হেলমেট নেই, পড়ুয়াকে ঢুকতে দিল না স্কুল

সকাল সাড়ে সাতটা। শিয়ালদহ এলাকার একটি অভিজাত স্কুল। মোটরবাইক নিয়ে মেয়েকে পৌঁছে দিতে এসেছেন বাবা। হেলমেট খুলে গাড়ি থেকে নেমেই পিছনের ফুটফুটে শিশুটিকে নামাতে গেলেন। হঠাৎ কড়া গলায় পাশ থেকে নির্দেশ, ‘‘ফিরে যান। বাচ্চার হেলমেট না-থাকলে স্কুল করার অনুমতি নেই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১২:৫০
Share:

চেতনাহীন: প্রচারই সার, ছোট মাথারা সেই অরক্ষিতই। শহরের রাস্তায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সকাল সাড়ে সাতটা। শিয়ালদহ এলাকার একটি অভিজাত স্কুল। মোটরবাইক নিয়ে মেয়েকে পৌঁছে দিতে এসেছেন বাবা। হেলমেট খুলে গাড়ি থেকে নেমেই পিছনের ফুটফুটে শিশুটিকে নামাতে গেলেন। হঠাৎ কড়া গলায় পাশ থেকে নির্দেশ, ‘‘ফিরে যান। বাচ্চার হেলমেট না-থাকলে স্কুল করার অনুমতি নেই।’’

Advertisement

শুধু এক জন নয়, বৃহস্পতিবার সকালে শিয়ালদহের লোরেটো ডে স্কুলে যত জন ছাত্রী বাবার সঙ্গে হেলমেট ছাড়া এসেছে, প্রত্যেককেই ফিরে যাওয়ার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেই নির্দেশের কণ্ঠ আর কারও নয়, স্বয়ং প্রধান শিক্ষিকার। স্কুলের গেটের সামনে এ দিন নিজে সকাল থেকে ঠায় রোদে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি নিজে।
উদ্দেশ্য একটাই, শিশুদের হেলমেট পরানোর বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করা।

গত বছরের নভেম্বরে পড়ুয়াদের হেলমেট না পরানো নিয়ে একই রকম পদক্ষেপ করেছিল মধ্য কলকাতার আরও একটি স্কুল, সেন্ট জোসেফ্স। সেখানেও বারংবার সতর্ক করার পরে শেষমেশ হেলমেটবিহীন পড়ুয়াদের গেট থেকেই ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবং সেখানেও স্কুলের অধ্যক্ষা নিজেই সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।

Advertisement

লোরেটোর ক্ষেত্রে এক দিনেই যে এমন কড়া পদক্ষেপ, তা কিন্তু নয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মার্গারেট কিং জানালেন, মাস ছয়েক আগে তিনি স্কুলের গেটে নোটিস দিয়ে জানিয়েছিলেন, মোটরবাইক বা স্কুটার নিয়ে পৌঁছতে এলে ছোটদেরও অবশ্যই হেলমেট পরাতে হবে। ‘‘শুধু তা-ই নয়, স্কুলের তরফে সমস্ত অভিভাবককে ব্যক্তিগত এসএমএস করা হয়েছিল যে, বৃহস্পতিবার হেলমেট ছা়ড়়া বাচ্চাকে নিয়ে এলে স্কুল করতে দেওয়া হবে না। তার পরেও যাঁরা গুরুত্ব দেননি, তাঁদের জন্যই এই পদক্ষেপ’’— বললেন মার্গারেট।

তাঁর অভিযোগ, বহু অভিভাবকই নিজে হেলমেট পরলেও বাচ্চাদের পরান না। এটা বন্ধ করতে তিনি বারবার অভিভাবকদের অনুরোধ করলেও কাজ হচ্ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার যে এত জন পড়ুয়াকে সত্যিই ফিরে যেতে হবে, তা বোধহয় ভাবতে পারেননি অভিভাবকেরা। বেশ কয়েক জন রীতিমতো অসন্তোষও দেখান। মার্গারেটের কথায়, ‘‘আমি জানতাম, বাধা পাব। সেই সঙ্গে এটাও জানতাম, একটা সময়ের পরে কঠোর হতেই হবে বাচ্চাদের কথা ভেবেই। প্রতিদিন পথ দুর্ঘটনা বাড়ছে। এই অবস্থায় আমাদের সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আমাদেরই নিতে হবে!’’ তিনি জানান, যত দিন না দু’চাকায় স্কুলে আসা সব বাচ্চাকে তিনি হেলমেট পরে আসতে দেখছেন, তত দিন এই কড়া নজরদারি চলতে থাকবে।

প্রধান শিক্ষিকার এই পদক্ষেপে খুশিও হয়েছেন অনেক অভিভাবক। চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা দরকার ছিল। না হলে এ ভাবেই হয়তো চলত।’’ প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীর মা শর্মিষ্ঠা ভৌমিক বলেন, ‘‘নিজে এই রোদে দাঁড়িয়ে এত বড় পদক্ষেপ করলেন প্রধান শিক্ষিকা। খুব ভাল কাজ। আমাদের বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্যই তো এই কাজ করছেন।’’ স্কুলের গেট থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ এক অভিভাবক আবার বললেন, ‘‘দেখব, এ ভাবে কত দিন উনি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে শাসন চালাবেন।’’ অনেকের আবার হুঁশও ফিরেছে। জানালেন, বাড়ি গিয়েই আদরের ছোট্ট মাথাটার জন্য হেলমেট কিনে নেবেন।

এক অভিভাবকের আবার সটান অভিযোগ ছিল, ‘‘মাইনে দিয়ে মেয়েকে পড়াই। এ ভাবে ফিরিয়ে দিতে পারেন না শিক্ষিকা।’’ মৃদু হেসে মার্গারেটের জবাব, ‘‘মাইনে নিই বলেই তো সঠিক শিক্ষাটা দেওয়া জরুরি। মোটরবাইকে চড়লে হেলমেট পরাটাও একটা শিক্ষা।’’

সেন্ট জোসেফ্স হেলমেট নিয়ে যে পদক্ষেপ করেছিল, তাতে অভিভাবকদের সচেতনতা কি এই ক’মাসে বেড়েছে? স্কুলের অধ্যক্ষা জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম। তাতে ভাল সাফল্য মিলেছে। এখন মাথায় হেলমেট ছাড়া পড়ুয়াদের প্রায় দেখাই যায় না। অধিকাংশই অভিভাবকই এটা মেনে চলেন। কারণ, হেলমেটের গুরুত্বটা তাঁদের আমরা বোঝাতে পেরেছি।’’ সে বার জয়তীদেবী নিজেই স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে হেলমেটের বিষয়টি লক্ষ রাখতেন। এখনও মাঝেমধ্যে সে ভাবেই তদারকি করেন। তবে তা আগের তুলনায় অনেক কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন