কসবা

‘আমার চেন কত দূর, তা আপনি জানেন না!’

‘‘আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না। আমার ‘চেন’ (যোগাযোগ) কত দূর, তা আপনি জানেন না!’’

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
Share:

সোনা পাপ্পু।

‘‘আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না। আমার ‘চেন’ (যোগাযোগ) কত দূর, তা আপনি জানেন না!’’

Advertisement

মাস ছয়েক আগে এলাকায় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ পাওয়ার পর সোনা পাপ্পু ওরফে বিশ্বজিৎ পোদ্দারকে ফোন করেছিলেন এক পুলিশ কর্তা। শোনা যায়, ওই পুলিশকর্তার ফোনের জবাব নাকি এমন ভাবেই দিয়েছিল সোনা-পাপ্পু। তালবাগানে পলাশ জানা খুনের ঘটনার পর প্রায় ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। মূল অভিযুক্ত সেই সোনা পাপ্পু এখনও অধরা।

তবে, সোনা পাপ্পুর ‘চেন’-এর দাবি যে একেবারে অমূলক নয়, তার আভাস পাওয়া যায় ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায়ের কথায়। এলাকায় তাঁর ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত সোনা পাপ্পুর ওই ‘চেন’কে অস্বীকার করেননি তিনি। বৃহস্পতিবার বিজনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমি ওঁদের কোনও ভাবেই ব্যবহার করি না।’’ তিনি বলেন, ‘‘সোনা পাপ্পুকে গ্রেফতার করা হবে। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি ওদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে।’’ লালবাজারে এক পুলিশ কর্তার আশ্বাস, ‘‘সোনা পাপ্পুর খোঁজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।’’ কিন্তু তার অবৈধ নির্মাণের অভিযোগের কী ব্যবস্থা হবে? বিজনবাবু বলেন, ‘‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

কসবা থানার সুইনহো লেনের জাহাজ বাড়ি এলাকায় বাড়ি বিশ্বজিৎ ওরফে পাপ্পুর। বছর সাতেক আগেও বাবার পিকনিক গার্ডেনের সোনার দোকানে হাত মিলিয়ে কাজ করত পাপ্পু। সেখান থেকেই নাম সোনা পাপ্পু। বছর ছয়েক আগে বাবার ব্যবসা ছেড়ে ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাটাপুকুর এলাকায় কয়েক জনকে নিয়ে সিন্ডিকেটের ব্যবসা শুরু করেছিল। শোনা যায়, তখন থেকেই ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিজনলাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।

আরও পড়ুন: অ্যাসিড হামলায় আক্রান্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, পলাতক পুরনো প্রেমিক

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে এক পুলিশ অফিসার পাপ্পুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। উত্তরে সে নাকি জানিয়েছিল, নির্বাচনে কাউন্সিলর জিতিয়ে আনতে সে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। সে নাকি বলে, ‘‘ওই টাকা কী বাড়িতে মেশিন বসিয়ে ছাপিয়ে নেব? অবৈধ নির্মাণ করেই তো তুলতে হবে। আপনারা আমার বিরুদ্ধে যেখানে পারেন অভিযোগ করুন।’’ যদিও নির্বাচনের খরচ হিসেবে তিনি সোনা পাপ্পুর কাছ থেকে কোনও টাকাও নেননি বলে দাবি করছেন বিজনবাবু।

আরও পড়ুন: সদ্যোজাত যমজ মেয়েকে খুন করে ধৃত মা

কিন্তু এত প্রভাবশালী সোনা পাপ্পুর দলবল আচমকা অতি সাধারণ পলাশ জানাকে খুন করল কেন? স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ওই এলাকায় সিন্ডিকেট ব্যবসায় সোনা পাপ্পুর বিরোধী গোষ্ঠী রয়েছে। ওই গোষ্ঠীর উস্কানিতেই এলাকার মানুষ তার বিরুদ্ধে লালবাজারে অবৈধ নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের অভিযোগ দায়ের করেছিল। কিন্তু ওই বিরোধী গোষ্ঠীও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিজনলাল মুখোপাধ্যায়ের অধীনে রয়েছে। পলাশ ছিলেন সোনা পাপ্পুর বিরুদ্ধ সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর সদস্য বিমলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। হাতের সামনে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কাউকে না পেয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য পলাশের উপরই হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন