নিম্নমানের ওষুধ কিছুটা কম বাংলায়

মানুষ যাতে ভাল মানের ওষুধ পান এবং বাজারে যাতে কোনও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য— উভয় সরকারেরই।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০০:৩৯
Share:

মানুষ যাতে ভাল মানের ওষুধ পান এবং বাজারে যাতে কোনও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য— উভয় সরকারেরই। অথচ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সমীক্ষাই জানাচ্ছে, সে দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করা হয়নি। কারণ গোটা দেশে সরকারি ক্ষেত্র থেকে যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে তার ১০ শতাংশই নিম্নমানের! অর্থাৎ সেই ওষুধ খেয়ে রোগ না-ও সারতে পারে! মৃত্যুমুখে পৌঁছে যাওয়া রোগী ওষুধের গুণে ফিরে না-ও আসতে পারেন।

Advertisement

সরকারি স্তরের ওষুধ বলতে এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসি থেকে পাওয়া ওষুধ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল স্টোর, কেন্দ্র সরকারের মেডিক্যাল স্টোর ও ইএসআই ডিসপেন্সারিগুলির ওষুধকে বোঝানো হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সমীক্ষা চালিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রক ওই তথ্য প্রকাশ করেছে। রাজ্যওয়াড়ি ফলাফলে দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ওষুধের মান অন্য বড় রাজ্যগুলির তুলনায় অনেকটা বজায় রাখতে পেরেছে। কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, এ রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ৮% ওষুধ নিম্নমানের। গুজরাতে সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় ১০.৩০% ওষুধ নিম্নমানের।

উৎপাদন পদ্ধতি ও গুণমান খতিয়ে দেখে কোনও ওষুধকে বাজারে আসার ছাড়পত্র দেয় ড্রাগ কন্ট্রোল। তার পরেও যদি ১০ শতাংশের বেশি ওষুধ নিম্নমানের হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে ড্রাগ কন্ট্রোলের নজরদারিতেই ফাঁক রয়েছে। তা ছাড়া সরকারি ওষুধের উপরে মূলত নির্ভর করে থাকেন দরিদ্র মানুষ। সরকারি ওষুধের মান খারাপ হলে সবচেয়ে বেশি সঙ্কট তাঁদের। স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়াও এ নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে।

Advertisement

কেন সরকারি জায়গার ওষুধের এই হাল? কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মে দরপত্র ডেকে ওষুধ কেনা হয়। সবচেয়ে কম দাম যে দেবে, তারাই নির্বাচিত হয়। আর এই সর্বনিম্ন দাম দিতে গিয়ে অনেকে ওষুধের মান ঠিক রাখতে পারে না। তাই দরপত্রের নিয়মের বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’’

প্রশ্ন, নির্দিষ্ট মান বজায় রাখতে না পারলে তো সেই ওষুধের বাজারেই আসার কথা নয়। দরপত্র তো পরের কথা। তাকে লাইসেন্স দিচ্ছে কে? কেন্দ্রের ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র শুধু বাইরে থেকে আমদানি হওয়া ওষুধের লাইসেন্সের ব্যাপারটা দেখে। দেশের ভিতরে যে সংস্থা যে রাজ্যে থাকে, তাকে সেই রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলই লাইসেন্স দেয়। দেখা যাচ্ছে অনেক রাজ্যই দায়িত্বে ফাঁকি দিচ্ছে।’’

পশ্চিমবঙ্গের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষের কথায় আবার, ‘‘আমাদের ড্রাগ ইনস্পেক্টরের ১৫০টি পদে লোক রয়েছেন মাত্র ৩৯ জন। এই লোকবল নিয়ে অন্য অনেক রাজ্যের থেকে ভাল নজরদারি চালিয়েছি। ইনস্পেক্টর নিয়োগ হলে ফল ভাল হবে।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওষুধ সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সচিবের মন্তব্য, ‘‘কেউ নিম্নমানের ওষুধ দিলে তাকে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করছি। সে সময়ে ভারতের কোথাও তারা দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। এই কড়াকড়িতে ভাল ফল মিলেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন