ছকভাঙা নারীর বিভায় জীবনেরই উদ্‌যাপন

একটি সন্ধ্যা। এবং বেড়া ভাঙার কয়েকটি গল্প। মঙ্গলবার ‘দ্য টেলিগ্রাফ শি অ্যাওয়ার্ডস’ আসরের নির্যাস বলতে এটুকুই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:২৫
Share:

কুর্নিশ: ‘দ্য টেলিগ্রাফ শি অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিজয়িনীরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

একটি সন্ধ্যা। এবং বেড়া ভাঙার কয়েকটি গল্প। মঙ্গলবার ‘দ্য টেলিগ্রাফ শি অ্যাওয়ার্ডস’ আসরের নির্যাস বলতে এটুকুই!

Advertisement

কোনও দেবীর আবাহনে নারীশক্তির চিরকেলে গল্পের অবতারণায় অতিনাটকীয় চিত্রনাট্য লেখা ছিল না। কিন্তু সন্ধ্যার এক-একটি চরিত্র মঞ্চে এসে দাঁড়াতে তাঁদের নিজস্ব বিভাই পর পর বিচ্ছুরিত হল। অনুষ্ঠানে মান্যগণ্য অতিথিদের গ্ল্যামারের ঝলকানি কম ছিল না। কিন্তু, সব ছাপিয়ে নানা ক্ষেত্রে যশস্বী নারীদের ভিতরের আলোই আপন কথা বলে গেল।

অশীতিপর সাহিত্যিক-অধ্যাপিকা নবনীতা দেবসেন বললেন, ‘‘আমার মেয়েদের বড় হওয়ার সময়ে একটাই কথা বলেছি, যা করবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করো! এবং খেয়াল রাখো, যা করছ তা অন্যের চাপিয়ে দেওয়া কিছু নয়, নিজের ভাল লাগার জন্যই করছ।’’ তৃতীয় বছরে পা রাখা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার কৃতী নারীদের বরণ-অনুষ্ঠানটি আদতে এই নিজের শর্তে বাঁচা অনন্যাদেরই কুর্নিশ জানাল। প্রবীণ শিক্ষাবিদ তথা শহরের একাধিক স্কুলের অধ্যক্ষা হিল্ডা পিকক থেকে নাট্যব্যক্তিত্ব অনুভা ফতেহপুরিয়া বা তরুণতর সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী, অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক— সকলেই এই বিশিষ্টদের দলে ঠাঁই করে নিলেন।

Advertisement

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন-শিল্পী কিরণ উত্তম ঘোষ থেকে বাঙালির পরিচিত গয়না প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার অনন্যা চৌধুরীরা তাঁদের কাজের মাপকাঠিতেই সর্বজনীন। নৃত্যশিল্পী তনুশ্রীশঙ্কর বলছিলেন, কী ভাবে প্রয়াত স্বামী আনন্দশঙ্করের অনবরত তাড়নাই তাঁকে সৃষ্টিশীলতার জীবন বেছে নিতে বাধ্য করেছিল। ঘটনাচক্রে, এ দিনই ছিল আনন্দের ২০তম মৃত্যুবর্ষ। এই সন্ধ্যা তনুশ্রীর জন্য এক বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার কথাও বলল। মেয়েদের এক দিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারী ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ ঝুলন গোস্বামীর দ্যুতিতেও উজ্জ্বল মঙ্গলবারের সন্ধ্যা। ঝুলনও নিজের মেজাজে সবাইকে নিজের কাজ উপভোগ করতে বললেন।

সমাজকল্যাণব্রতী মিনু বুধিয়ার গল্প বলে শুরু হয়েছিল এ দিনের পুরস্কার বিতরণ পর্ব। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিশুর মা হওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। এখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নিজের সংস্থাকে আপন সন্তানের মতোই লালন করছেন মিনু। সার্বিক সাফল্যের নিরিখে বরণীয় শর্মিলা ঠাকুরকে সবার শেষে ডাকলেন সঞ্চালক স্বস্তিকা

মুখোপাধ্যায়। কৈশোরে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’-এ অভিনয়ের বিষয়টা কিন্তু ভাল ভাবে নেননি শর্মিলার স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল ছাড়তে হয় সত্যজিতের নায়িকাকে। শর্মিলার গল্প বলে গেল, সত্যিই লড়াইয়ের কতটা রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে এসেছেন আজকের মেয়েরা।

সন্ধ্যার বিশেষ প্রাপ্তি, কর্নাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত-ঘরানায় রসিকা শেখরের বাঁশির আবাহন। বংশীধারী পুরুষের বদলে জনৈক নারীর ডাকাতিয়া বাঁশিতেই আকুল সভাঘর। সন্ধ্যার এই পরিসর আগাগোড়াই ছক-ভাঙা নারী তথা জীবনের উদ্‌যাপন হয়ে থাকল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন