dengue death

মেলেনি ঘর, মাঠেই ডেঙ্গিতে মৃত্যু হাজার বস্তির বাসিন্দার

খোলা আকাশের নীচে, মাঠের জমা জলের মধ্যেই দিন কাটানো হাজার বস্তির বাসিন্দাদের নিয়ে মাসখানেক আগেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

মলিনা দাস (৩৮)। ছবি সংগৃহীত

ঘরে ঘরে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া। খোলা আকাশের নীচে, মাঠের জমা জলের মধ্যেই দিন কাটানো হাজার বস্তির বাসিন্দাদের নিয়ে মাসখানেক আগেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সোমবার রাতে সেই আশঙ্কাই সত্যি করে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল সেখানকার এক বাসিন্দার। মৃতার নাম মলিনা দাস (৩৮)। তিনি বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতেন।

Advertisement

এই ঘটনাই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, পুজোর আগে কি তবে আরও মারাত্মক হতে চলেছে ডেঙ্গি? মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘরের আশ্বাস দেওয়ার এক বছর আট মাস পরেও কেন মাঠেই পড়ে থাকতে হচ্ছে ঘরপোড়া ওই বাসিন্দাদের? কেন আক্রান্তদের আগেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা গেল না?

মলিনার স্বামী খোকন দাস গাড়িচালকের সহযোগীর কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলে, এক মেয়ে। মলিনার ননদ শিবানী দাস জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মলিনার জ্বর ছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে ভর্তি হতে লিখে দেওয়া হয়। শিবানী বলেন, ‘‘কিন্তু মলিনার উপরেই সংসারের ভার। তাই হাসপাতালে থাকলে কী করে সংসার চলবে, সেই চিন্তা ছিল। তা ছাড়া মাঠে আমরা যে ভাবে রয়েছি, তাতে ঘরে ঘরে জ্বর। তাই গুরুত্ব না দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসে মলিনা। কিন্তু সেটা যে এত গুরুতর হয়ে যাবে, তা কেউই বুঝতে পারিনি।’’

Advertisement

মলিনার স্বামী খোকন বলেন, ‘‘সোমবার স্ত্রীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। আর জি করে নিয়ে গেলে জানানো হয়, আইসিইউয়ে ভর্তি করাতে হবে, কিন্তু সেখানে শয্যা ফাঁকা নেই। কোনও বেসরকারি হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে বলা হয়। এর পরে প্রথমে বাগবাজার ও পরে বরাহনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই রাতে সব শেষ।’’ মলিনার মৃত্যুর শংসাপত্রে মৃত্যুর সময় লেখা হয়েছে সোমবার রাত ১২টা ৫০ মিনিট। মৃত্যুর কারণ— ‘ডেঙ্গি ফিভার, সেপসিস উইথ মাল্টি অর্গান ফেলিয়োর’।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভয়াল আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছিল বাগবাজারের হাজার বস্তির কয়েকশো ঘর। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল মায়ের বাড়ির একাংশেও। বস্তির উল্টো দিকে পেট্রল পাম্প থাকায় আরও বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল। কোনওমতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পোড়া বস্তির বাসিন্দাদের থাকার ব্যবস্থা হয় পাশের উইমেন্স কলেজে। ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পোড়া বস্তি ভেঙে সেখানেই ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে বাসিন্দাদের। নগরোন্নয়ন দফতর থেকে ওই ঠিকানায় ১০ কাঠা জমির উপরে তেতলা বাড়ি তৈরি করে পরিবারপিছু ঘর দেওয়ার জন্য বরাদ্দ হয় ২ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। তবে ঘর তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের থাকার বন্দোবস্ত হয় কাছেই নিবেদিতা উদ্যানে। মাঠের মধ্যেই ত্রিপল টাঙিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় কাউন্সিলরের তরফে।

অভিযোগ, আগুন লাগার পরে এক বছর আট মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও ঘর পাননি বস্তিবাসীরা। এর মধ্যে বর্ষার মরসুমে বেড়ে উঠেছে মাঠের ঘাস। সাপের উপদ্রবের সঙ্গে সঙ্গেই রয়েছে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি। এ নিয়ে স্থানীয় সাত নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপি ঘোষ দাবি করেছিলেন, সরকারের মঞ্জুর করা পুরো টাকা আসেনি। এসেছিল ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। তার পরে প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকার ‘ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট’ জমা দেওয়া হলেও এসেছে মাত্র ৫০ লক্ষ। তা দিয়েই দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর মধ্যে অন্তত ২০০টি ঘর তৈরি করে বস্তিবাসীদের হাতে চাবি তুলে দেওয়ার কাজ চলছে। বাকিটা ডিসেম্বরে হতে পারে বলে বাপির দাবি। কিন্তু মাঠে পড়ে থাকতে থাকতেই ডেঙ্গি-মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ভয়ই পাচ্ছিলাম। কিন্তু ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া আটকানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। নিজের গাফিলতিতেই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন