পূর্ব কলকাতা জলাভূমি। ফাইল চিত্র
বেলেঘাটা খালের জল নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়েছিল কয়েক জন স্কুলপড়ুয়া। সেই জল হাতে লাগতেই শুরু হল চুলকানি। লালচে দাগও ফুটে উঠল চামড়ায়!
পূর্ব কলকাতার জলাভূমিতে গিয়ে জলের দূষণ যত না চোখে পড়েছে, তার চেয়েও স্কুলপডুয়াদের বেশি নজরে এসেছে বেআইনি ভাবে দখলদারি ও জলা বোজানোর ঘটনা। এই জলা বোজানো নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধও তারা।
গঙ্গা তো বটেই, শহরের খাল-বিল, জলাশয়ের অবনতি নিয়ে বহু দিন ধরেই সরব পরিবেশকর্মীরা। সেই পরিস্থিতিকেই সম্প্রতি মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের একটি অনুষ্ঠানে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরল বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। দূষণের উৎস এবং প্রশাসনের খামতি নিয়েও অকপট তারা।
পৃথিবী জুড়েই জলসঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি নীতি আয়োগের রিপোর্টেও ভারতের বিভিন্ন শহরে জলসঙ্কটের কথা উঠে এসেছে। দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, খাস কলকাতার একাংশেও ভূগর্ভের জলস্তর ক্রমশ নামছে, বাড়ছে আর্সেনিকের বিপদ। পাল্লা দিয়ে অবনতি হচ্ছে নদী, নালা, খাল, বিলেরও। পরিবেশবিদদের মতে, জলাভূমি না বাঁচালে জলজ জীব ও গাছপালা তো নির্মূল হবেই, শেষ হয়ে যাবে মানুষও।
কিন্তু সেই সংরক্ষণের কাজ কেমন হচ্ছে?
ইউনিয়ন চ্যাপেল স্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়া শেখ ইয়াসিন বলছে, বেলেঘাটা থেকে চিংড়িঘাটা, এই এলাকার বাসিন্দারা যাবতীয় বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলেন। তার মধ্যে আছে প্রচুর প্লাস্টিক এবং থার্মোকলও। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ইয়াসিন ও তার বন্ধুরা জেনেছে, ওই এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। রাস্তায় ফেললে চলাফেরায় অসুবিধা হবে, তাই খালে ফেলা হয় নোংরা। ইয়াসিনের কথায়, ‘‘খালের চেহারা ফেরানোর আগে বর্জ্য ফেলা আটকানো প্রয়োজন।’’ এ ব্যাপারে পুরকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছে তারা।
পূর্ব কলকাতার জলা বোজানো নিয়ে আবেশ ভট্টাচার্য নামে গার্ডেন হাই স্কুলের এক পড়ুয়ার বক্তব্য, ‘‘ওর উপর দিয়ে তো উড়ালপুল তৈরির কথা হয়েছিল। কিন্তু মামলার জেরে তা আপাতত আটকানো গিয়েছে। প্রশাসন যদি জলা না বাঁচায়, তা হলে আমাদেরই এগিয়ে যেতে হবে।’’ আবেশ ও তার বন্ধুরা বলছে, ওই জলা শুধু কলকাতার নিকাশি শোধন করে না, সেখানে মাছ চাষ অনেকের জীবিকাও। কিন্তু এই ভে়ড়ির গুরুত্ব স্থানীয় বাসিন্দারাই পুরোপুরি বোঝেন না। জলা বাঁচাতে গেলে ওঁদের সচেতন করতে হবে। ওই বাসিন্দাদের জীবনযাপনেরও উন্নতি দরকার।
একই ভাবে গঙ্গা, ঢাকুরিয়া লেকের পরিস্থিতি নিয়েও নানা তথ্য তুলে ধরেছে শ্রী শ্রী অ্যাকাডেমি এবং কারমেল হাইস্কুলের পড়ুয়ারা। কলকাতার বাইরে খড়্গপুর, রাঁচি, দুর্গাপুরের স্কুলও ছিল। তারা কেউ ব্রহ্মপুত্র, কেউ বরাকর, কেউ বা কংসাবতীর ছবি তুলে ধরেছে। ছিল মার্কিন স্কুলপড়ুয়ারাও। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, পূর্ব ভারত এবং কেনটাকির জলের মান নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। পূর্ব ভারতের ১০টি স্কুল এবং কেনটাকির ১২টি স্কুল তাতে অংশগ্রহণ করে। যুগ্ম ভাবে সেরা হয়েছে দুর্গাপুরের ডিএভি মডেল এবং কেনটাকির বেলফ্রি হাইস্কুল। পড়ুয়াদের এমন কাজ নিয়ে রীতিমতো উৎসাহিত মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের অধিকর্তা জেমি ড্রাগন। তিনি বলছেন, ‘‘জল সংরক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নতিতে এই পড়ুয়ারাই ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।’’ পড়ুয়াদের এই মনোভাবকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষকর্তাও। তিনি বলছেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম যদি সচেতন হয়, তা হলে দূষণ ঠেকানো অনেক সহজ হবে।’’