বিধাননগর পুর নিগম

সাফাই প্রকল্পে টাকার জোগান ঘিরে সংশয়

স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পকে সামনে রেখে আবর্জনা সাফাইয়ের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছিল বিধাননগর পুর নিগম। কিন্তু খোদ রাজ্য সরকারই যে স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে উৎসাহী নয়, উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:০৩
Share:

স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পকে সামনে রেখে আবর্জনা সাফাইয়ের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছিল বিধাননগর পুর নিগম। কিন্তু খোদ রাজ্য সরকারই যে স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে উৎসাহী নয়, উত্তর ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় পুর নিগমের নতুন এই সাফাই প্রকল্পের অর্থসংস্থান কী ভাবে হবে, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়।

Advertisement

কী রয়েছে প্রকল্পে? পুর নিগম সূত্রে খবর, চার হাজার বাড়ি পিছু একটি করে কম্পোজড্‌ ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। দিনে দু’বার জঞ্জাল সংগ্রহ করে ইউনিটে জড়ো করা হবে। তার পরে আবর্জনা থেকে আলাদা করা হবে জৈব এবং অজৈব পদার্থ। তার থেকে তৈরি হবে জৈব সার। সেই পরিকল্পনাকে আরও নিখুঁত করে তুলতে উন্নতমানের প্রযুক্তির ব্যবহার করা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে পুর নিগম। সূত্রের খবর, প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ হতে পারে এই প্রকল্পে।

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি ওই প্রশাসনিক বৈঠকে স্মার্ট সিটির ভাবনা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, স্মার্ট সিটি প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকার আগ্রহী নয়। শুধুমাত্র ৪টি শহরের পিছনে টাকা খরচ না করে পিছিয়ে পড়া শহরের উন্নয়ন করাই সরকারের লক্ষ্য। স্মার্ট সিটি নয়, পরিবেশবান্ধব গ্রিন সিটি গড়ে তুলতে বেশি আগ্রহী রাজ্য সরকার। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে হবে বিধাননগর পুর নিগমের নতুন সাফাই প্রকল্পের অর্থের সংস্থান? তার নির্দিষ্ট জবাব মেলেনি। তবে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের ব্যয়ের কিছু অংশ পুর নিগমের নিজস্ব উৎস থেকে মিলবে, বাকি অর্থের জন্য রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হব।’’ যদিও মেয়র সব্যসাচী দত্ত এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া
মেলেনি পুরমন্ত্রীরও।

Advertisement

পরিকল্পনার কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে সংশয় থাকলেও ইতিমধ্যেই দিনে দু’বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে জঞ্জাল সংগ্রহ করেছে পুর নিগম। পুরকর্তারা অবশ্য বলছেন, এই প্রকল্প কার্যকর হলে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা ফেলার ঝক্কিও পোহাতে হবে না। আবর্জনা ফেলার গাড়ির সমস্যাও মিটবে। পাশাপাশি, জৈব সার বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে।

আবার রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় বিধাননগর পুর নিগমের ২৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিত জঞ্জাল সংগ্রহ থেকে সাফাই— কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রচেষ্টা তেমন চোখে পড়েনি। সমস্ত সমস্যা বিবেচনায় রেখেই এই নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছেন পুর নিগমের কর্তারা।

বিধাননগর পুর নিগমের ৪১টি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগৃহীত এবং রাস্তা সাফাই মিলিয়ে আবর্জনার পরিমাণ দৈনিক প্রায় ৪৫০ মেট্রিক টন। প্রায় ৯৭১ জন কর্মী এই সাফাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন। ৫০টিরও বেশি গাড়িতে সেই আবর্জনা মোল্লার ভেড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে জমা করা হয়। কিন্তু মোল্লার ভেড়িতে বিধাননগর ছাড়া আরও কয়েকটি প্রশাসনিক সংস্থার আওতাভুক্ত এলাকার আবর্জনা জমা করা হয়। ফলে সেখানেও রয়েছে জায়গার অভাব। সেই সমস্যাও ক্রমশ জটিল আকার নিয়েছে। তাই এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে মোল্লার ভেড়িতে আবর্জনা ফেলার চাপও কমে যাবে বলে আশা পুর-কর্তাদের।

বিধাননগর পুর নিগমের মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘দিনে দু’বার আবর্জনা সংগ্রহ করা একটি ধাপ মাত্র, আবর্জনামুক্ত শহর তৈরির লক্ষ্যে সার্বিক ভাবেই পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন