ছাদের চাষে উৎসাহী বহু

বাজারে কেনা আনাজ বাড়িতে এসে ধুতেই এক দিন রং বেরোতে শুরু করেছিল। এক দিন কিছু আনাজ সেদ্ধ হতে সময়ও নিয়েছিল। আড়াই বছরের ছেলে শ্রেয়ানের কথা ভেবে বুক কেঁপে ওঠে পায়েল ভট্টাচার্যের। এই ফল, আনাজের সঙ্গে কতটা কীটনাশক ঢুকছে শ্রেয়ানের শরীরে?

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

ফলন: নিজের ছাদের আনাজ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন বিজয়চন্দ্র ঘোষ। রবিবার, রাজারহাটে। ছবি: শৌভিক দে

বাজারে কেনা আনাজ বাড়িতে এসে ধুতেই এক দিন রং বেরোতে শুরু করেছিল। এক দিন কিছু আনাজ সেদ্ধ হতে সময়ও নিয়েছিল। আড়াই বছরের ছেলে শ্রেয়ানের কথা ভেবে বুক কেঁপে ওঠে পায়েল ভট্টাচার্যের। এই ফল, আনাজের সঙ্গে কতটা কীটনাশক ঢুকছে শ্রেয়ানের শরীরে?

Advertisement

ব্যারাকপুরের অনির্বাণ নিয়োগী কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার। তাঁরও মত, বাজার থেকে যে আনাজ ও ফল কিনছেন, তার উপরে ভরসা করতে পারছেন না। তাঁরও বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইদানীং দুধ কিনতেও তো ভয় করছে।’’

খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি-বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিজয়চন্দ্র ঘোষের ছাদে জৈব চাষ দেখে উৎসাহিত হয়েছেন দু’জনই। এই তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকেই। শহুরে মানুষ তাঁরা। বাজারে গিয়ে যা পান, তাই কিনতে বাধ্য হন। এখন নিজেদেরই ছাদে লোহার খাঁচায় জৈব পদ্ধতিতে বেগুন, ঝিঙে, পটল, ঢ্যাঁড়স ফলিয়ে, আশঙ্কা কমানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বাবলম্বি হওয়ারও পথ খুঁজছেন শহরবাসীর একাংশ।

Advertisement

পথটা বিজয়বাবু দেখিয়েছেন। রাজারহাটের একটি বহুতলের ছাদে তিনি কেঁচো সার ব্যবহার করে আনাজ, ফল ফলিয়েছেন। তা জানতে পেরে সম্প্রতি উৎসাহী বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন রাজারহাটের সেই ছাদে। নিজেদের চোখে জৈব-চাষের সেই ছবি দেখে উৎসাহিত হয়েছেন তাঁরা। বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘একে ‘আরবান ফার্মিং’ নাম দিয়েছি আমি। অনেকের আবদারে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ— প্রায় ২০-২২টা ছাদ ইতিমধ্যেই আমি দেখেও এসেছি। একটা দল তৈরি করেছি। বারাসতে কেঁচো সারের ব্যবসা করেন সোমনাথ বসু। তিনিই রয়েছেন সেই দলের মাথায়। তাঁরাই উৎসাহী মানুষের বাড়িতে গিয়ে সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দেবেন। কেঁচো সারও তাঁরাই সরবরাহ করবেন।’’

আরও পড়ুন: দূষণে জমা হবে রিপোর্ট

রবিবার মালবিকা বলেন, ‘‘এখন এত গরম। ওঁরা বলছেন, বর্ষা পড়ুক। তার পরে আমার বাড়ির ছাদে এসে পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়ে যাবেন।’’ বাগুইআটিতে বাবার বাড়ির ছাদে সেই পরিকাঠামো তৈরি করতে চান পায়েলও। তবে, আরও একটু পড়াশোনা করে নিতে চান তার আগে। অনির্বাণ ব্যারাকপুরে নিজের বাড়ি তৈরি করছেন। বলেন, ‘‘৩-৪ জনের সংসারে যেটুকু আনাজ লাগে, তা ছাদে জৈব পদ্ধতিতে করে ফেলতে পারলে স্বাস্থ্যের উন্নতিও হবে।’’

এই কাজে বিজয়বাবুর সেনাপতি সোমনাথকে ফোনে ধরলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ৫-৬টি অর্ডার পেয়ে গিয়েছি। কোনওটা যাদবপুরে, কোনওটা মধ্যমগ্রামে, কোনওটা সল্টলেকে। প্রতি বর্গ ফুটে ২১০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। ট্রেনের মতো বাঙ্ক তৈরি করে বিভিন্ন স্তরেও চাষ করা যাবে।’’

বিজয়বাবুর আশা, পাশের বাড়ির ছাদে এই চাষ দেখলে আরও মানুষ উৎসাহিত হবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন