কমল কই? ক্যাবের ভাড়া আরও ‘ভারী’

সুমিতবাবু পরে বলেন, ‘‘মূল ভাড়ার হিসেবটা কী এবং তার উপরে কতটা সার্জ প্রাইস নেওয়া হল, সেটা কিন্তু জানায়নি ওই ক্যাব সংস্থা।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩২
Share:

কথা তো ছিল। কিন্তু সেই কথা কেউ রাখল কি?

Advertisement

কথা ছিল, আকাশছোঁয়া ‘সার্জ প্রাইস’ উঠে গিয়ে শুক্রবার থেকেই অ্যাপ-ক্যাব নতুন হারে ভাড়া নেবে। কিন্তু প্রথম দিনই যাত্রীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথা বলছে। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, ভাড়া তো কমেইনি, উল্টে বেড়ে গিয়েছে! সরকারের ঠিক করে দেওয়া বিধিনিষেধ আদৌ মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন যাত্রীদের একটি ব়ড় অংশ।

এ দিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ বেহালার বক্সীবাগান থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ-ক্যাব নেন সুমিত কুমার। দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ বিমানবন্দরের দু’নম্বর গেটে নামার সময়ে তাঁকে ভাড়া হিসেবে গুনে দিতে হয় ৭৯২ টাকা! ফিরতি পথে একই দূরত্বের জন্য ওই সংস্থার অ্যাপ ঘেঁটে তিনি দেখেন, ভাড়া দেখানো হচ্ছে ৪৬০ টাকা! সুমিতবাবু পরে বলেন, ‘‘মূল ভাড়ার হিসেবটা কী এবং তার উপরে কতটা সার্জ প্রাইস নেওয়া হল, সেটা কিন্তু জানায়নি ওই ক্যাব সংস্থা।’’

Advertisement

দুপুর ১২টার কিছু পরে বাগুইআটি থেকে রুবি মোড় যেতে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেন জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দূরত্বের জন্য তাঁকে দিতে হয় ৪৮২ টাকা! তাঁর অভিযোগ, ওই ক্যাব সংস্থা গাড়ির অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে বলে জানালেও কতটা সার্জ প্রাইস নেওয়া হল, তা জানায়নি। জয়ন্তবাবুর দাবি, ওই একই দূরত্বের জন্য আগে ২২০-২৩০ টাকা দিতে হত তাঁকে।

সকালের দিকে বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ধর্মতলা মোড়ের কাছে যেতে অ্যাপ-ক্যাবের খোঁজ করতে গিয়ে আরও এক যাত্রী দেখেন, আট কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ২৩৬ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে! এ ক্ষেত্রেও সার্জ প্রাইসের কোনও উল্লেখ ছিল না। ওই যাত্রীর অভিযোগ, সার্জ প্রাইসের কথা উল্লেখ না করে ঘুরপথে বেশি ভাড়া আদায় করছে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি।

সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, লাক্সারি ট্যাক্সির কিলোমিটার-পিছু ভাড়া ১৮ টাকা ৭৫ পয়সার সঙ্গে ওয়েটিং চার্জ, বুকিং চার্জ, সার্ভিস চার্জ প্রভৃতি যোগ হয়ে কিলোমিটার-পিছু চূড়ান্ত ভাড়া ঠিক হওয়ার কথা। দু’টি ক্যাব সংস্থার ক্ষেত্রেই মূল ভাড়া বা বেস প্রাইস হওয়ার কথা ৪৫ টাকা। সমস্ত খরচ যোগ করে কিলোমিটার-পিছু ভাড়ার হার ২২-২৫ টাকার মধ্যে আসা উচিত বলে মত পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের।

‘পশ্চিমবঙ্গ অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ড’-এর আহ্বায়ক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি সরকারের ঠিক করে দেওয়া ভাড়ার হার মানছে না। তার বদলে আগের মতোই চাহিদা এবং জোগানের কথা বলে লুকোচুরি খেলছে। ফলে যাত্রীদের আগের মতোই বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে।” এ নিয়ে আগামী ২৩ জুলাই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে জানান তিনি।

একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার মুখপাত্র দাবি করেছেন, ‘‘পরিবহণ দফতরকে আমরা আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়ার হার আমরা সর্বতো ভাবে মেনে চলছি।’’ অন্য ক্যাব সংস্থাটি কোনও মন্তব্য করেনি। একটি ক্যাব সংস্থা রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়াতে সরকারি সাহায্য চেয়েছে। এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “কোথায় কী হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তা ক্যাব সংস্থাগুলিকে জানাতে বলা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ মানা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন