ক্ষমা চাক ছাত্রেরা, গোড়াতেই কড়া সুগত

‘সৌজন্যের’ খাতিরে ফুল নিলেন ঠিকই। তবে প্রণাম নিলেন না। বরং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্রনেতাদের তিনি পরামর্শ দিলেন, নিগৃহীত শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে।

Advertisement

সুপ্রিয়়় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:৩৪
Share:

ফুলের তোড়া হাতে নিয়েই ছাত্রদের প্রণাম ফিরিয়ে দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত। একেবারে ডান দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতা সৌরভ অধিকারী। বুধবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

‘সৌজন্যের’ খাতিরে ফুল নিলেন ঠিকই। তবে প্রণাম নিলেন না।

Advertisement

বরং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-কাণ্ডে অভিযুক্ত ছাত্রনেতাদের তিনি পরামর্শ দিলেন, নিগৃহীত শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে। একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত বুধবার ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে ‘কড়া বার্তা’য় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বহিরাগতেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে পুলিশকে খবর দেওয়া হবে।

এ দিন সুগতবাবু তাঁর নতুন দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। এর পরে দফায় দফায় কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী এবং আধিকারিকদের সঙ্গে। শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত যৌথ মঞ্চ থেকে শুরু করে ওয়েবকুপা— সব পক্ষের সঙ্গে দেখা করেন। দুপুর দু’টো নাগাদ আসেন শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি’র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ অধিকারী।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ১ জুলাই সেনেট হলের বাইরে শিক্ষক নিগ্রহ-কাণ্ডে মূল অভিযোগের আঙুল সৌরভেরই দিকে। সৌরভের নেতৃত্বে একটি দল উপাচার্যকে ফুলের তোড়া দেন। সুগতবাবু ফুল নিলেও সৌরভ তাঁকে প্রণাম করতে গেলে প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষক নিগ্রহে যার নাম এ ভাবে জড়িয়েছে, তাঁর কাছ থেকে সুগতবাবু তোড়াই বা নিলেন কোন যুক্তিতে?

অস্থায়ী উপাচার্য অবশ্য ব্যাপারটাকে নিছক সৌজন্য হিসেবে দেখছেন। ‘‘আমার প্রথম দিন। তাই সৌজন্যের খাতিরে ফুলের তোড়া নিয়েছি।’’— যুক্তি দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ১ জুলাইয়ের ওই ঘটনা তিনি কোনও ভাবেই সমর্থন করেন না। সুগতবাবুর কথায়, ‘‘অবাঞ্ছিত ঘটনা। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের পিতৃ-মাতৃসম। ওই ছাত্রদের উচিত প্রায়শ্চিত্ত করা। শিক্ষকদের কাছে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’’

অস্থায়ী উপাচার্যের পরামর্শ কি ওঁরা মানবেন?

সৌরভ অধিকারী বলেন, ‘‘আমাদের কোনও ব্যবহারে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা মানসিক ভাবে আঘাত পেয়ে থাকলে আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে ক্ষমা চাইতে রাজি। পরিস্থিতি ঠিক হলে আমরা ওঁদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’ টিএমসিপি’র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘ছাত্র ও শিক্ষক— উভয়েরই উচিত পঠনপাঠনের স্বার্থে সমস্ত সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া।’’ শুনে শিক্ষকেরা কী বলছেন?

ছাত্রনেতাকে অস্থায়ী উপাচার্যের ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ, এবং সে প্রসঙ্গে ছাত্রনেতার মন্তব্য সম্পর্কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘কুটা’ এ দিন মুখ খুলতে চায়নি। ‘‘আমরা আগে অস্থায়ী উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। তার পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।’’— বলেছেন এক শিক্ষক নেতা। কুটা’র দাবি, ১ জুলাই বহিরাগতেরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছিল। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকেও অহরহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অস্থায়ী উপাচার্য ‘বহিরাগত সমস্যা’র সুরাহা কী ভাবে করবেন?

এ বিষয়ে সুগতবাবুর অবস্থান ও মনোভাব যৎপরোনস্তি ‘কঠোর।’ ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেউ ঢুকতে পারেন। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু কোনও ভাবে কোনও বহিরাগত ভিতরে ঢুকে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হবে।’’— এ দিন সাফ বলেছেন তিনি। সুগতবাবুর প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘‘কোনও মতেই এ সব বরদাস্ত করা হবে না।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, অস্থায়ী উপাচার্য প্রথম দিনেই ছাত্র সংসদকে যে রকম ‘কড়া বার্তা’ দিলেন, তা দেখে শিক্ষকদের অনেকে খুশি। শিক্ষক ও কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, ছাত্র সংসদের দাপাদাপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ দিকে যাচ্ছে। অবিলম্বে এতে রাশ টানা জরুরি। এমতাবস্থায় সুগতবাবুর কথাবার্তা নিঃসন্দেহে ভরসাদায়ী।

ভরসা কতটা বাস্তব হয়, আপাতত তা-ই দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছেন ওঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন