শপিং নয়, মলের ভিড় এটিএমে

ছুটির দিনে দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলের দোকানগুলি যেন মাছি তাড়াচ্ছে। রেস্তোরাঁ, সিনেমা হলও ফাঁকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

দক্ষিণ কলকাতার এক মলের এটিএমে দীর্ঘ লাইন। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ছুটির দিনে দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলের দোকানগুলি যেন মাছি তাড়াচ্ছে। রেস্তোরাঁ, সিনেমা হলও ফাঁকা। ভিড় পুরোটাই টেনে নিয়েছে শপিং মলে থাকা এটিএম কাউন্টার! দোকান কিংবা পার্কিংয়ের ডিউটি ছেড়ে নিরাপত্তারক্ষীরা সেই লাইন সামলাতেই ব্যস্ত।

Advertisement

রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ এলাকায় কোথাও এটিএম কাউন্টারের শাটার নামানো, কোথাও এটিএম খোলা থাকলেও টাকা নেই। রবিবার তাই টাকার খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে লোকজন এসে ভিড় করেছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে। সেখানেও এক-একটি এটিএমের সামনে লম্বা লাইন।

শপিং মলের দোতলায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনুত্তমা মুখোপাধ্যায়। জানালেন, নগদ টাকার খুব দরকার। কিন্তু কোনও এটিএম খোলা পাচ্ছিলেন না। আজ, সোমবার আবার ব্যাঙ্ক বন্ধ। ‘‘শেষমেশ এক বন্ধুর কাছ থেকে জানলাম, এই শপিং মলের এটিএমে টাকা বেরোচ্ছে,’’ বলেন অনুত্তমা। ওই মলের তিনতলায় আর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনেও লম্বা লাইনে দাঁড়ানো এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘বাইরে লাইন দিলে ধুলো, রোদ খেতে হতো। শপিং মলের ভিতরে অন্তত সেই কষ্ট নেই।’’

Advertisement

নোট বদলাতে ব্যাঙ্কে নাকাল হচ্ছেন মানুষজন। তার উপরে এটিএম কাউন্টারে টাকা অমিল হওয়ায় লোকজন আরও নাকাল হচ্ছেন। তবে অনেকেই বলছেন, শুক্র এবং শনিবারের তুলনায় এ দিন এটিএমের হাল কিছুটা ভাল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এটিএম সে ভাবে পরিষেবা না দিতে পারলেও বহু বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা তুলতে পেরেছেন মানুষজন। এ দিন দুপুরে চাঁদনি চকের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অফিসার বলছিলেন, ‘‘টাকা ভরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খালি হয়ে যাচ্ছে। করব কী?’’

জরুরি কাজে এ দিন ধর্মতলায় অফিস যেতে হয়েছিল মহেন্দ্র চৌধুরীকে। অফিস ঢোকার আগে টাকার খোঁজে এক বার এটিএমে ঢুঁ মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটিএমে টাকা না থাকায় বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। অফিস ঢুকেই ফের শোনেন, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন তাঁর সহকর্মী। ব্যাগ টেবিলে রেখেই পড়িমড়ি মহেন্দ্র ছুটলেন সেখানে।

ছুটির দিনে হরিদেবপুরের অনেকেই টাকা তুলতে পাড়ার এটিএমে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই এলাকার কোনও এটিএমেরই এ দিন ঝাঁপ ওঠেনি! এলাকার বাসিন্দা চৈতি বসাক বলেন, ‘‘ছেলেকে টালিগঞ্জের মালঞ্চর কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। সেখানেও এটিএম বন্ধ।’’ যাদবপুর, লেক এলাকাতেও এটিএম পরিষেবার একই দশা। সকাল থেকে এটিএম কাউন্টারে বিশাল লাইন পড়েছিল একবালপুর-সহ বন্দর এলাকাতেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে শুধু পুলিশই মোতায়েন করা হয়নি, থানার পক্ষ থেকে বিলোনো হয়েছে জলও। বিভিন্ন এটিএমের সামনে মোট ২২০টি জলের গাড়ি পাঠায় কলকাতা পুরসভা। এ দিন কলকাতার এটিএম পরিস্থিতি দেখতে পথে নেমেছিলেন খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও।

সাতসকালেই সল্টলেক পিএনবি মোড়ের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে শ’দুয়েক গ্রাহকের লাইন। সেই লাইনে দাঁড়ানো উল্টোডাঙার বাসিন্দা সৌমেন দাসের মন্তব্য, ‘‘নিজের এলাকায় সব এটিএমে ভিড়। তাই এখানে এসেছিলাম।’’ সল্টলেকের বেশির ভাগ এটিএমেই এ দিন বেলা এগারোটার আগে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফলে টাকা না পেয়ে অনেককেই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার টাকার আসায় এটিএমের সামনেই ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন। সুকান্তনগরের বাসিন্দা চাকুরিজীবী তমাল সরকার বলেন, ‘‘দুপুরে ফের টাকা আসবে এটিএমে। টাকা তুলে তবেই বাড়ি ফিরব। তাই দাঁড়িয়ে আছি।’’ অনেকে এটিএমের খোঁজে গাড়ি নিয়েও চক্কর কেটেছেন। এটিএম দেখতে পেলেই গাড়ি থামিয়ে টাকার খোঁজ করেছেন। লেকটাউন, বাগুইআটি, নিউ টাউনেও এটিএম ভোগান্তির ছবিটা কমবেশি একই।

দমদমের এটিএমগুলিরও একই হাল। সকাল থেকেই শুধু ‘নেই, নেই’ রব! এরই মাঝে খবর মিলেছিল একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা ঢুকেছে। পলক ফেলতে না-ফেলতেই কাউন্টারের সামনে পঞ্চাশ জনের লাইন পড়ে গেল! একই অবস্থা আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেও। সন্ধ্যার পরেও ফের কিছু এটিএমে টাকা ভরেছে ব্যাঙ্কগুলি। তার পরেই ফের লাইন পড়েছে কাউন্টারে।

দু’দিন ফেল করার পরে টেনেটুনে পাশ করেছে এটিএম। কিন্তু লোকে বলছে, আজ, সোমবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলে এটিএম কাউন্টারে ভিড় আরও বাড়বে।

সেই পরীক্ষা কি পাশ করতে পারবে এটিএম? চিন্তায় শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন