অটো-রাজ

খাদ্য ভবনের সামনেই এ বার নিগৃহীত পুলিশ

খাদ্য ভবনের গেট আটকে দাঁড়িয়েছিল বেশ কয়েকটি অটো। সেগুলি সরাতে গিয়ে শুক্রবার অটোর ধাক্কা খেতে হয়েছিল রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক নিরাপত্তারক্ষীকে। খোদ মন্ত্রীর সঙ্গেও বচসায় জড়িয়েছিলেন এক অটোচালক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১১
Share:

খাদ্য ভবনের গেট আটকে দাঁড়িয়ে থাকা অটোকে জরিমানা করছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

খাদ্য ভবনের গেট আটকে দাঁড়িয়েছিল বেশ কয়েকটি অটো। সেগুলি সরাতে গিয়ে শুক্রবার অটোর ধাক্কা খেতে হয়েছিল রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এক নিরাপত্তারক্ষীকে। খোদ মন্ত্রীর সঙ্গেও বচসায় জড়িয়েছিলেন এক অটোচালক। এত কিছুর পরেও যে অটোচালকেরা ‘বেপরোয়াই’, তা প্রমাণ হয়ে গেল শনিবার ঠিক একই জায়গায় পুলিশ নিগ্রহের ঘটনায়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন খাদ্য ভবনের সামনে ডিউটি করছিলেন সাউথ ট্রাফিক গার্ডের হোমগার্ড উজ্জ্বল দাস। দুপুর একটা নাগাদ খাদ্য ভবনের বাইরে মির্জা গালিব স্ট্রিটের সামনে একটি অটো এসে দাঁড়ায়। অটোটির চালককে সেখানে দাঁড়াতে নিষেধ করেন উজ্জ্বলবাবু। একই সঙ্গে ছিল আরও কয়েকটি অটো। শুক্রবার খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অটোচালকের ওই ঘটনার পরেই সক্রিয় হয়েছিল পুলিশ। সে কারণে শনিবার সকাল থেকেই সেখানে কোনও অটোচালককে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু ধর্মতলা-লোহাপুল রুটের ওই অটোর চালক, মহম্মদ ফিরোজ নিষেধ অমান্য করেই সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে থাকেন। উজ্জ্বলবাবু অটোটির দিকে এগিয়ে গেলেই তাঁকে ধাক্কা দেয় ফিরোজ। তাঁকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, ওই চালক ঘুষি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয় ওই হোমগার্ডকে। এর পরেই পুলিশকর্মীরা হাতেনাতে ধরে ফেলেন ওই চালককে।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অটোচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে অটোটি। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উজ্জ্বলবাবুকে। পুলিশকে মারার এই ঘটনার কথা শুনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। খারাপ আচরণ করেছেন ওই চালক।’’

Advertisement

কিন্তু এ দিনের ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে আরও। অনেকেরই মত, এ দিনের ঘটনা প্রমাণ করে দিল যে, শুক্রবারের ঘটনাতেও হুঁশ ফেরেনি কলকাতার অটোচালকদের। যদিও শনিবার সকাল থেকেই ‘বেপরোয়া’ অটোকে শাসন করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতার ২৫টি ট্রাফিক গার্ডের অফিসারদের নিয়ম ভাঙা অটোচালকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগেই। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘গত ছ’মাসে ১ লক্ষ ৯ হাজারটি অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয়, তা হলে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শহরে মোট যত অটো চলে, তার ৩০ শতাংশই বেআইনি। পুলিশ আরও নজরদারি বাড়াচ্ছে বলে জানান লালবাজারের এক কর্তা।

লালবাজার সূত্রে খবর, গোটা শহরকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে নিয়ে ট্রাফিক গার্ডগুলিকে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত কিছু রুটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, শোভাবাজার-উল্টোডাঙা, লোহাপুল-ধর্মতলা, রবীন্দ্রসরণি-ধর্মতলা, রামনগর থেকে তারাতলা-সহ আরও কয়েকটি রুট। শনিবার বিকেল পর্যন্ত বহু অটোচালককে জরিমানা করা হয়েছে। শুধু খাদ্য ভবনের সামনে থেকে প্রায় চল্লিশটিরও বেশি অটোচালকের জরিমানা হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, জ্যোতিপ্রিয়বাবুর সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছিলেন যে অটোচালক, সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করা গিয়েছে। সাউথ ট্রাফিক গার্ডের এক অফিসার খাদ্য ভবনের সামনে থেকেই ওই অটোচালককে ধরেন এবং লাইসেন্স পাঞ্চ করা হয়। তিন বার পাঞ্চ করা হলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়।

এ দিনের ঘটনার পরে খাদ্য ভবনের সামনে পরিদর্শনে যান কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) অখিলেশ চতুর্বেদী। খাদ্য ভবনের ভিতরে নিউ মার্কেট থানার আউট পোস্ট রয়েছে। সেখানে থাকা এক পুলিশকর্মীকে বাইরে ডাকেন ডিসি। এর পরেই তাঁকে ধমকাতে শুরু করেন তিনি। ঘটনার সময়ে ওই পুলিশকর্মী কেন ভিতরে বসেছিলেন, তার কারণ জানতে চান ডিসি। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন