mann ki bat

পথে বসেই পড়া, শহরের কিশোর ‘মন কি বাত’-এ

কথা ছিল, অনুষ্ঠানে যে কৃতীদের নাম বলা হবে, তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

নিমগ্ন: বাবার দোকানের পাশে বসে বইয়ে চোখ অভয়ের। পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে। ছবি: সুমন বল্লভ

রেডিয়োয় তার নাম করে প্রশংসা করছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী! বলছেন, কলকাতার অভয়কুমার গুপ্ত দেখিয়ে দিয়েছে, রাস্তার আলোয় পড়েও সফল হওয়া যায়। অর্থনৈতিক অবস্থা আসলে কোনও বাধাই নয়। ইচ্ছে থাকলে কী না হয়!

Advertisement

অভয় তখন নিজেদের ঘুপচি ঘরে রেডিয়োর পাশে বসে উসখুস করছে। কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না যে! কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের লাগানো যন্ত্রের সিগন্যালই কাজ করছে না ঠিকঠাক।

২৯ জুলাই রেডিয়োয় ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশের কৃতী পড়ুয়াদের নাম করে প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই কলকাতার অভয়ের কথা বলেছিলেন তিনি। ফুটপাতের আলোয় পড়ে চলতি বছরের আইসিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। কথা ছিল, অনুষ্ঠানে যে কৃতীদের নাম বলা হবে, তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা অভয়দের বাড়িতে ঘুরে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক বার। নাম, প্রাপ্ত নম্বর, আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি অনুষ্ঠানের দিন অভয়দের ঘরে স্যাটেলাইট যন্ত্রও বসানো হয়েছিল কেন্দ্রের তরফে। তবে মোক্ষম সময়ে তা কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়নি শহরের এই কৃতী পুত্রের। হতাশ অভয় বলে, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোদীজি। আমারও কথা বলার ইচ্ছে ছিল। বলতাম, কী সমস্যার মধ্যে বাবা আমাকে পড়াচ্ছেন। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পরেই আইআইটি প্রবেশিকায় বসব। প্রধানমন্ত্রীকে সে কথাও জানাতে চেয়েছিলাম।’’ খানিক থেমে তার আফশোস, ‘‘অন্তত ধন্যবাদটা বলতে পারলে ভাল হত!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: অন্যেরা পারছে, তবু প্লাস্টিক বন্ধে পা ফেলতে কুণ্ঠা বাংলার

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট সংলগ্ন মার্কেট স্ট্রিটে এক কামরার ঘরে বাবা-মা আর ভাই অক্ষয়ের সঙ্গে থাকে অভয়। বাবা রামবাবু ম্যাগাজিন আর খবরের কাগজ বিক্রি করেন পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে। অভয়ের মা, রিঙ্কিদেবী গৃহবধূ। প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া সেরে বাবার দোকানেই পড়তে যেত অভয়। পড়া চলত রাত ১০টা পর্যন্ত। এর পরে বাড়ি ফিরে রাতের খাবার খেয়ে ফের শুরু হত পড়াশোনা। জানাল, আগে বাড়িতে তাদের সঙ্গেই থাকতেন অভয়ের ঠাকুরদা-ঠাকুরমা। এখন উত্তরপ্রদেশে দেশের বাড়িতে চলে গিয়েছেন তাঁরা। এক কামরার বাড়িতে এত জন লোক থাকায় সন্ধ্যায় পড়াশোনায় অসুবিধে হত। তাই বাধ্য হয়েই বাবার দোকানের আলোয় বই খুলে বসতে হত এই মেধাবী ছাত্রকে। অভয় বলে চলে, ‘‘পড়ার মাঝেই লোকজন এসে ম্যাগাজিন দরদাম করতেন। তাতে একটু সমস্যা হত ঠিকই, তবে বাড়িতে পড়ার থেকে তা অনেক ভাল। তা ছাড়া, রাস্তার আলোয় পড়ার কাজ মিটে যাওয়ায় বাড়িতে মাকে আলো জ্বালাতে হত না সন্ধ্যায়।’’

অভয়ের বাবা বলছেন, ‘‘ছেলে আমার বুঝদার। কখনও কিছু চেয়ে বায়না করেনি। সমস্যা বুঝে সন্ধ্যায় দোকানেই পড়তে চলে আসত।’’ তিনি জানান, নিজের স্বল্প আয়েই কোনওমতে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড়ের চেষ্টা করেছেন। তারই সঙ্গে অভয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের কয়েকটি রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষও।

আরও পড়ুন: হিন্দু হস্টেল নিয়ে অবস্থান অব্যাহত

নিজের স্কুল সেন্ট জেমসেই একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করেছে অভয়। তার প্রিয় বিষয়, অঙ্ক আর রসায়ন। রিঙ্কিদেবী বলেন, ‘‘ছেলে আমার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। ভয় হয়, পড়াতে পাড়ব তো!’’ তাঁরও আক্ষেপ, মোদীজির সঙ্গে কথা বলা গেলে সমস্যার কথাটা বলা যেত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখনও নিজের কথা পৌঁছনোর আশায় রয়েছে অভয়। ওই কিশোর বলে, ‘‘কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা আমার কথা রেকর্ড করে নিয়ে গিয়েছেন। মোদীজিকে শোনানো হবে বলেছেন। যদি তাঁর ভাল লাগে, ফের মন কি বাতে উঠবে আমার নাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন