ট্র্যাফিকের স্পট ফাইন নিয়ে নিজেদের নির্দেশিকা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বদল করল লালবাজার।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় লালবাজারের তরফে প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের বলা হয়েছিল স্পট ফাইন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখতে। সেই মর্মে তাঁদের কাছে মৌখিক নির্দেশও পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই সেই নির্দেশে বদল আনল লালবাজার।
কেন এই বদল? লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তাদের দাবি, বাজারে খুচরো নোটের আকালের কথা ভেবেই স্পট ফাইন করতে নিষেধ করা হয়েছিল শনিবার। বলা হয়েছিল, স্পট ফাইনের বদলে আইনভঙ্গকারী গাড়িকে আটকে তার চালককে আইন মেনে চলা এবং তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে বোঝাবেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু বহু অফিসার আশঙ্কা করেছিলেন, স্পট ফাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়বে। বাস্তবেও দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশের চোখের সামনে আইন ভেঙে পার পেয়ে যাচ্ছিলেন বেপরোয়া মোটরবাইক থেকে শুরু করে বেসরকারি বাসের চালকেরা।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, সে সব কারণেই সোমবার ফের প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, আইনভঙ্গকারীরা কোনও ভাবেই যাতে ছাড় না পান তা নিশ্চিত করতে। আরও বলা হয়েছে, স্পট ফাইনের বদলে গাড়ির যে কোনও নথি বা চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করতে হবে। পরে চালক তাঁর সুবিধা মতো জরিমানার টাকা জমা দেবেন। ট্র্যাফিক বিভাগ সূত্রের খবর, মূলত মোটরবাইক চালকদের হেলমেট না পরা, সিগন্যাল না মানা, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোর মতো ঘটনাতেই স্পট ফাইন করে থাকেন পুলিশ অফিসারেরা।
এর পাশাপাশি, স্পট ফাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে পুলিশের রাজকোষেও টান পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ, গত এক দশক ধরে এর উপরেই জোর দিয়ে নিজেদের ভাঁড়ার ভরাছিল লালবাজার। গত বছর কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ শুধুমাত্র স্পট ফাইন থেকে আয় করেছিল প্রায় ১৯ কোটি টাকা। এক কর্তার কথায়, ‘‘সব কিছু মাথায় রেখেই আগের দিনের নির্দেশিকার কিছু বদল করা হয়েছে এ দিন। কোন ভাবেই যাতে আইনভঙ্গকারী ছাড় না পান, তা দেখতে বলা হয়েছে।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার থেকেই ওই নতুন ব্যবস্থা কার্যকরা হয়েছে। এতে ট্র্যাফিক অফিসারদের যান নিয়ন্ত্রণ করতেও সুবিধা হচ্ছে। নতুন নির্দেশিকা অনুয়ায়ী, আইনভঙ্গকারীকে ঘটনাস্থলে জরিমানার টাকা মেটাতে হবে না। বদলে সেই গাড়ির নথি বাজেয়াপ্ত করবে পুলিশ। এতে যেমন ওই আইনভঙ্গকারীকে খুচরো টাকা জরিমানা দিতে হবে না, তেমনই বাজেয়াপ্ত নথি ছাড়ানোর জন্য কিছু সময়ও পাবেন তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সাইটেশন জরিমানার উপরেও জোর দিতে বলা হয়েছে ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিদের। সাইটেশন কেসের ক্ষেত্রে আইন ভেঙে পালিয়ে যাওয়া গাড়ির নম্বর টুকে রেখে পরে চিঠি পাঠিয়ে ব্যাঙ্কে বা কোষাগারে জরিমানা জমা দিতে বলা হবে। এক পুলিশকর্তা জানান, কোনও গাড়ি পুলিশকর্মীর চোখ এড়িয়ে পালালেও ক্যামেরায় সেটির নম্বর দেখে চালককে সাইটেশন কেস দেওয়া হবে। এর জন্য লালবাজারে আলাদা নজরদারি সেলও খোলা হয়েছে।