তরুণী
আরও পড়ুন:ট্যাংরা কাণ্ডে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে, মানতে চাইছে না পুলিশ!

সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্সটি প্রবল গতিতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগেই ঘাতক গাড়ির উল্টো দিক থেকে একটি সাদা রঙের গাড়ি যাচ্ছে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘অভিযুক্ত চালক জেরায় জানিয়েছে, উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসায় সে বাঁ দিকে অনেকটা সরিয়ে আনে নিজের গাড়ি। সেই সময়েই ওই প্রৌঢ়ের গায়ে গাড়ির ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনা ঘটেছে বুঝে গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায় সে।” এ দিন গাড়ির ফরেন্সিক পরীক্ষাও করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরাও জানিয়েছেন, ঘাতক অ্যাম্বুল্যান্সের সামনের দিকে ধাক্কার কোনও চিহ্ন নেই। রয়েছে গাড়ির বাঁ দিকে। সেখান থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গাড়িটি সামনাসামনি ওই প্রৌঢ়কে ধাক্কা মারেনি। গাড়ির বাঁ দিকের অংশে ধাক্কা লাগে ওই প্রৌঢ়ের। ফলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমানের সঙ্গেও মিলছে না অভিযোগকারিণীর দাবি যে, তাঁর শ্বশুর অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে দাঁড়িয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন।

ফলে মহিলার অভিযোগ ঘিরে যে ধাঁধা তৈরি হয়েছে তার কিনারা এখনও করতে পারেননি গোয়েন্দারা। তবে মহিলার অভিযোগ অনুযায়ী এ দিন এই মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ (অবৈধ ভাবে আটকানো), ৩৫৭ (বলপূর্বক আটকানো) এবং ৩৪ (ষড়যন্ত্র) ধারা যুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন