উৎসবের শব্দ-তাণ্ডব কমেনি হাসপাতালেই

বছর কয়েক আগের কথা। কালীপুজো, দেওয়ালির রাতে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৬
Share:

বছর কয়েক আগের কথা। কালীপুজো, দেওয়ালির রাতে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা। তিনি দেখেছিলেন, হাসপাতালের চারপাশে এমনকী, ভিতরেও দেদার শব্দবাজি ফাটছে। সেই শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে সদ্যোজাতরাও।

Advertisement

সেই ঘটনার পরে ক্যালেন্ডার বহু পাতা বদলেছে, শব্দদূষণ রুখতে পুলিশ-প্রশাসনের ঢক্কানিনাদও বেড়েছে। কিন্তু আজও হাসপাতালের চত্বরে শব্দদূষণ রুখতে পারেনি প্রশাসন। কালীপুজো, দেওয়ালিতে এ বারও কলকাতার এসএসকেএম এবং আর জি কর হাসপাতালের শব্দমাত্রা মেপেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এ বছরের শব্দমাত্রার সঙ্গে গত বছরের শব্দমাত্রার তুলনা করে সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, হাসপাতাল চত্বরে শব্দদূষণ মোটেও কমেনি। বরং এসএসকেএম চত্বরে দিনের বেলা শব্দের দাপট বেড়েছে। এ শহরের মধ্যে কালীপুজো, দেওয়ালিতে সব থেকে বেশি শব্দের দাপট ছিল গোলপার্ক, কসবা এলাকায়। ওই অঞ্চলেও একাধিক বড় মাপের বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, হাসপাতাল ঘোষিত ‘সাইলেন্স জোন’। ফলে এখানে দিনের বেলা ৫০ ডেসিবেল এবং রাতে সর্বাধিক ৪০ ডেসিবেল শব্দ করা যাবে। যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘সাইলেন্স জোন’-এ দিনের বেলাও ৪৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ করা যায় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট বলছে, এ বছর এসএসকেএম হাসপাতালে দিনের বেলা গড় শব্দমাত্রা ছিল ৬৬ এবং রাতে গড়ে ছিল ৬১ ডেসিবেল। আর জি কর হাসপাতালে দিনে ও রাতে গড় শব্দমাত্রা ৬৩ ডেসিবেল ছিল। কসবা, গোলপার্ক এলাকায় দিনে ও রাতে গড় শব্দমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৮০ ও ৭৯ ডেসিবেল । কসবা ও গোলপার্ক ‘সাইলেন্স জোন’ না হলেও ওই শব্দমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি।

Advertisement

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দূষণে হাসপাতাল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ সেখানে রোগী, প্রসূতি কিংবা সদ্যোজাতরা থাকে। শব্দদূষণের প্রকোপে তারাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই কারণে এই সব এলাকাতেই পুলিশের বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা। দায় এড়াতে পারে না পর্ষদও। কিন্তু তেমনটা হচ্ছে কই! বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, এক সময়ে কালীপুজোর রাতে বিভিন্ন হাসপাতালে পুলিশ ও পর্ষদের দল হানা দিত। খোদ এসএসকেএম হাসপাতালের চত্বর থেকে ধরপাক়়ড় করা হতো। মামলাও রুজু হতো। তাতে এই শব্দদৈত্যকে লাগামও পরানো গিয়েছিল। ‘‘কিন্তু সেই সব রাশ আলগা হয়েছে। তাতেই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে বাজিপ্রেমীরা,’’ বলছেন তিনি।

পরিবেশকর্মীদের মতে, শহরের সব জায়গায় সমান নজরদারি রাখা যায় না। কিন্তু রোগী, শিশুদের কথা ভেবে হাসপাতালে নজরদারি প্রয়োজন ছিল। তাঁরা বলছেন, গড় শব্দমাত্রার রিপোর্ট বলে দিচ্ছে এক টানা বাজি ফেটেছে। তা হলে বাজি ফাটার শব্দ শোনার পরেও পুলিশ সেখানে যায়নি কেন? গেলে তো এই উপদ্রবে রাশ টানা যেত। পুলিশের অবশ্য দাবি, কালীপুজো, দেওয়ালির রাতে যেখানেই অভিযোগ মিলেছে, সেখানেই টহলদারি দল গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে।

তা হলে হাসপাতাল চত্বরে শব্দের তাণ্ডব ঠেকানো গেল না কেন?

সদুত্তর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন