হাসপাতাল থেকে ফিরেও ভয় কাটছে না ছাত্রের

দুই সন্তানকে নিয়ে নিরুপায় বাবা-মায়ের অভিযোগ, বারবার পুলিশে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বিচার চেয়ে গত মঙ্গলবার রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share:

ক্লাসে অন্য ছাত্রকে বোতল ছুড়ে মারার দায় পড়েছিল তার উপরে। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ টিচার্স রুমে নিয়ে গিয়ে নগ্ন করে মারধর করা হয়েছিল তাকে। গত সেপ্টেম্বরে সেই অপমানেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পাঁচতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল হাওড়ার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র।

Advertisement

৪০ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে অক্টোবরে বাড়ি ফিরেছে সে। স্কুলে যাওয়া তো দূর, সে এখন হাঁটাচলাই করতে পারে না। একাধিক অস্ত্রোপচারের পরেও বিছানায় শয্যাশায়ী। ওই স্কুলেই নবম শ্রেণিতে পড়ত তার দিদি। ভাইয়ের ঘটনার পরে স্কুলে নানা বিরূপ মন্তব্য শুনতে হওয়ায় সে-ও স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। দুই সন্তানকে নিয়ে নিরুপায় বাবা-মায়ের অভিযোগ, বারবার পুলিশে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বিচার চেয়ে গত মঙ্গলবার রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

ওই ছাত্রের বাবার অভিযোগ, ওই স্কুল তাঁর সন্তানের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। তাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হত। স্কুলের বিরুদ্ধে গোলাবাড়ি থানা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে-মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়ে স্কুল বহাল তবিয়তে চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তর আসেনি। এ বার কমিশন যা করার করবে!’’ স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘ওই দিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ-সহ পুলিশকে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। স্কুলের কোনও দোষ রয়েছে কি না, আইন বলবে।’’

Advertisement

গোলাবাড়ি থানার এক আধিকারিক জানান, তদন্ত চলছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি কোন জায়গায় রয়েছে, জানতে চেয়ে হাওড়ার জেলাশাসককে এবং পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছি। এখনও উত্তর আসেনি।’’

ওই নাবালকের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, হাত ধরে ধরে ছেলেকে নতুন করে হাঁটা শেখাচ্ছেন মা। ফ্ল্যাটের খাওয়ার ঘরেই শোয়ার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে তার জন্য। সেখানেই কিছু ক্ষণ আগে তাকে দেখে গিয়েছেন ফিজিওথেরাপিস্ট। সে বলল, ‘‘প্রতি দিন দিদিমণিরা মারতেন। আমি বোতল ছুড়িনি। তবু আমায় মারা হয়েছিল। টিচার্স রুমে নিয়ে গিয়ে ট্রাউজার্স-শার্ট খুলে মেরেছিলেন ওঁরা।’’ পাশাপাশি তার দাবি, ‘‘পড়া না পারলেই দিদিমণিরা বলতেন, ছাদ থেকে ঝাঁপ দে। ওই দিনও ও রকমই বলেছিলেন। তাই আর ভাল লাগছিল না। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেই ছাদে
চলে গিয়েছিলাম।’’

এর পরে ওই নাবালককে উদ্ধার করা হয় তাদের আবাসনের সামনের রাস্তা থেকে। তাকে ভর্তি করানো হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। ছেলেটির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানে প্রায় ৪০ দিন ভর্তি ছিল সে। ১১ দিন ভেন্টিলেশনেও থাকতে হয়েছে তাকে। ২৪ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে সে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন মা-বাবা। মা বলেন, ‘‘ছেলেকে হাঁটতেও শেখাতে হচ্ছে নতুন করে। তবে ওকে যে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। এখন শুধু বিচার চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন