শহর জুড়ে কড়া নিরাপত্তা থাকবে কালীপুজোয়।—নিজস্ব চিত্র।
দুষ্কৃতী দমনে শহরের ‘মার্কা মারা’ এলাকাগুলির উপরে বিশেষ নজরদারি থাকে। কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে বাজির তাণ্ডব ঠেকাতেও এ বার কার্যত সেই পথে হাঁটছে পুলিশ। লালবাজারের খবর, শুক্রবার কালীপুজো ও দীপাবলি নিয়ে বৈঠকে বসে কলকাতা পুলিশ। সেখানে শীর্ষ কর্তারা থানার ওসি-দের নির্দেশ দিয়েছেন, আগের বছর যে সব এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ এসেছিল, সেই এলাকা চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তেমনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ে বাজি পোড়ানোর ব্যাপারেও সচেতন করতে বলা হয়েছে।
বহু ক্ষেত্রেই বহুতল আবাসনগুলির ছাদে বেপরোয়া ভাবে নিষিদ্ধ বাজি পোড়ানোর অভিযোগ মেলে। প্রশাসনের খবর, এ ব্যাপারে সচেতন করতে আজ, শনিবার শহরের বহুতলের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বহুতলের বাসিন্দাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা ছড়ানোর পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।
পুলিশের এই ‘সক্রিয়তা’র ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, বাজি সংক্রান্ত নির্দেশাবলী কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরাসরি থানার ওসি-দের কাঁধেই দায়িত্ব দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন ‘সবুজ ম়ঞ্চ’ আইন ভেঙে বাজি পোড়ানোর অভিযোগে ব্যবস্থা না নিলে ওসি-দের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এক পরিবেশকর্মীর দাবি, ‘‘এ কথা মাথায় রেখেই অতি সতর্ক লালবাজার।’’ লালবাজারের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
লালবাজার জানিয়েছে, পুজোর মধ্যে শহরে মোট দু’হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। ৫২টি থানায় বিশেষ পুলিশি বন্দোবস্তের পাশাপাশি টালিগঞ্জ, বেহালা, যাদবপুর এবং উত্তর কলকাতার ডেপুটি কমিশনারের অফিসে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। ডিভিশনাল পুলিশ পিকেট থাকছে ৬১৮টি। ২৩টি মেট্রো স্টেশনে রাখা হচ্ছে বাড়তি পুলিশি নজরদারি। ২১টি কুইক রেসপন্স দলের পাশাপাশি শহরের ২৭টি জায়গায় ওয়াচটাওয়ার বসানো হচ্ছে। থাকছে ৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা। চলতি বছরে কালীঘাট, ঠনঠনিয়া কালীমন্দির, লেক কালীবাড়ি এবং হরিদেবপুরের করুণাময়ী কালীমন্দিরে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখছে কলকাতা পুলিশ।
সূত্রের খবর, আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘মার্কা মারা’ এলাকা বেছে সংশ্লিষ্ট থানাকে সেই তালিকা পাঠাবে লালবাজার। সেইমতো ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পরিবেশকর্মী ও পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, শহরে মূলত ঠাকুরপুকুর, গল্ফ গ্রিন, কাশীপুর, পাইকপা়ড়া, নেতাজিনগর, হরিদেবপুর, গড়িয়া, বাঘা যতীনের মতো এলাকা থেকেই বেশি অভিযোগ মেলে। কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে মোটরবাইক এবং অটোয় চেপেও অলিগলিতে টহলদারি চলবে। এ জন্য ১১৪টি অটোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভাসানের শোভাযাত্রায় ‘ডি জে বক্স’ (বিরাট মাপের সাউন্ড বক্স) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ৭ তারিখ ভাসানের দিন থেকে ৩৪টি ঘাটে পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ‘ডি জে বক্স’ বাজেয়াপ্ত এবং সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির কর্তাদের গ্রেফতারও করার নির্দেশ মিলেছে বলে পুলিশের খবর। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, ‘‘শব্দবাজি ঠেকাতে সকাল-বিকেল এলাকায় প্রচার চালাতে হবে। আবাসন থেকে যাতে বাজি না ছোড়া হয়, তার জন্য আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করতে বলেছি।’’